ফরিদপুরে একটি হাসপাতালে এক রোগীর পাইলসের পরিবর্তে পিত্তথলির অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ও রোগীর স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে হাসপাতালটিতে ভাঙচুর চালান। এক পর্যায়ে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা পালিয়ে যান। এরপর ফরিদপুর স্বাস্থ্য বিভাগ হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী এলাকার শহীদ সুফি সড়কের সৌদি-বাংলা প্রাইভেট হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই হাসপাতালে জেলার সদরপুর উপজেলার আসলাম হোসেনের স্ত্রী হ্যাপি বেগম (৩৫) নামে এক রোগী পাইলসের অস্ত্রোপচার করাতে আসেন। তবে তার পাইলসের পরিবর্তে পিত্তথলির অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
খবর পেয়ে জেলার স্বেচ্ছাসেবী ছাত্ররা উপস্থিত হলে ওই হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা কৌশলে পালিয়ে যান। এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও রোগীর স্বজনরা হামলা চালিয়ে সৌদি-বাংলা হাসপাতালটির কয়েকটি দরজা-জানালা ভাঙচুর করেন।
ঘটনার পরপরই ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসান, এমওসিএস আল-আমিন সারোয়ার, চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ (ল্যাব) আশিকুজ্জামান ক্লিনিকে ছুটে যান। তারা ঘটনার সত্যতা পেলে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ফরিদপুর এবং বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল, ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।
ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুরে হাসপাতালে পাইলসের সমস্যা নিয়ে গৃহবধূ হ্যাপি বেগম ভর্তি হন। চিকিৎসক ফজলুল হকের তত্ত্বাবধানে ওই রোগীর অস্ত্রোপচার চলছিল। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয় এবং চিকিৎসক নজরুল ইসলাম পিত্তথলির অস্ত্রোপচার করেন।
চিকিৎসক নজরুল ইসলাম ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক।
হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অবহেলা ও গাফিলতির বিষয় তুলে ধরে সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসান বলেন, ডাক্তার রোগীর কাগজপত্র ঠিকমতো দেখেননি। এ কারণে পাইলসের রোগীকে পিত্তথলির অপারেশন করা হয়েছে। (সোমবার) থেকেই হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, আজ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করে তাকে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিভিল সার্জন নিজে উপস্থিত থেকে ভর্তি করান। পাশাপাশি সৌদি-বাংলা হাসপাতালের অন্য রোগীদের ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন।
রোগীর মেয়ে জান্নাতি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে আরেকজন রোগী ভর্তি ছিল, তার পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। কিন্তু তার জায়গায় আমার আম্মুকে অপারেশন করেছে। কোনো কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়া কেন অপারেশন করল—জানতে চান জান্নাতি।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ রাতেই সৌদি-বাংলা হাসপাতালের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে সেখানে অবস্থান নেয়।
তবে ঘটনার পরপরই পালিয়ে যাওয়ায় এবং মুঠোফোন বন্ধ রাখায় চিকিৎসক নজরুল ইসলাম কিংবা সৌদি-বাংলা হাসপাতালের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এনএনবাংলা/
আরও পড়ুন
ঢাবি ভিসিকে ‘জামায়াতি প্রশাসন’ আখ্যা দিল ছাত্রদল
টকশোর আড়ালে আ. লীগকে পুনর্বাসন ও ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন
আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ১০১ কোটি টাকার ৬০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব বাতিল