জেলা প্রতিনিধি, শেরপুর (ঝিনাইগাতী) :
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে গারো খ্রিষ্ঠান সম্প্রদায়ের লোকেরা খ্রিস্টরাজার মহাপর্ব ও ওয়ানগালা উৎসব পালন করেছে। রবিবার (২০ নভেম্বর) উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর গির্জা চত্বরে দিনব্যাপী ওই উৎসবের আয়োজন করা হয়। গারোদের বিশ্বাস, ‘মিসি সালজং’ বা শস্যদেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন। নতুন ফল ও ফসল ঘরে উঠবে। তার আগে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে শস্যদেবতার প্রতি। তাই শস্যদেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির জন্য নেচে-গেয়ে উদযাপন করা হয় ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব। একই সঙ্গে পরিবারে ভালোবাসা, মন্ডলীর আনন্দ, সব পরিবারের মঙ্গল কামনা করা হয় শস্যদেবতার কাছে।এ সম্প্রদায়ের লোকদের তথ্য মতে, গারোদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওয়ানগালা(নবান্ন)। উৎসব। ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন হয় এ উৎসবে। সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল তোলার পূবে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য ভোজন নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্য। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন। এ ছাড়া এটি ১০০ ঢোলের উৎসব নামেও পরিচিত। সবাই রঙবেরঙের পোশাক ও পাখির পারক মাথায় দিয়ে লম্বা ডিম্বাকৃতির ঢোলের তালে তালে নাচে। এই দিন হল বিনোদনের দিন। পুরুষ ও নারীরা দুইটি আলাদা সারি গঠন করে এবং নাচের তালে তালে এগিয়ে যান। সাথে থাকেমহিষের শিঙে বানানো এক ধরনের আদিম বাঁশির সুর। সকাল ৯টায় মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর গির্জা চত্বরে থক্কা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের সূচনা করেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর সহকারী পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার রব্রাট দিলীপ গোমেজ। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার বিপুল ডেভিড দাস। এতে বক্তব্য রাখেন, মরিয়মনগর প্যারিস কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওনারসন চাম্বুগং, আদিবাসী নেতা আলপন্স চিরান প্রমুখ। উৎসবে ক্রুশচত্বরে বাণী পাঠ (মান্দিতে), খামালকে খুথুব ও থক্কা প্রদান, জনগণকে থক্ক দেওয়া, পবিত্র খ্রিস্টযাগ, দান সংগ্রহ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রার্থনা করা হয়। গারো সম্প্রদায়ের কয়েকশ মানুষ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন। প্রার্থনা পরিচালনা করেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর সহকারী পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার রব্রাট দিলীপ গোমেজ। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গারোদের নিজস্ব ভাষায় গান ও নৃত্য পরিবেশিত হয়।
মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার বিপুল ডেভিড দাস জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর উদ্যোগে ওয়ানগালা উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। স্বপ্রাচীনকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই এর মুল লক্ষ্য। উৎসব ঘিরে ধর্মপল্লীর পাশে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা নিয়ে বসে মেলা।
আরও পড়ুন
বেরোবিতে দিনব্যাপী বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল, যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন তিন ঘণ্টা দেরিতে যাত্রা
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১ম বর্ষ শূন্য আসনে ভর্তি ও সাক্ষাৎকার ১৫ জানুয়ারি