গত বছরের জুলাই-অগাস্ট মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নামে দেশে থাকা সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায় ঘোষণা করেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়, যেগুলো হলো:
১. গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’ দেওয়া।
২. হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেওয়া।
৩. রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ।
৪. রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ।
৫. আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ।
প্রাথমিকভাবে মামলার একমাত্র আসামি ছিলেন শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে, গত ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও এ মামলায় আসামি করা হয়। সর্বশেষ, গত ১২ মে মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নাম যুক্ত করা হয়।
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করেন। ওই দিনই সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন এবং পরে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই ঘটনায় শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান, ফলে তার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। দুজনই বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। এই মামলায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গ্রেফতার একমাত্র আসামি।
পলাতক থাকায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল এই মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার। তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। তবে সাজার বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আত্মসমর্পণ করতে হবে বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করলে সে আপিলের সুযোগ পাবেন।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
বিশ্ব গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের খবর
হাসিনার মৃত্যুদণ্ড একটি মাইলফলক রায়: সালাহউদ্দিন আহমদ
হাসিনা কি আপিল করতে পারবেন, আইনে কী রয়েছে?