October 30, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 30th, 2025, 3:07 pm

লিবিয়ার উপকূলে নৌকাডুবি: নিহত ১৮, বাংলাদেশিসহ উদ্ধার ৯০

 

লিবিয়ার উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা চলাকালে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে অন্তত ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এই ঘটনায় বাংলাদেশিসহ প্রায় ৯০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে প্রায় ৭৬ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত উপকূলীয় শহর সাবরাথার রেড ক্রিসেন্ট জানায়, সোমবার রাতে নৌকাটি উল্টে যাওয়ার খবর পাওয়ার পরই উদ্ধার অভিযান শুরু হয়, যা মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চলে। মরদেহগুলো সুরমান বন্দরের কাছাকাছি উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

রেড ক্রিসেন্টের প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, স্বেচ্ছাসেবীরা মরদেহগুলো সাদা প্লাস্টিক ব্যাগে রাখছেন ও অ্যাম্বুলেন্সে তোলার কাজ করছেন। জীবিত উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেছে সংস্থাটি।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, লিবিয়ার আল জাওইয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া কাঠের নৌকাটি সমুদ্রে কয়েক ঘণ্টা ভেসে থাকার পর উচ্চ ঢেউয়ের কবলে পড়ে উল্টে যায়। এতে ১৮ জনের মৃত্যু ঘটে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে রেড ক্রিসেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, জীবিত উদ্ধার হওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা ৯০ জন। তবে আইওএমের তথ্যমতে, উদ্ধার হওয়া মানুষের সংখ্যা ৬৪। এদের মধ্যে ১৮ জন বাংলাদেশি, ৩১ জন সুদানি (যাদের মধ্যে একজন নারী ও এক শিশু), ১২ জন পাকিস্তানি এবং তিনজন সোমালিয়ান।

নিহতদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি আছেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। আইওএম জানিয়েছে, মৃতদের জাতীয়তা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সংস্থাটি আরও বলেছে, “এই নৌকাডুবির ঘটনাটি আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়—নিরাপত্তা ও সুযোগের খোঁজে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামা মানুষদের কতটা ভয়াবহ ঝুঁকি নিতে হয়।”

এ মাসের শুরুতেই লিবিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিচালিত একটি চিকিৎসাকেন্দ্র জানায়, তিউনিশিয়া সীমান্তের কাছে জুওয়ারা ও রাস ইজদির উপকূল থেকে গত দুই সপ্তাহে অন্তত ৬১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী অভিবাসন রুট হিসেবে পরিচিত সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় পথে চলতি বছরই আইওএমের “মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রজেক্ট”-এর তথ্য অনুযায়ী ১,০৪৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যে ৫২৭ জনের মৃত্যু বা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে লিবিয়ার উপকূলে।

উদ্ধার হওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সহায়তা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে লিবিয়ার স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে আইওএম।

ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুর এই ধারাবাহিকতা ঠেকাতে সংস্থাটি নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন পথ সম্প্রসারণের পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে লিবিয়ায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। বর্তমানে দেশটি ত্রিপোলি ও বেনগাজিভিত্তিক দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের নিয়ন্ত্রণে বিভক্ত। এই অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিচ্ছে মানবপাচারকারী চক্রগুলো, যারা আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত ও দারিদ্র্যপীড়িত মানুষদের ফাঁদে ফেলে ইউরোপে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে বিপজ্জনক যাত্রায় পাঠাচ্ছে।

এনএনবাংলা/