May 6, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, May 6th, 2025, 6:42 pm

শিশুর মন খারাপ, না কি ডিপ্রেশন? পার্থক্য বুঝবেন কীভাবে

অনলাইন ডেস্ক

বাড়ির ছোট মেয়েটা কয়েকদিন ধরেই গম্ভীর। খেলাধুলা বাদ, গল্প করা বন্ধ, এমনকি প্রিয় পুতুল নিয়েও আর আগ্রহ নেই। মা ভাবলেন, হয়তো মন খারাপ। দুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু গেল না। বরং মেয়েটি আরও চুপচাপ, অস্থির, রাতে ঘুমেও সমস্যা। তখনই প্রশ্ন ওঠে – শুধুই কি মন খারাপ? নাকি এর পেছনে রয়েছে ভয়ঙ্কর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা – ডিপ্রেশন?

শিশুদের বিষণ্নতা প্রায়ই অস্বীকৃত বা উপেক্ষিত হয়, কারণ অনেকেই মনে করেন যে ‘বাচ্চাদের আর কী দুঃখ থাকতে পারে!’ কিন্তু বাস্তবে শিশুরা বিভিন্ন কারণে বিষণ্নতায় ভুগতে পারে। আজ শিশুদের বিষণ্নতা সচেতনতা দিবস। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, বিশেষ করে হতাশা ও বিষণ্নতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে আজকের দিনটি উদযাপন করা হয়।

সব মানুষেরই মাঝেমাঝে মন খারাপ থাকে। এটি স্বাভাবিক। বাচ্চারাও নানান কারণে মন খারাপ করতে পারে। কিন্তু কখনও কখনও দেখতে মন খারাপের মতো মনে হলেও আপনার শিশু বিষণ্নতায় ভুগতে পারে। তাই জেনে নিন সাধারণ মন খারাপ আর শিশুদের হতাশা কীভাবে আলাদা করবেন। এই লেখায় আমরা জানবো শিশুদের বিষণ্নতার কারণ, লক্ষণ এবং করণীয়। সেই সঙ্গে নিজেদের প্রশ্ন করবো যে আমাদের সামাজিক কাঠামো শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবার জন্য কতটা প্রস্তুত।

মন খারাপ:

১. শিশুরা নানা কারণে মন খারাপ করতে পারে। খেলনা হারালে, প্রিয় কেউ বকলে, বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া হলে বা কাঙ্ক্ষিত কিছু না পেলে তারা দুঃখ পায়। এটি সাময়িক, ঘটনাকেন্দ্রিক এবং সাধারণত নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়।

২. মন খারাপ হওয়া শিশুদের আবেগগত বিকাশের অংশ, যা তাদের শেখায় কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। মন খারাপ হওয়া মানেই মানসিক রোগ নয়, বরং এটি একটি অনুভূতি, প্রতিক্রিয়া আর রূপান্তরের এক অভ্যাসচক্র।

৩. মনোবিজ্ঞানীদের মতে, শিশুরা মন খারাপ করে বলেই তারা সহানুভূতি শেখে, অনুশোচনা বোঝে এবং সম্পর্ককে মূল্য দেয়।

বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন:

অন্যদিকে ডিপ্রেশন হচ্ছে এমন একটি মানসিক অবস্থা, যা শিশুর চিন্তা, অনুভূতি, ঘুম, খাওয়া, আচরণ ও সামাজিকতা – সবকিছুতে প্রভাব ফেলে। এটি কোনো সাধারণ দুঃখ নয়, বরং গভীর এক মনস্তাত্ত্বিক সংকট। ডিপ্রেশনের লক্ষণ শিশুদের মধ্যে যেমন হতে পারে-

১. প্রায় প্রতিদিন বিষণ্নতা বা বিরক্ত ভাব

২. আগে যা ভালো লাগতো, সেগুলোতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা

৩. অতিরিক্ত ঘুম বা অনিদ্রা

৪. খাওয়া স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া

৫. আত্মমূল্যহীনতা বা অপরাধবোধ

৬. অন্যমনস্কতা ও পড়াশোনায় আগ্রহ হারানো

৭. অতিরিক্ত ক্লান্তি বা শক্তির অভাব

৮. আত্মহত্যার চিন্তা, বা নিজের শারীরিক ক্ষতি করার প্রবণতা। এমনটি বয়ঃসন্ধিকালে বাড়তে পারে।

আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের ম্যানুয়েল অনুযায়ী এই লক্ষণগুলো যদি দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে থাকে এবং শিশুর স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত করে, তখন এটিকে ডিপ্রেশন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কেন শিশু হতাশায় আক্রান্ত হয়?

মানুষ ভাবতে পারে শিশুর বয়সে কী বা এমন চিন্তা! কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বর্তমান সময়ে শিশুদের উপর মানসিক চাপ বেড়েছে বহুগুণে।

ডিপ্রেশন বা হতাশার সম্ভাব্য কারণ

১. পারিবারিক সমস্যা: মা-বাবার মধ্যে কলহ, বিচ্ছেদ, অভিভাবকের মৃত্যু

২. স্কুলে বুলিং: বন্ধুদের দ্বারা উপহাস বা নিপীড়ন

৩. শারীরিক বা যৌন নির্যাতন: ঘরে বা বাইরে যেকোনো ধরনের ট্রমা

৪. শারীরবৃত্তীয় কারণ: মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা

৫. অতিরিক্ত প্রত্যাশা: অভিভাবক বা শিক্ষকের চাপে নিজেদের ব্যর্থ মনে করা

অভিভাবকের করণীয়

১. শুনুন, তাড়াহুড়ো নয়: শিশু কী বলছে, কীভাবে বলছে, সেটার গুরুত্ব দিন। চোখে চোখ রেখে শুনুন।

২. দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: শিশুর সমস্যা ‘ছোট’ ভেবে এড়িয়ে যাবেন না। তাদের যন্ত্রণাও বাস্তব।

৩. নিয়মিত সময় দিন: প্রতি সপ্তাহে অন্তত কয়েক ঘণ্টা শুধু সন্তানের সঙ্গে সময় কাটান কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ছাড়া।

৪. পর্যবেক্ষণ করুন: ঘুম, খাওয়া, বন্ধুত্ব, পড়াশোনায় আচরণগত পরিবর্তন দেখলে খেয়াল করুন।

৫. বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন: মনে হলে শিশুকে শিশু মনোবিজ্ঞানীর কাছে নিয়ে যান। যত তাড়াতাড়ি, তত ভালো।

বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য এখনো অনেকটাই অবহেলিত। শিশুরা যদি মানসিক চাপে ভোগে, পরিবার তা ‘কিছু না’ বলে এড়িয়ে যায়। স্কুলে কাউন্সেলিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। আবার যে কজন মানসিক চিকিৎসক আছেন, তাদের বড় অংশ শিশু নয়, প্রাপ্তবয়স্ক রোগী নিয়েই ব্যস্ত।
শিশুদের মন খারাপকে যদি আমরা সময়মতো বুঝি, প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিই, তবে অনেক বড় বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব। দেরি হলে শিশুর জীবনে গড়ে ওঠে আত্মঘাতী চিন্তা, সেই সঙ্গে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা, এমনকি ভবিষ্যৎ সম্পর্ক ও কর্মজীবনও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।