কানিজ ফাতেমা, নারী সংহতি, হাতিরপুল, ঢাকা:
আজ ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ সোমবার নারী আন্দোলনের পথিকৃত বেগম রোকেয়ার ১৪৪-তম জন্ম এবং ৯২- তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে নারী সংহতি। নারী মুক্তি ও জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ে রোকেয়ার প্রাসঙ্গিকতা স্মরণ করে সকাল ৮টায় নারী সংহতি ‘সম্পত্তিতে সমানাধিকার, অভিন্ন পারিবারিক আইন এবং সংসদে নারীর ন্যায্য অংশগ্রহণের বন্দোবস্ত চাই’-এ দাবিতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে রোকেয়ার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি শ্যামলী শীল, সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ, সহ-সাধারণ সম্পাদক রেবেকা নীলা, দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক নাসরিন আক্্তার, মহিলা অঙ্গন-এর আহ্বায়ক নাদিরা ইয়াসমিন, জুলাইয়ের গণভ্যুত্থানের সংগঠক নুসরাত হকসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নারী সংহতির সভাপতি শ্যামলী শীল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র-সমাজের জরুরি খাতসমূহে সংস্কার এখন আলোচনায় আসছে। এমন পরিস্থিতিতে সমাজের সব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনে উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনের সংস্কার, সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা, ধর্ষণ-যৌন নিপীড়ন ও নারী বিদ্বেষী তৎপরতা বন্ধসহ সমাজের সকল স্তরে নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।
সমাবেশে বলা হয়, এদেশের নারীরা সম্পত্তিতে-উত্তরাধিকারে, বিবাহ-বিবাহ বিচ্ছেদে এবং সন্তানের অভিভাবকত্বে সমান অধিকারের দাবি জানিয়ে আসছে। সংবিধান নারীদের অধিকারের কথা বলা থাকলেও কার্যক্ষেত্রে পারিবারিক ও সম্পত্তির অধিকার যার যার ধর্মীয় পরিচয় দিয়ে নির্ধারিত হচ্ছে। অবিলম্বে অভিন্ন পারিবারিক আইন বাস্তবায়নের দাবি জানায় নারী সংহতি।
সমাবেশে বলা হয়, দেশের প্রায় অর্ধেক ভোটার নারী, তারপরও স্থানীয় সরকার পদে তাদের প্রতিনিধিত্ব এখনও নগণ্য। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে রাজনৈতিক দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্বের শর্ত থাকলেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোতে তার কার্যকর বাস্তবায়ন নাই। এই বাস্তবতায় জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের এক তৃতীয়াংশে নারী সদস্য নির্বাচন নিশ্চিত করার দাবি জানায় নারী সংহতি। তার আগ পর্যন্ত সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি তোলে এ নারী সংগঠন।
সমাবেশে নারীর কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনে দ্বৈত শ্রমের বোঝা লাঘব এবং চলাফেরার নিরাপত্তা, মা ও বাবার কর্মস্থলে ডে-কেয়ার স্থাপন, ছয় মাস স্ববেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পিতৃত্বকালীন ছুটি, নিরাপদ গণপরিবহন, শহরগুলোতে পর্যাপ্ত গণশৌচাগার স্থাপনের দাবি জানানো হয়।
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত গার্মেন্ট শিল্পের নারী শ্রমিকদের জন্য মানসম্মত জাতীয় মজুরি নির্ধারণ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যকর ও মানসম্মত জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রদানের দাবি জানানো হয় সরকারের প্রতি।
সমাবেশে আরও বলা হয়, ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের জন্য আইন এবং বিচার প্রক্রিয়া পুরুতান্ত্রিক। ফলে পাহাড়ে-সমতলে নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধ করা এবং সহিংসতা বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নারীর উপর যে-কোনো নিপীড়ন-নির্যাতন বিশেষ করে যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে ‘ভিক্টিম ব্লেমিং’ বন্ধ করার দাবি তোলেন তারা। হাইকোর্ট প্রণীত যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা ও অভিযোগ সেলের কার্যকর ও পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।:
আরও পড়ুন
সাংবাদিকদের সাথে রংপুর পুলিশ সুপারের মতবিনিময়
আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় কনস্টেবল মুকুল কারাগারে
শীতে শিশুদের সুস্থ রাখবে যেসব খাবার