December 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, November 26th, 2024, 7:31 pm

সংস্কার নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিরোধ নেই : তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সংস্কার আগে, না নির্বাচন আগে—এই ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, শুধু একটি নির্বাচনের জন্যই গণ-অভ্যুত্থান হয়নি, এটি যেমন এক ধরনের বাস্তবতা, তেমনি গত দেড় দশকে আরেকটি নির্মম বাস্তবতা ছিল জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন রেখে নির্বাচন ছাড়াই বারবার সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম। জনগণকে তাদের সব রাজনৈতিক ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল। এ কারণে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন অবশ্যই একটি মুখ্য বিষয়।

গতকাল সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

তারেক রহমান বলেন, সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার আগে, না নির্বাচন আগে—যারা এ ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন।

বিএনপি মনে করে, সংস্কার কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। সরকার কিংবা সরকারের বাইরে সবার মনে রাখা দরকার, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত উত্তরণ ছাড়া পুথিগত সংস্কার অনেকটাই অকার্যকর। সংস্কার কার্যক্রমকে কার্যকর করতে চাইলে সবার আগে জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা লাঘবের ব্যবস্থা করা দরকার। নইলে সংস্কার কার্যক্রমের কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, সরকারে কিংবা সরকারের বাইরে প্রত্যেকের মনে রাখা দরকার, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত উত্তরণ ছাড়া পুথিগত সংস্কার অনেকটা অকার্যকর।

বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর গুম-হত্যা-নির্যাতনের কথা তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শহীদদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি গণতান্ত্রিক মানবিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা সবার দায়িত্ব। একই সঙ্গে পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসরা যাতে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করাও সবার কর্তব্য। এ জন্য যথাযথ আইনগত ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন পলাতক মাফিয়াদের পুনর্বাসন ঠেকাতে তাদের একদিকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন, অপরদিকে তাদের অবশ্যই জনগণের রাজনৈতিক বিচারে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরিস্থিতিতে ফেলতে হবে। যদি এই দুইয়ের সমন্বয় ঘটাতে পারি; আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, গণবিরোধী বিতাড়িত অপশক্তি বাংলাদেশে রাজনীতিতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হবে না।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের আকাঙ্ক্ষা একটি বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা—এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা আমাদের দায়িত্ব। একই সঙ্গে পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসররা যাতে রাজনীতিতে আর পুনর্বাসিত হতে না পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করাও কিন্তু আমাদের কর্তব্য। এ জন্যই যথাযথ আইনগত এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ধাপ’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তাদের দোসরচক্র নানা কৌশলে আবারও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার অপচেষ্টা শুরু করেছে। অপশক্তি দেশের ভেতরে এবং বাইরে থেকে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত। তবে সবাই সতর্ক থাকলে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, খুনি, লুটেরা, মাফিয়া এবং স্বৈরাচারী রাজনৈতিক অপশক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে হলে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। ভোটের অধিকারের সুযোগ পেলে জনগণ তাদের রাজনীতি ক্ষমতা প্রয়োগ করে গণহত্যাকারী খুনি, লুটেরা, পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় করে দিতে সক্ষম হবে। বিএনপি মনে করে, সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান অবশ্যই প্রয়োজন।

তারেক রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের আগের স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ কিংবা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে দেড় দশকের বাংলাদেশ বর্তমান প্রজন্ম দেখিয়ে দিয়েছে, আওয়ামী লীগ আর স্বাধীনতা একসঙ্গে যায় না। আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একে অপরের শত্রু।

বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের সংস্কার প্রস্তাবে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি অভিজ্ঞ মিডিয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি মিডিয়া কমিশনের কথা বলা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছি, সেখানে সাগর-রুনির বিচারের ব্যাপারে রাষ্ট্র উদাসীন থাকবে না, নিশ্চিত থাকবে মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা। এই লক্ষ্য অর্জনে আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’

সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভিন্নমত অথবা দ্বিমতকে শত্রুতা কিংবা নির্লজ্জ দলাদলিতে পরিণত করলে কী পরিণতি হতে পারে গত দেড় দশকে দেশের জনগণ তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। পলাতক স্বৈরাচারের সঙ্গে তার অবৈধ মন্ত্রী, এমপি, বুদ্ধিজীবী বা বিচারপতি, বায়তুল মোকাররমের খতিব, প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা কতিপয় সাংবাদিকের পলায়নের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে, অবৈধ রাষ্ট্রশক্তি নয়; বরং শেষ পর্যন্ত জনগণের রায়ই কিন্তু চূড়ান্ত।’

ফ্যাসিবাদী আমলে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন সংবাদপত্রের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে দিদারুল আলম ও সাঈদ খানের যৌথ পরিচালনায় আলোচনাসভায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর দক্ষিণের জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ, বর্তমান মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ইউনিয়নের সাবেক নেতা এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।