December 14, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, December 14th, 2025, 2:13 pm

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এটি এক গভীর শোক ও বেদনাবিধুর দিন। একাত্তরের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষ প্রান্তে, যখন স্বাধীনতার বিজয় নিশ্চিত, ঠিক তখনই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস ও বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায়। পরাজয় অনিবার্য জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়।

মহান বিজয় দিবসের মাত্র দুই দিন আগে এই দিনে শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

স্বাধীনতার পর রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিসহ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চোখ বাঁধা ও হাত পেছনে বাঁধা অবস্থায় বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেই কালরাতে ঢাকায় অন্তত দুই শতাধিক বুদ্ধিজীবীকে নিজ নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত টর্চার সেলে ভয়াবহ নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করে রায়েরবাজারের ইটখোলা ও মিরপুর বধ্যভূমিতে ফেলে রাখা হয়। বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, ১৯৭১ সালের পুরো ডিসেম্বর মাসজুড়ে এক হাজার থেকে দেড় হাজার বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের এই দিনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। পাশাপাশি দেশের সব জেলা ও উপজেলায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, পরাজয়ের মুখে থাকা হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের ঠিক আগমুহূর্তে জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন উদ্দেশ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায়। স্বাধীনতার প্রাক্কালে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর ক্ষত আজও বাংলাদেশ বহন করে চলেছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় ও বেদনাদায়ক দিন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা পরিকল্পিতভাবে দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বাণীতে বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ছিল জাতিকে মেধাশূন্য করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যার স্মৃতি আজও জাতিকে ব্যথিত করে। তবে তাদের রেখে যাওয়া জ্ঞানচর্চা, মুক্তচিন্তা ও সম্প্রীতির আদর্শ একটি উন্নত ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ার প্রেরণা জোগায়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার বাহিনী দেশের প্রথম সারির বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। স্বাধীনতা ও জ্ঞানচর্চার জন্য তাদের আত্মত্যাগ জাতি চিরকাল স্মরণ করবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ছিল একটি সুপরিকল্পিত ও সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র।

দিবসটি উপলক্ষে আজ সকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারাও মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর সকাল থেকে সর্বস্তরের মানুষ, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।

এনএনবাংলা/