October 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, September 28th, 2022, 10:07 pm

রেলওয়ের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা সংকুচিত হয়ে পড়ছে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ১০টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দিন দিন কমছে শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা। ওসব প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। আর ওসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা সরকারি চাকরিজীবী হয়েও ৩ মাস বেতন পাচ্ছে না। মূলত নতুন বছরের বাজেটে বরাদ্দ না থাকায় শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছে না। এমনকি রেলের নতুন জনবল কাঠামোয় বিদ্যালয়গুলোকে অনুদান খাতে স্থানান্তর করা হয়েছে। অথচ রেলওয়ে বিগত ১৯১৮ সাল থেকে বিদ্যালয় পরিচালনা করছে। ওই বছর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে রেলওয়ে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৪ সালে পাকশীতেই হয় রেলওয়ে সরকারি চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ। তারপর ১৯৭৩ সালের মধ্যে আরও আটটি রেলওয়ে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সেগুলো হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ময়মনসিংহের রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সল্টগোলা রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকায় শাহজাহানপুর রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পাবনায় রেলওয়ে সরকারি নাজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, লালমনিরহাট রেলওয়ে সরকারি চিলড্রেন পার্ক উচ্চ বিদ্যালয় ও নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাধারণের মতো রেলওয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমও দেখভাল করে। কিন্তু রেলওয়ের টাকায় বিদ্যালয় চলে। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয় রেলওয়ে। আর দশটি সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীর সমানই তারা বেতন-ভাতা পায়। তবে ওই টাকা রেলওয়ে দেয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রেলওয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা মহাপরিচালকের অধীন সংস্থাপন শাখার জনবল ছিল। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর রেলের নতুন জনবল কাঠামোতে তার বদল আনা হয়েছে। বিদ্যালয় ও জনবল অনুদান শাখায় স্থানান্তর করা হয়েছে। ফলে সরকারি চাকরিজীবী হয়েও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন। যদিও নতুন জনবল কাঠামো নিয়ে খোদ রেলেই বিতর্ক চলছে।
সূত্র জানায়, রেলওয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি চাকরিজীবী। বহু বছর ধরেই তারা আইবাসের মাধ্যমে বেতন পাচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না। এমনকি ঈদের উৎসব ভাতা পর্যন্ত পায়নি। এককালে রেলের বিদ্যালয়গুলোতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছিল। কিন্তু রেলওয়ে ধীরে ধীরে শিক্ষা কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে লালমনিরহাট বিদ্যালয়ে ২০১৯ সালে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ২৭৫ জন রয়েছে। ২০২১ সালে বিদ্যালয়ের ৬৮ জন এসএসসি পরীক্ষা দিলেও এবার তা ৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আর বিদ্যালয়ের জনবল কাঠামোয় ১৯ শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও মাত্র ৭ জন শিক্ষক রয়েছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের অবস্থা আরো করুণ। সেখানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ। আর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪৭৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক আছে ৫ জন। ২০২১ সালে এসএসসিতে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৯২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৯ জন পাস করে। এবার পরীক্ষার্থী মাত্র ৭১ জন। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ময়মনসিংহ রেলওয়ে বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ঢাকা ও সল্টগোলার রেলওয়ে বিদ্যালয়ে রয়েছে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। তবে জনবল কাঠামোয় ওখানে ২৮ শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছে অর্ধেক। সারাদেশে ১০টি বিদ্যালয়ে শিক্ষক ১১২ ও কর্মচারী আছেন মাত্র ৪১ জন।
সূত্র আরো জানায়, দেশের অন্যান্য সরকারি স্কুলে ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণি কক্ষ থাকরেও রেল টাকা দিতে না পারায় রেলের স্কুলগুলোতে তার কিছুই নেই। ফলে দিন দিন খারাপ হচ্ছে শিক্ষার মান ও পরিবেশ। কমছে শিক্ষার্থী। রেলের উন্নয়নে ৫ বছরে ৮০ হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও বিদ্যালয়ের দিকে নজর নেই। হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হলেও শিক্ষার্থীরা বসার বেঞ্চ পর্যন্ত পাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষায় বিনিয়োগের চেয়ে প্রকল্প কেনাকাটায় রেলওয়ের আগ্রহ বেশি। আর মনোযোগ না দেয়ায় রেলের মতো বিদ্যালয়গুলোও ডুবছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের পরিচালক (অর্থ) সোহেল আহমদ জানান, রেলের সংস্থাপন শাখা জনবল কাঠামো তৈরি করেছে। বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ইন্টিগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস সিস্টেম প্লাস প্লাস (আইবাস) থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন পান। নতুন জনবল কাঠামো শিক্ষকদের অনুদান খাতে স্থানান্তর করায় বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। অনুদান খাত থেকে তাদের বেতন দিলেও ভবিষ্যতে পেনশন নিয়ে জটিলতা হবে।