August 10, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, August 10th, 2025, 12:15 am

শাহরাস্তির রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নে প্রকল্প থাকলেও দেখা মিলেনি কালভার্টের

আহসান হাবীব পাটওয়ারীঃ

এশিয়ার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সারাবিশ্বে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্ধ দিয়ে থাকে। যা দিয়ে গ্রামীন সড়ক, ব্রীজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজের উন্নয়ন ও কৃষিকাজের সহায়ক ড্রেন নির্মাণ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড করা হয়। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে চাঁদপুরের শাহরাস্তির রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের বেরনাইয়া এলাকায় একটি কালভার্টের বরাদ্ধ দেয়া হলেও অদ্যাবধি দেখা মিলেনি কালভার্টের।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বেরনাইয়া হাজী বাড়ির সম্মুখে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি কালভার্ট নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প দেখানো হয়। যা ‘‘বেরনাইয়া কামালের বাড়ির সামনে কালভার্ট নির্মাণ’’ নামে ইউনিয়ন পরিষদের সম্পত্তি রেজিষ্টারে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। রেজিষ্টারে সম্পদের পরিচিতি নং- ০১২০২২৩১৬। এডিবি’র এ প্রকল্পটি টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ হয়েছে মর্মে দেখানো হলেও অদ্যাবধি কালভার্টটি আলোর মুখ দেখেনি। প্রকল্প বরাদ্ধ এবং প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন হলেও স্থানীয়রা বলতে পারছে না কোথায় নির্মিত হয়েছে কালভার্টটি!

বেরনাইয়া কামালের বাড়ির সামনে কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে হাজী বাড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ছিদ্দিকুর রহমানের পুত্র মোঃ হাবিবুর রহমান কামাল জানান, তৎসময়ের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাজী আবু হানিফের মেয়াদকালে আমাদের বাড়ির সম্মুখে একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য বহুবার অনুরোধ করার পর ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সেটি অনুমোদন হয়। চেয়ারম্যান আবু হানিফের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়কালে এ প্রকল্পটি দেয়া হয়। পরবর্তীতে নির্বাচন হওয়ার পর নতুন নির্বাচিত চেয়ারম্যান ডাঃ আবদুর রাজ্জাক ক্ষমতায় আসে। তিনি ক্ষমতায় এসে আমাদের বাড়ি রাজাকারের বাড়ি আখ্যায়িত করে কালভার্টটি নির্মাণ করেননি। আমি স্থানীয় ইউপি সদস্য, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীদের কাছে গিয়েছি। তাদের মাধ্যমে চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাককে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি রাজাকারের বাড়ির সামনে কালভার্ট নির্মাণ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িকে তিনি রাজাকারের বাড়ি বলে অপমান করেছেন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। যার কারণে আমরা তার বিরুদ্ধে কিছুই বলার সাহস পাইনি। তাছাড়া আমরা জানতে পারি তিনি এখানে কালভার্ট নির্মাণ না করেই প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমি সহ হাজী বাড়ির সকলে তার এ অর্থ আত্মসাতের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।

স্থানীয় বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম জানান, আমরা শুনেছি বেরনাইয়া হাজী বাড়ির সামনে একটি কালভার্ট অনুমোদন হয়েছে। পরে কেন, কি কারণে কালভার্টটি করা হয়নি তা বলতে পারবো না। জানতে পেরেছি কাগজপত্রে প্রকল্প আছে কিন্তু কাজ না করেই টাকা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

হাজী বাড়ির বাসিন্দা নাছিমা আক্তার জানান, চেয়ারম্যান আবু হানিফ থাকতে কালভার্টের অনুমোদন হয়েছে কিন্তু পরবর্তী চেয়ারম্যান আঃ রাজ্জাক দায়িত্বে আসার পর আর কাজটি করা হয়নি। কি কারণে আজও কাজটি হয়নি আমরা বলতে পারছি না। আমাদের চলাচলের জন্য কালভার্টটি প্রয়োজন ছিলো।

বেরনাইয়া এলাকার সোহাগ, মিজান সহ একাধিক বাসিন্দা জানান, প্রকল্প দেয়া হলেও চেয়ারম্যান কাজটি করেনি। পরে জানতে পারি কাজ না করেই বিল উত্তোলন করে চেয়ারম্যান অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের কারণে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা হওয়ার দরকার। 

ইউপি সদস্য আবুল বাসার জানান, আমি প্রথমবার ইউপি সদস্য হয়েছি, তাই অনেক বিষয়ে আমার জানা নেই। এ বিষয়টি সম্পর্কে চেয়ারম্যান আঃ রাজ্জাক ভালো বলতে পারবেন।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু হানিফ জানান, আমার দায়িত্বকালীন সময়ের শেষ দিকে এসে ড্রাইভার কামালের বাড়ির সামনে কালভার্টটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি জনগুরুত্বপূর্ণ ছিলো এবং ওই এলাকার মানুষদের দীর্ঘদিন আশ্বাস দেয়ার কারণে আমি প্রকল্প অনুমোদন করে দিয়েছি। পরবর্তী সময়ে নতুন চেয়ারম্যান আসার পর শুনেছি কাজ করেনি। কেন কাজটি হয়নি চেয়ারম্যান সাহেব ভালো জানেন। 

উপজেলা প্রকৌশলী সৌরভ দাস জানান, আমি এ উপজেলায় অল্প কিছুদিন হয়েছে যোগদান করেছি। তারপরও আপনাদের তথ্য মতে ধারণা করে বলছি, এটি আমাদের আওতাধীন নয়। সম্ভবত এটি ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন, যা স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। এ বিষয়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদ বা চেয়ারম্যান বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবেন। 

রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর শুনেছি সেখানে এডিবি’র টেন্ডার প্রক্রিয়ায় একটি কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে। পরবর্তীতে সেখান থেকে প্রকল্পটি বাতিল করে উপজেলায় অবগত করে ইউনিয়নের অন্য কোন ওয়ার্ডে হস্তান্তর করেছি বলে ধারণা করছি। যা আমাদের রেজুলেশন থাকতে পারে। রেজুলেশন কিংবা কোন ওয়ার্ডে কাজটি করা হয়েছে দেখাতে বললে তিনি, সেটি অনেক আগে হয়েছে বলে দেখাতে পারেননি। তিনি জানান হয়তো কোথাও ভুল হতে পারে, যদি তিনি দায়িত্বে থাকেন সেখানে আরো বেশি বাজেট দিয়ে হলেও কালভার্টটি করে দিবেন।

স্থানীয়দের দাবী, এভাবে জনগনের অজান্তে প্রতিনিধিরা সরকারের দেয়া বরাদ্ধ লুটপাট করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকেন। একজন চেয়ারম্যান ইউনিয়নের অভিভাবক হয়ে প্রকল্পের কাজ না করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকারের প্রকল্পের কাজ না করে সম্পূর্ণ টাকা লুটে নেয়ায় দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।