জেলা প্রতিনিধি, শেরপুর : শেরপুরে আলু সংরক্ষণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। সরকারি দুটি ও বেসরকারি একটি হিমাগার থাকলেও এতে জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকরা বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন । এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের । হিমাগারে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাইরে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে শত শত আলুবাহী গাড়ি। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় , ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেরপুরে ৫ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৫ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৩ হাজার ৮১৬ টন। এবার উৎপাদন হয়েছে ৯৫ হাজার ৭০৬ টন। যাহা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৮৯০ টন বেশি।
শেরপুরে সরকারি দুটি হিমাগারে ৩ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব। কিন্তু এবারের উৎপাদনের তুলনায় এটি খুবই অপ্রতুল। জেলার একমাত্র বেসরকারি হিমাগার তাজ কোল্ড স্টোরেজে ১০ হাজার টন আলু সংরক্ষণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু হিমাগারে প্রচণ্ড চাপ পড়ায় কৃষকরা জায়গা পাচ্ছে না।
জায়গা না পেয়ে অনেক কৃষক ট্রলি ও ট্রাকে আলু বোঝাই করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। ফলে শেরপুর শহর থেকে উপজেলাগুলোর সংযোগ সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর এলাকার কৃষক পারভেজ বলেন, দুদিন অপেক্ষা করে হিমাগারে আলু রাখতে না পেরে ফিরে গেছেন তিনি । অভিযোগ করেন , সরকারি ব্লকে আলু আবাদ করেও সরকারি হিমাগারে আলু রাখতে পারেননি । এখন বেসরকারি হিমাগারেও জায়গা নেই।
নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁর জমিতে বীজ আলুর ব্লক হয়। তিনি স্থানীয় হিমাগারে আলু রাখার জায়গা পাননি। তাজ হিমাগারে এসেও জায়গা পাচ্ছেন না। অভিযোগ করেন বলেন , শত শত মণ আলু কোথায় রাখবেন তিনি। যদি আলু রাখতে না পারেন, বীজ আলু থাকবে না। এতে পরবর্তী বছর তাঁর আলু আবাদ করা সম্ভব হবে না।
শ্রীবরদী উপজেলার মাটিয়াকুড়া এলাকা থেকে দুই ট্রলি আলু নিয়ে এসেছেন কৃষক শরাফত আলী। তিনি বলেন, গত দুদিন ধরে আমি ৩০০ বস্তা আলু নিয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলু রাখছে না। তারা বলছে ভেতরে জায়গা নেই। আবার কেউ কেউ বলছে জায়গা আছে কম। এখন আমরা কী করব এ আলুগুলো নিয়ে। বাড়িতে নিয়ে গেলেও নষ্ট হবে।
জানা যায় , সরকারি হিমাগারে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের খরচ ৬ টাকা ৭৫ পয়সা। বেসরকারি তাজ কোল্ড স্টোরেজে ৫ টাকা ৮১ পয়সা খরচে প্রতি কেজি সংরক্ষণ করা যাচ্ছে। তবে সরকারি হিমাগারে জায়গার সংকট ও বেসরকারি হিমাগারে অতিরিক্ত চাপের কারণে অনেকেই আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না।
বেসরকারিভাবে স্থাপিত তাজ কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, ধারণ ক্ষমতার তুলনায় আলুর চাহিদা বেশি হওয়ায় অনেক কৃষককে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। আর বেশি আলু উৎপাদন হওয়ায় হিমাগারে সংরক্ষণের চাপ কিছুটা বেড়েছে। কৃষকরা স্বল্প মেয়াদে বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন, তেমন ক্ষতি হবে না। তবে দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে রাখা জরুরি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা করছি। তিনি আরও বলেন, জেলায় প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়। সবজির জন্য একটি হিমাগার নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে কৃষকদের দুর্ভোগ কমে যাবে।
বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক বিজয় কুমার দত্ত বলেন, শেরপুরে একটি বেসরকারি হিমাগার রয়েছে। সেটি বিসিকের ভেতরে। আমরা প্রতিনিয়ত উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নতুন হিমাগার স্থাপন করতে আগ্রহী হলে, আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।
আরও পড়ুন
শেরপুরে মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী গ্রেপ্তার
দীর্ঘ ৫৭ বছর পর কাঙ্ক্ষিত প্লান্টের কাজ শুরু হলেও মেডিকেল মোড় এলাকাবাসীর বিরোধীতার ফলে বন্ধ হয়ে গেল সকল কার্যক্রম
পাবনায় নসিমন-সিএনজি সংঘর্ষে বাবা-ছেলে নিহত