অনলাইন ডেস্ক :
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত ৫২ জনের পরিচয় জানতে এক মাস সময় লাগতে পারে। এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের ডিএনএ পরীক্ষক মোহাম্মদ মাসুদ রাব্বী সবুজ। শনিবার (১০ জুলাই) সকাল ১১টায় তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ২৬ টি মরদেহের বিপরীতে ৩৫ জন দাবিদারের নমুনা সংগ্রহ করেছি। এখনও সব দাবিদার আসেননি। তারা এলে পর্যায়ক্রমে তাদের নমুনা নেয়া হবে। একইসঙ্গে যাদের নমুনা নেয়া হয়েছে সেগুলো ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

সব মিলিয়ে আশা করা যায় এক মাস সময়ের মধ্যে পরিচয়গুলো আমরা শনাক্ত করতে পারব। নিহতদের পরিচয় রূপগঞ্জ থানা ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জানা যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিহতদের পরিচয় রূপগঞ্জ থানা ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জানতে পারবেন স্বজনরা। তারা এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট। ওনাদের মাধ্যমে পরিবারগুলো তথ্য পেতে পারে। মোহাম্মদ মাসুদ রাব্বী আরও বলেন, আমরা রেফারেন্স নমুনা সংগ্রহ করছি। মৃত ব্যক্তির দাবিদাররা এসেছেন।

তাদের কাছ থেকে রক্ত নিচ্ছি। ডেডবডির দাঁত ও হাড় সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ধরনের নমুনাগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব। এদিকে নিহত শ্রমিকের লাশ দ্রুত দাফনে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ। গতকাল শনিবার তিনি বলেন, জায়গার সঙ্কুলান না হওয়ায় ইতোমধ্যে ১৫টি লাশ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। কয়েকটি লাশ রাখা হচ্ছে ঢামেক হাসপাতালের মর্গে।

লাশগুলো আপাতত মর্গে রাখা হলেও দ্রুত দাফনের ব্যবস্থা না করা হলে পচে-গলে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণ ঘটাবে। ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ জানান, গত শুক্রবার রাতে তার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল ৪৮টি মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। দু-একটি ছাড়া বাকি লাশগুলো পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। দেখে চেনার কোনো উপায় নেই। তারা ডিএনএর মাধ্যমে নিহতদের পরিচয় খুঁজে বের করতে নমুনা হিসেবে বুকের পাঁজর সংরক্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, লাশগুলো দেখে যেহেতু চেনার কোনো উপায় নেই তাই রানা প্লাজা ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ যেভাবে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছিল তাদের লাশও দ্রুত দাফন করে ফেলা দরকার। এ ব্যাপারে তারা পুলিশের কাছে প্রস্তাবনা ও পরামর্শ দেবেন। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাশগুলো কখন দাফন করা হবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ভয়াবহভাবে আগুনে পুড়ে লাশগুলো কয়লার মতো হয়ে গেছে। এগুলোতে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াবে। এতগুলো লাশ মর্গের মরচুয়েরিতে রাখার মতো ব্যবস্থা নেই। ঢামেকের মরচুয়েরি কুলারে ইতোমধ্যে ১০টি লাশ রয়েছে। এ কারণে রূপগঞ্জের লাশগুলো ময়নাতদন্ত কক্ষ ও সংলগ্ন আরেকটি ফাঁকা কক্ষে রাখা হয়। গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকা- ঘটে। ঘটনার প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর গত ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ২৬ নারীসহ ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ জনে। ২৯ ঘণ্টা পর ৯ জুলাই রাতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।
আরও পড়ুন
শিগগিরই নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে যাচ্ছে জামায়াত: শিশির মনির
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত
যেসব কারণে প্রতিদিন ১টি কলা খাবেন