অনলাইন ডেস্ক :
উত্থান-পতনের নানা মোড় পেরিয়ে ম্যাচ পৌঁছে গেল শেষ ওভারের নাটকীয়তায়। জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ১৩ রান। ফজলহক ফারুকির প্রথম বল উড়িয়ে মারলেন দুনিথ ভেল্লালাগে। মিড উইকেট সীমানায় বেশ কিছুটা দৌড়ে রশিদ খান বলের কাছে গেলেন বটে, কিন্তু ক্যাচ নিতে গিয়ে উল্টো বানিয়ে দিলেন ছক্কা। পরের বলে রান নেই, তৃতীয় বলে সিঙ্গেল। চতুর্থ বলে ছক্কায় উড়িয়ে ম্যাচ শেষ করে দিলেন চারিথ আসালাঙ্কা। ইব্রাহিম জাদরানের রেকর্ড গড়া ইনিংস আর রশিদ খানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে বেশির ভাগ সময় সম্ভাবনায় এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত পারল না আফগানিস্তান। পাল্লেকেলেতে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষটিতে আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ ড্র করতে পারল শ্রীলঙ্কা। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানরা ৫০ ওভারে তোলে ৩১৩ রান। দলের অর্ধেকের বেশি রান একাই করেন ইব্রাহিম। ইনিংস শুরু করতে নেমে শেষ বলে আউট হওয়া ওপেনার খেলেন ১৩৮ বলে ১৬২ রানের ইনিংস। আফগানিস্তানের হয়ে ওয়ানডেতে এই প্রথম দেড়শ ছুঁতে পারলেন কোনো ব্যাটসম্যান। রান তাড়ায় শুরুটা ভালো করার পর পথ হারিয়ে আবার লড়াইয়ে ফিরে উত্তেজনার নানা স্রোতে ভেসে শেষ পর্যন্ত লঙ্কানরা জেতে ২ বল বাকি রেখে। ওপেনিংয়ে ৬১ বলে ৬৭ রান করেন কুসল মেন্ডিস। তবে তাদের জয়ের মূল নায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। ইনিংসের মাঝামাঝি থেকে শেষের বৈতরণী পার করান তিনি ৭২ বলে ৮৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে। শেষ দিকে ভেল্লালাগের ক্যামিও ইনিংসও (২১ বলে ৩১*) ছিল দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। পাল্লেকেলেতে এই প্রথম তিনশর বেশি রান তাড়া করে জিতল কোনো দল। সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিতেছিল আফগানরা, পরের ম্যাচ ভেস্তে যায় বৃষ্টিতে। শেষের মতো ম্যাচের শুরুটাও ভালো করে শ্রীলঙ্কা। বিপজ্জনক আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ বিদায় নেন তৃতীয় ওভারে। দ্বিতীয় উইকেটে রহমত শাহকে নিয়ে ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান ইব্রাহিম। তবে খুব বড় হয়নি এই জুটি। কাসুন রাজিথার শর্ট বলে রহমত ফেরেন ২২ রানে। আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদি বিদায় নেন ৪ রানেই। এরপরই বড় জুটি পায় আফগানিস্তান। ইব্রাহিমের সঙ্গে মিলে অভিজ্ঞ নাজিবউল্লাহ জাদরান দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন লঙ্কানদের সব চ্যালেঞ্জ গুঁড়িয়ে দিয়ে। ১৪১ বলে ১৫৪ রানের জুটি গড়েন দুজন, চতুর্থ উইকেটে যা আফগানিস্তানের রেকর্ড। ৬৪ বলে ফিফটি ছোঁয়া ইব্রাহিম পরের পঞ্চাশ করেন ¯্রফে ৩৬ বলে। ক্যারিয়ারে ¯্রফে ৮ ওয়ানডেতেই ৩ সেঞ্চুরি হয়ে গেল ২০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের। সেঞ্চুরি পর তিনি বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। নাজিবউল্লাহ বরাবরের মতোই রান তুলতে থাকেন দ্রুত। এই জুটি ভাঙে ভানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে দাসুন শানাকার দুর্দান্ত ক্যাচে। ৭৬ বলে ৭৭ করে বিদায় নেন নাজিবউল্লাহ। এরপর মোহাম্মদ নবি, গুলবদিন নাইব ও রশিদ খানরা প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি। তবে ইব্রাহিম এক প্রান্ত থেকে চালিয়ে যান। তাতে শেষ ১০ ওভারে ৮৭ রান তোলে আফগানরা। ১৫ চার ও ৪ ছক্কায় ১৬২ করে ইব্রাহিম আউট হন ইনিংসের শেষ বলে। আফগানিস্তানের হয়ে ওয়ানডে আগের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছিল মোহাম্মদ শাহজাদের ১৩১। খানিকটা শুষ্ক উইকেটে চ্যালেঞ্জিং রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কাকে ভালো শুরু এনে দেন পাথুম নিসানকা ও কুসল মেন্ডিস। ১৮ ওভারে ১০১ রানের জুটি গড়েন দুজন। মুজিব উর রহমানের বলে ৮ রানে নাজিবউল্লাহর হাতে বেঁচে গিয়ে কুসল শেষ পর্যন্ত আউট হন ৬১ বলে ৬৭ করে। খানিক পরই নিসানকার (৫৫ বলে ৩৫) ইনিংস থামে রশিদ খানের দুর্দান্ত এক গুগলিতে। রশিদ নিজের পরের ওভারে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকেও বোল্ড করে দিলে বিপদে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। অভিজ্ঞ দিনে চান্দিমাল শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। মোহাম্মদ নবির বলে ছক্কার পর সোজা এক ডেলিভারির লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান তিনি (৩২ বলে ৩৩)। সেখান থেকে শ্রীলঙ্কাকে পথে ফেরায় আসালাঙ্কা ও শানাকার জুটি। পরিস্থিতির চাপ সামলে ৬৮ বলে ৭৯ রান যোগ করেন দুজন। এই দুজনের ব্যাটে যখন সম্ভাবনা উজ্জ্বল শ্রীলঙ্কার, আবার দৃশ্যপটে আবির্ভাব রশিদ খানের। তার অসাধারণ এক গুগলিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন শানাকা (৪৪ বলে ৪৩)। পরের ওভারে হাসারাঙ্গাকেও যখন ফেরান রশিদ, ম্যাচ হেলে পড়ে আফগানিস্তানের দিকে। মুজিবের এক ওভারে আসালাঙ্কার বিশাল দুটি ছক্কায় ম্যাচে আবার উত্তেজনা ফেরে বটে। তবে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগায় খোঁড়াতে থাকেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। আরেক প্রান্তে তরুণ ভেল্লালাগে শুরুতে টাইমিং পেতে ভুগতে থাকেন। তাতে কঠিন হতে থাকে রান-বলের সমীকরণ। কিন্তু ভেল্লালাগেই পরে দুর্দান্ত সব শটে ম্যাচ আবার নিয়ে আসেন নাগালে। শেষ ২ ওভারে যখন প্রয়োজন ২৯ রান, গুলবদিন নাইবের ওভারে তিনি চার মারেন তিনটি। এরপর শেষ ওভারে দুই ব্যাটসম্যান মিলে ওই দুই ছক্কা। দুর্দান্ত জয়ে সিরিজ ড্রয়ের স্বস্তিতে মাঠ ছাড়ে লঙ্কানরা। ম্যাচ জেতানো ইনিংসে ম্যান অব দা ম্যাচ আসালাঙ্কা। প্রথম ও শেষ ম্যাচের সেঞ্চুরিতে সিরিজ সেরা ইব্রাহিম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ৩১৩/৮ (গুরবাজ ৫, ইব্রাহিম ১৬২, রহমত ২২, শাহিদি ৪, নাজিবউল্লাহ ৭৭, নবি ১২, গুলবদিন ৮, রশিদ ১৩, নূর ২*, রাজিথা ১০-০-৬০-৩, থিকসানা ৭-০-৪৬-০, ভেল্লালাগে ৪-০-২৫-০, আসিথা ১০-১-৬৪-১, ধনাঞ্জয়া ৮-০-৪২-১, হাসারাঙ্গা ১০-০-৬৭-২, শানাকা ১-০-৫-০)।
শ্রীলঙ্কা: ৪৯.২ ওভারে ৩১৪/৬ (নিসানকা ৩৫, কুসল ৬৭, চান্দিমাল ৩৩, ধনাঞ্জয়া ৫, আসালাঙ্কা ৮৩*, শানাকা ৪৩, হাসারাঙ্গা ২, ভেল্লালাগে ৩১*; ফারুকি ৯.৪-০-৭০-০, মুজিব ১০-০-৭০-০, গুলবদিন ৮-০-৪৮-০, নবি ১০-০-৫৬-২, রশিদ ১০-০-৩৭-৪, নূর ৪-০-৩২-০)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ ১-১ ড্র।
ম্যান অব দা ম্যাচ: চারিথ আসালাঙ্কা।
ম্যান অব দা সিরিজ: ইব্রাহিম জাদরান।
আরও পড়ুন
টেস্ট ক্রিকেট: মরণদশা থেকে বাঁচানোর উপায় কী
একটা ধাক্কায় কোহলির ৪ লাখ টাকা জরিমানা
মাশরাফি–সাকিব কি খেলবেন বিপিএলে?