March 31, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, March 25th, 2025, 1:06 pm

লাইলাতুল কদর চেনার উপায়

হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত লাইলাতুল কদর

অনলাইন ডেস্ক

লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এ রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল। কোরআনে ওই রাতের ফজিলত আলোচিত হয়েছে দুটি জায়গায়। সুরা দুখানের শুরুতে আল্লাহ বলেছেন, শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। নিশ্চয় আমি এটি নাজিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয় আমার নির্দেশে। নিশ্চয় আমি রাসূল প্রেরণকারী। তোমার রবের কাছ থেকে রহমত হিসেবে; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সুরা দুখান: ২-৬)

সুরা কাদরে আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি এটি নাযিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে।’ তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত। (সুরা কাদর: ১-৫)

এই মহিমান্বিত রাত রমজানেরই কোনো একটি রাত হওয়ার ব্যাপারটি সুনিশ্চিত। যেহেতু কোরআনের অন্য একটি আয়াতে বলা হয়েছে কোরআনে রমজান মাসে নাজিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন, রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। (সুরা বাকারা: ১৮৫)

কিন্তু রমজানের কোন রাতটি ‘লাইলাতুল কদর’ তা সুনির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়নি। একাধিক বর্ণনায় এসেছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকেরই একটি রাত। যে কারণে তিনি রমজানের শেষ দশকটি ইতেকাফে কাটাতেন। আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন এবং বলতেন, আপনারা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ দশকে অনুসন্ধান করুন। (সহিহ বুখারি: ২০২০, সহিহ মুসলিম: ১১৬৯)

আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল, তারপর আমার পরিবারের একজন আমাকে জাগিয়ে দিলেন, ফলে আমি তা ভুলে গেলাম। আপনারা লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ রাতে অনুসন্ধান করুন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬৬)

কিছু বর্ণনায় নবিজি (সা.) রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে আপনারা লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করুন। (সহিহ বুখারি)

অর্থাৎ রমজানের শেষ দশকের যে কোনো একটি রাত অথবা ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের দিবসপূর্ব রাতগুলোর কোনো একটি রাত লাইলাতুল কদর।

কিছু হাদিসে এ রাতের কিছু আলামত বা চিহ্ন বলে দেওয়া হয়েছে যা দেখে বোঝা যেতে পারে ওই রাতই লাইলাতুল কদর। উবাদা ইবনুস সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরে’র নিদর্শন হলো এটি উজ্জ্বল, পরিষ্কার রাত হবে; যেন উজ্জ্বল চাঁদ ওঠা একটি রাত। রাতটি হবে শান্ত ও স্থির। ওই রাতে তীব্র শীত হবে না, তীব্র গরমও হবে না, এবং কোনো নক্ষত্রও তাতে খসে পড়বে না যতক্ষণ না সকাল হয়। (মুসনাদে আহমদ)

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সামনে কদরের রাত সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে ওই রাত মনে রাখবে, যখন চাঁদ উদিত হবে থালার একটি টুকরোর মতো বা অর্ধেক থালার মতো। (সহিহ মুসলিম: ২৬৬৯)

অনেক আলেম মনে করেন, এ হাদিসে ইঙ্গিত রয়েছে যে, লাইলাতুল কদর মাসের শেষ ভাগে হয়ে থাকে, কারণ চাঁদ থালার মতো উদিত হয় সাধারণত মাসের শেষের দিকে। লাইলাতুল কদরের আলমত প্রকাশ পায় পরবর্তী দিনেও। উবাই ইবনে কা’ব (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন, লাইলাতুল কদরের আলামত হল ওই রাতের পর দিনের সূর্য উদিত হয় সাদা আভাযুক্ত উজ্জল হয়ে তাতে তীব্র রশ্মি থাকে না। (সহিহ মুসলিম: ১৬৫৮)