২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে কুড়িগ্রাম-৪ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন জাকির হোসেন। পরে তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। মাদক কারবার, অবৈধ দখল, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের কারণে সারা বছর বিতর্কে থাকা সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন।
বইটির নাম দিয়েছেন ‘ছোটদের বঙ্গবন্ধু’। সরকারি অনুদানের টাকায় মাত্র ১১১ পৃষ্ঠার ছোট্ট বইটি সরকারি প্রতিষ্ঠান গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ২০২০ সালে ক্রয় করে ৪৮০ টাকা দরে। সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি পাঠাগারে সরবরাহ করা হয় জাকির হোসেনের লেখা নিম্নমানের বইটি। এমনকি জাকির হোসেন তার মন্ত্রণালয়ের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও তার লেখা বই কিনতে বাধ্য করেছিলেন। সেই জাকির হোসেন এখন দুদকের মামলায় কারাগারে।
শুধু জাকির হোসেনই নন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুদানের টাকায় ক্রয় করা বইয়ের তালিকার বড় অংশজুড়েই রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন লেখকের মানহীন বই। তালিকায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানাসহ শেখ পরিবারের সদস্যদের স্তুতি গেয়ে লেখা বিভিন্ন অখ্যাত লেখকের বই। এ ছাড়া রাজনৈতিক নেতা, সরকারি আমলাদের বই স্থান পেয়েছে অনুদানের টাকায় ক্রয় করা পুস্তকের তালিকায়। এসব পুস্তকের মূল্য দেখানো হয়েছে প্রকৃত বিক্রয় মূল্যের চেয়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি। ওই অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা কালবেলাকে জানিয়েছেন।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি এবং আওয়ামী লীগ নেতা এমনকি আমলারাও শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে বই লিখেছেন। মানহীন সেসব বই উচ্চমূল্যে ক্রয় করে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, যা সারা দেশের পাঠাগারে পাঠানো হয়। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২৪ জন লেখকের প্রায় ১১ হাজার বই বিতরণ করা হয় সারা দেশে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও ক্রয় ও বিতরণ করা হয় ৮ হাজারের বেশি বই। একবার বা দুবার নয়, প্রতিবছরই এমন মানহীন বই সরকারি অর্থে ক্রয় করে তা দেশের লাইব্রেরিগুলোতে সরবরাহ করা হতো। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কাজ হচ্ছে জ্ঞান ও মননশীলতার উৎকর্ষ সাধনে গ্রন্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডকে ত্বরান্বিত করা, সাহিত্যমনস্ক, জ্ঞানসমৃদ্ধ জাতি এবং সমাজ গঠন করা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেসরকারিভাবে গ্রন্থাগার স্থাপনে জনসাধারণকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি বেসরকারি গ্রন্থাগারের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি করাও তাদের কাজ। বইমেলাকে দেশ ও দেশের বাইরে সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া, সর্বসাধারণের মধ্যে লেখক, কবি, সাহিত্যিক তৈরি তাদের প্রকাশিত পুস্তক বা গ্রন্থের পরিচিতি বাড়ানো; জনসাধারণকে গ্রন্থ পাঠে সচেতন করতেও কাজ করে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। দেশের ৬০২টি বেসরকারি গ্রন্থাগারকে আর্থিক ও বই অনুদান দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া দেশের ৭১টি সরকারি গ্রন্থাগার পৃষ্ঠপোষকতা করে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর। দুটি প্রতিষ্ঠানই সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন।
জানা গেছে, সরকারি এই প্রতিষ্ঠান দুটি প্রতি বছর দেশের আনাচেকানাচে থাকা পাঠাগারে আর্থিক অনুদান ও বই সহায়তা দিয়ে থাকে। সহায়তার ক্ষেত্রে বরাদ্দের ৫০ শতাংশ নগদ অর্থ দেওয়া হয় ওই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে থাকা ব্যাংক হিসাবে। বাকি অর্থের বই সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়। অনুদানের গ্রন্থাগার বাছাইয়ের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। তবে অনুদানের বই ক্রয়ের ক্ষেত্রে এসব নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করা হয়নি। শুধু শেখ পরিবারের বন্দনা দেখেই ক্রয় করা হয়েছে প্রায় সব বই।
সরকারি অর্থে শেখ পরিবারের বন্দনা
দেশের বিভিন্ন গ্রন্থাগারে সরবরাহের জন্য সরকারি অর্থে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১১ হাজারের বেশি বই ক্রয় করা হয়। যার সবই ছিল শেখ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লেখা। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের লেখা ‘শেখ হাসিনা বিমুগ্ধ বিস্ময়’ নামক বইটি প্রতি পিস ২ হাজার টাকা করে কেনা হয়েছে। এ বইটি কেনা হয়েছে ৭ কপি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা আমার মা’ বইটি প্রতি কপি ৩২৫ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৬৮টি। একই লেখকের ‘মুজিব বাংলার—বাংলা মুজিবের’ প্রতিটি ৩০০ টাকা দরে ক্রয় করা হয়েছে ৬৯টি। তারিক সুজাতের ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমেট বিমান ও ব্রিটিশ গোপন দলিল’ বইটি ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে ক্রয় করা হয়েছে ২০টি। শেখ মুজিবুর রহমানে নিজের লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বই দুটি ৪০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৫৯২টি। এ ছাড়া ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ২২০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ২৯৫টি। মোনায়েম সরকারের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবন ও রাজনীতি’ (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড) ১ হাজার টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৪৯টি। আবদুল মতিনের লেখা ‘জেনেভায় বঙ্গবন্ধু’ প্রতিটি ২০০ টাকায় কেনা হয়েছে ১৬৫ কপি। ‘রকমারি’ ডটকমে (বই বিক্রয়ের অনলাইন স্টোর) বইটি পাওয়া যায় ১৭২ টাকায়।
একইভাবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের লেখা ‘অগ্নিঝরা মুজিব ১৯৭১ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো’ বইটি প্রতিটি ৪০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৭৮ পিস। তবে রকমারিতে বইটি পাওয়া যায় ৩৪৪ টাকায়। প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ’ বইটি ১৫০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ২০ কপি। তবে রকমারিতে মূল্য ১২৯০ টাকা। ৫৪০ টাকা করে আবুল ফজলের ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্রয় করা হয়েছে ২৬ কপি। এই বইটি রকমারিতে পাওয়া যায়নি। সুভাষ সিংহ রায়ের লেখা ‘পাঠক বঙ্গবন্ধু ও লেখক বঙ্গবন্ধু’ বইটি ২৬০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৬৭ কপি। একই লেখকের ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু পরিবার’ বইটি ২৭৫ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৭০ কপি। এই বইটি রকমারিতে পাওয়া যায় ২৩৭ টাকায়। আহমদ মমতাজের লেখা ‘শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু’ প্রতি পিস ৫০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৪৯টি। আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ বইটি ৬০০ টাকা করে কেনা হয়েছে ৩৬টি।
প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ সমর্থক আমলা ও সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব কবীর বিন আনোয়ারের লেখা ‘শোষিতের বঙ্গবন্ধু’ ও ‘প্রণতি বঙ্গমাতা’ বই দুটি যথাক্রমে ৩০০ টাকা করে ৬৭ কপি ৩৮০ টাকা করে ৫০ কপি ক্রয় করা হয়েছে। তবে ‘শোষিতের বঙ্গবন্ধু’ বইটি রকমারিতে পাওয়া যায় ২৫৮ টাকায়। ড. জাকিয়া পারভিনের ‘বঙ্গমাতা কুসুমিত ইস্পাত’ বইটি ৪৮৫ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৬৮ কপি। আসলাম সানীর ‘মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইটি ২৫০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ১০৩টি। ড. নাজমা বেগম নাজুর ‘ছোটদের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ বইটি ২৫০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৮৫টি। রকমারিতে পাওয়া যায় ২১৫ টাকায়। পাশা মোস্তফা কামালের ‘মুজিব মানে অগ্নিগিরি’ বইটি ১৬০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৮৫টি। সরবিন্দু শেখর চাকমার ‘বঙ্গবন্ধু ও পার্বত্য চট্টগ্রাম’ বইটি ২৫০ টাকা করে কেনা হয়েছে ৮০ কপি। সৌমিত্র শেখরের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ বইটি ৫০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৫৬ কপি। একই লেখকের ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনা’ নামক বইটি কেনা হয়েছে। সামসুজ্জামান খানের শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা ‘মহানায়ক’ বইটি ৫০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৫২ কপি। রকমারিতে বইটি পাওয়া যায় ৪৩০ টাকায়। নাসিরউদ্দিন চৌধুরীর ‘চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের ইতিহাস’ বইটি ৩৫০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৯৬ কপি। কামাল চৌধুরীর ‘টুঙ্গীপাড়া গ্রাম থেকে’ ৩০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৬৪ কপি। সৌগত চট্টোপাধ্যায়ের ‘কলকাতায় শেখ মুজিব’ বইটি ৭০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ২৫ কপি। একই বই একই অর্থবছরে ফের কেনা হয়েছে আরও ৪৯টি। মোনায়েম সরকারের ‘আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ বইটি ৪০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৫৪ কপি। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘হাসিনা রেহানা : রূপকথার দুইবোন’ ৩৫০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৫৬টি। আনিসুজ্জামানের ‘বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ’ ৩৫০ টাকা করে কেনা হয়েছে ৫৪টি। আবুল ফজলের ‘শেখ মুজিব: তাঁকে যেমন দেখেছি’ বইটি ৩০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৭৩টি। আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘বঙ্গমাতা ও দুইকন্যার কথা’ বইটি ৩০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৭৪টি। একই লেখকের ‘আমার রেনু’ বইটি ৪০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ১০০ কপি। একই লেখকের ‘ছোটদের বঙ্গমাতা’ বইটি ১৮০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ১৯৮টি। মনজুরুল আহসান বুলবুলের ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ’ বইটি ৫০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৫৬টি। একই লেখকের ‘প্রামাণ্য শেখ হাসিনা’ বইটি ৮০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ২৯ কপি। মুহাম্মদ সামসুল হকের ‘চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু ও সঙ্গীরা’ বইটি ২৮০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৯৬টি। মুহাম্মদ শামসুল হকের যুক্ত ‘তথ্য-প্রমাণ প্রেক্ষাপট: বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক’ বইটি ৩৩০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ১৭১টি। একই লেখকের ‘স্বাধীনতার বিপ্লবী অধ্যায় : বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য’ ৪৭-৭১টি বইটিও কেনা হয়েছে। রামেন্দু মজুমদারের ‘শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু ও বিবিধ ভাবনা’ বইটি ২০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৯০ কপি। একই লেখকের ‘বাঙালির রাষ্ট্রসাধনা ও বঙ্গবন্ধু’ বইটি ২৫০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৮৪টি।
রবার্ট পেইনের লেখা ও ওবায়দুল কাদেরের ভাবানুবাদ করা ‘পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু’ বইটি ২৭৫ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৯১টি। এক লেখকের একই বই একই বছরে ২৫০ টাকা করে আরও কেনা হয়েছে ১৪৬টি। ওবায়দুল কাদেরের ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য’ বইটি ৫০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৪৭ কপি।
এদিকে অধ্যপক ড. হারিসুল হকের ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য ভাবনা’ বইটি ৩০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৭৪টি। আলম তালুকদারের ‘বঙ্গবন্ধুর অজানা অধ্যায়’ বইটি ৩০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৭৫টি। আসাদুল্লাহ পাটশির ‘বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা’ বইটি ৩০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৯০টি। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের ‘বঙ্গবন্ধু: ১০০ কবির ১০০ কবিতা’ বইটি ৩০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ১১২ কপি। সিরাজুল ইসলাম মুনিরের ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: পূর্বাপর অনুসন্ধান’ বইটি ৩০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৭৭ কপি। রফিকুর রশীদের ‘গল্পগুলো বঙ্গবন্ধু’ বইটি ২৫০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ১৩৪টি। কবীর চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বাঙালী জাতীয়তাবাদ’ বইটি ১৮০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ১৮৫ কপি। বিশ্বজিৎ ঘোষের ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও শেখ মুজিব’ বইটি ৫০০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৫২টি। জালাল উদ্দিন খান ইউসুফীর ‘পুঁথিকাব্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ বইটি ৪০০ টাকা করে কেনা হয়েছে ৮০টি। চৌধুরী শহীদ কাদেরের ‘বঙ্গবন্ধু তরুণ প্রজন্মের চোখে’ বইটি ২৪০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ৯১টি। সিরু বাঙালির ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প’ বইটি ২৫০ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে ১১৩টি। ইসহাক খানের ‘ইতিহাসের মহানায়ক খোকা’ বইটি ৩৫০ টাকা করে ৯৪টি ক্রয় করা হয়েছে। আসাদ চৌধুরীর ‘আমার বঙ্গবন্ধু’ বইটি ৩৫০ টাকা করে ৫৪টি ক্রয় করা হয়েছে।
একইভাবে আরও যেসব বই ক্রয় করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে—বিমল গুহর ‘বঙ্গবন্ধু ও অন্যন্যা’ কবিতা, কাজীর রোজীর ‘শেখ মুজিব বাঙালীর বাতিঘর’, অধ্যাপক আবু সাইয়িদের ‘একাত্তরে বন্দী মুজিব: পাকিস্তানের মৃত্যুযন্ত্রণা’, মো. শওকত আলীর ‘বঙ্গবন্ধুর সাংস্কৃতিক দর্শন’, কামাল চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: স্মৃতি ও অনুভবে’, নাসরীন মুস্তাফার ‘মুজিবের মেয়ে’, মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাকের ‘বঙ্গবন্ধু বিশ্বের রাজনৈতিক হত্যা’, গোলাম কুদ্দুছের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু ও বাঙালী সংস্কৃতি’, রফিকুর রশিদের ‘মধুমতি পাড়ের খোকা’, এ এফ এম হায়াতুল্লাহর ‘চেতনাগত ঐক্য বঙ্গবন্ধু ও নজরুল’, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা’, গোলাম কুদ্দুছের ‘ছোটদের জিজ্ঞাসা বঙ্গবন্ধুকে জানো’, হারুন অর রশিদের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব কী ও কেন’, এম আবদুল আমীনের ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন’, মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরীরর লেখা ‘শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ’, মিনার মনসুরের ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : স্বপ্ন ও স্বরূপ’, কামরুল হকের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু ও সংবাদপত্র : ছয়দফা থেকে গণঅভ্যুত্থান’, ড. আহসান কবীরের ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের কৃষি’, মফিদা আকবরের ‘ছোটদের প্রিয় শেখ হাসিনা’, কামাল চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি ও অনুভবে’, আবীর আহাদের ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন’, ড. মুনতাসীর মামুনের ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন জেল থেকে জেলে ১৯৫০-১৯৫৫’, সুরধ কুমার সরকারের লেখা ‘অনশ্বর বঙ্গবন্ধু’, মো. শাহেনুর মিয়ার ‘মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধু’, রেহানার সুলতানার লেখা ‘শেখ হাসিনা প্রগতি ও উন্নয়নের আলোকবর্তিকা’, সুব্রত বড়ুয়ার লেখা ‘টুঙ্গিপাড়ার সেই অদম্য কিশোর’, মো. জাকির হোসেনের ‘ছোটদের বঙ্গবন্ধু’, নজরুল ইসলামের লেখা ‘শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতার উদ্ধৃতি: বজ্রনিনাদ’, ফারুক হোসেনের লেখা ‘গল্পে বঙ্গবন্ধু’; ফরিদ কবিরের ‘মুজিব পিডিয়া (২য় খণ্ড)’, সারাফ আহমেদের লেখা ‘১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড: প্রবাসে বঙ্গবন্ধু কন্যার দুঃসহ দিন’, প্রফেসর ড. নাছির উদ্দিন জয়ের লেখা ‘শেখ ফজলুল হক মনি: জীবনী, রাজনীতি ও কলাম’, নুহ-উল আলম লেনিন ও অজয় দাশগুপ্তের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড : প্রতিবাদে প্রথম বছর’, অজিত কুমার সরকারের লেখা ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লব: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব থেকে শেখ হাসিনা’, নীলিমা ইব্রাহিমের ‘বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’, মহিবুল ইজদানী খান ডাবলুর লেখা ‘আমার বাবার স্মৃতিতে বঙ্গবন্ধু’, নাছিমা বেগমের লেখা ‘রেনু থেকে বঙ্গমাতা’, আবুল কাসেমের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়ন দর্শন জাতীয়করণ নীতি এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’, সমীর কুমার বিশ্বাসের ‘বঙ্গবন্ধুর সমবায় ভাবনা’, হারুণ অর রশিদের লেখা ‘আমার বাঁচার দাবি ৬ দফার ৫০ বছর’, দিবাদ্যুতি সরকারের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন’, অজয় দাশগুপ্তের ‘বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন কৌশল ও হরতাল’, জালাল ফিরোজের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর গণপরিষদ সংবিধান’, সুব্রত বড়ুয়ার লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন কথা’, খোরশেদ বাহারের ‘বঙ্গমাতা ইতিহাসের নিভৃত সৈনিক’ এবং কামাল চৌধুরীর ‘মহাকালের তর্জনী: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিবেদিত কবিতা’।
গত ১০ বছরে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কেনা বইয়ের তালিকা হাতে পেয়েছে কালবেলা। সেই তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রায় প্রতি বছর শেখ পরিবার কিংবা তাদের স্বজনদের নামে বিভিন্ন ধরনের বই ছাপানো হয়েছে। নামসর্বস্ব লেখকদের লেখা ওইসব বই বেশি দামে ক্রয় করে দেশের বিভিন্নপ্রান্তে পাঠাগারগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ‘২০২৩-২০২৪ অর্থবছরেও প্রায় ৮ হাজারেরও অধিক বই ক্রয় করা হয়েছে, যেগুলো শুধু শেখ পরিবার বন্দনা রয়েছে। এসব লেখকের অধিকাংশই নামসর্বস্ব। তবে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সেসব বই আর বিতরণ করা হয়নি। বহু পুস্তক গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের স্টোর রুমে ফেলে রাখা হয়েছে।
শেখ পরিবারের বন্দনা সংবলিত বই ক্রয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘যখন এসব বই কেনা হয়েছে তখন আমি এ মন্ত্রণালয়ে ছিলাম না। আগের সরকারের সময়ে ক্রয় করা বইয়ের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। এখন সেসব বই ক্রয় বা সরবরাহ করা হচ্ছে না।’
আরও পড়ুন
এনার্জি ড্রিংক বেশি পরিমাণে পান করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেটে ফিরলেন নাসির
পাচারের টাকায় পরিবারসহ বিদেশে মুস্তফা কামালের বিলাসী জীবন