পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকলাপ তাঁর সম্পদের প্রতি প্রবল আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে—আজ বৃহস্পতিবার তিনটি মামলার রায় ঘোষণার সময় আদালত এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। এই মামলাগুলোতে শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫–এর বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন পৃথকভাবে তিনটি মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রতিটি মামলায় শেখ হাসিনাকে মাত বছর করে কারাদণ্ড এবং তিনটি মামলায় মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রতিটি মামলায় এক লাখ টাকা করে মোট তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করলে তাঁকে অতিরিক্ত দেড় বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
রায় ঘোষণা করতে গিয়ে আদালত বলেন, পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ পেতে শেখ হাসিনা নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেননি। তবে বরাদ্দ পাওয়ার পর প্লট বুঝে নেওয়ার জন্য তিনি আবেদন করেন। রাজউকের বিধি অনুযায়ী প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন বাধ্যতামূলক হলেও আবেদন ছাড়াই তাঁকে প্লট দেওয়ার অনুমোদন দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আদালত আরও উল্লেখ করেন, ঢাকায় বাড়ি থাকা সত্ত্বেও প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে যে বাধ্যতামূলক হলফনামা দিতে হয়, সেখানে আসামিরা বিষয়টি উল্লেখ করেননি। এমনকি হলফনামা নোটারি পাবলিক বা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সত্যায়িত করার আইনগত বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি। বরাদ্দ পাওয়ার পর তিনি যে নতুন হলফনামা জমা দেন, সেটিও একইভাবে আইনবহির্ভূত। নিজের নামে প্লট পাওয়ার পর তিনি তাঁর ছেলে-মেয়ে, বোন শেখ রেহানা ও তাঁর সন্তানদের নামেও প্লট বরাদ্দের সুপারিশ করেন—যা তাঁর সম্পদের প্রতি লোভকে আরও স্পষ্ট করে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার স্বামীর নামে ১৯৭৩ সালে একটি প্লট বরাদ্দ ছিল। কিন্তু তিনি বিষয়টি গোপন রেখে নিজের নামে রাজধানীতে কোনো প্লট নেই—এমন মর্মে হলফনামা দেন। আদালত বলেন, একজন সাধারণ নাগরিক নন তিনি; তাঁর লিগ্যাল অ্যাডভাইজার, আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল—সবাইই ছিলেন, তারপরও তিনি আইনি পরামর্শ না নিয়ে আইন অমান্য করেছেন, যা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
বিচারক মন্তব্য করেন, দেশে দুর্নীতি প্রতিটি খাতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং দুর্নীতিবাজদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা প্লট না নিলে অন্য কোনো প্রকৃত আবেদনকারী এটি পেতেন। সে হিসেবে তিনি প্রতারণা করেছেন, আর এই রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
রায়ে আদালত আরও বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাই ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তাঁদের সাজা দেওয়া হয়েছে। তবে পারিতোষিক গ্রহণ ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অন্যান্য ধারায় তাঁদের খালাস দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, তিনটি মামলায় দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫(ক), ৪০৯ ধারায় অভিযোগ ছিল। পৃথক দুটি মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে সহায়তার অভিযোগে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আদালত আরও বলেন, শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দের পুরো ব্যবস্থা করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথি ধ্বংস বা গায়েব করেছেন বলে দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে। রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও বেআইনিভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে এসব বরাদ্দে সম্পৃক্ত ছিলেন—এ কারণে তাঁদেরও শাস্তি দেওয়া হয়।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
শ্রীলঙ্কায় বন্যা-ভূমিধসে অন্তত ৩২ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ১৪
জামায়াত নেতা ডা. তাহেরকে দেখতে হাসপাতালে মির্জা ফখরুল
সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ