বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির প্রাক্তন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন প্রতিকূলতা ও সংগ্রামে ভরা ছিল। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার ভোর ৬টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে খালেদা জিয়া ৪১ বছর বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে সক্রিয় ছিলেন।
১৯৮৪ সালের ১০ মে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি এবং মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দলের নেতৃত্ব দেন। এর পাশাপাশি তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় স্বামী জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর। ১৯৮২ সালে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর ১৯৮৩ সালে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন এবং ১৯৮৪ সালে চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তার নেতৃত্বে বিএনপি ১৯৮৩ সালে সাত-দলীয় জোট গঠন করে জেনারেল এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম শুরু করে।
রাজনৈতিক জীবনে বহুবার বাধা-বিপত্তি ও কারাবন্দির মধ্যেও খালেদা জিয়া দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেপ্তার হন এবং ৩৭২ দিন কারাবন্দি থাকার পর ২০০৮ সালে মুক্তি পান। ২০১৮ সালে দুদকের মামলায় পুনরায় কারাগারে যান এবং ২০২০ সালে ছয় মাসের জন্য শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান। ২০২৫ সালের আগস্টে রাষ্ট্রপতির দণ্ডমুক্তি লাভ করেন।
খালেদা জিয়া কখনও নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বিশেষ করে ১৯৯১ সালে সংবিধানে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। তার দুই সন্তান—তারেক রহমান পিনো ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো।
রাজনীতির ৪১ বছর দীর্ঘ যাত্রা, নির্বাচনী জয়, কারাবন্দি ও ব্যক্তিগত দুঃখ-সঙ্কটের মধ্যেও খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
খালেদা জিয়ার জানাজা: মোতায়েন থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য
গৃহবধূ থেকে আপসহীন নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়ার জানাজায় যোগ দেবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী