August 17, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, August 15th, 2025, 8:21 pm

সবার চোখের জলে মমতাময়ী একজন সফল প্রধান শিক্ষকের রাজকীয় বিদায়

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি:

শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় কমিটির সদস্য, অভিভাবক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও এলাকার সর্বস্তরের মানুষ সবার চখের জলে মমতাময়ী একজন সফল প্রধান শিক্ষককে রাজকীয় বিদায় দেওয়া হয়েছে। বিদায়ী শিক্ষক নিজের কর্মস্থলের স্মৃতি চারণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার মানুষের ভালবাসার কথা বলতে কাঁদলেন অঝোরে। সবার চোখের জলে বিদায়ী অনুষ্ঠানস্থলের বাতাস যেন ভারী হয়ে আসছিলো। গঙ্গাচড়া উপজেলার মধ্যে এমন বিদায় বিরল হয়ে থাকবে। মোছা. নাসরিন পারভীন ১৯৯০ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি  গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ৫ সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৯৫ সালে কলাগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। সেখানেই দীর্ঘ ৩০ বছর শিক্ষকতা করা নাসরিন পারভিন। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান শিক্ষকের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে রাজকীয় বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সহকর্মীরা ও অভিভাবকবৃন্দ। তিনি দীর্ঘ ৩৫ বছর শিক্ষকতা পেশা অতিবাহিতের কলাগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩০ বছর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অবসরগ্রহণ করলেন। তিনি একজন আদর্শবান ও সাদা মনের মানুষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত লাভ করেন। শিশু শিক্ষার্থীদের মমতায় পাঠদান দিতেন, প্রধান শিক্ষক হলেও সহকারী শিক্ষকদের সাথে আচরণ ছিলো সহকর্মীরমত। কমিটির সদস্য, অভিভাবক ও এলাকার মানুষের সব সময় সহযোগিতা ও পরামর্শ চাইতেন শিক্ষার মানোন্নয়নে, তাদের সাথে হাস্যজ্জলে বলতেন কথা। তাঁর অনেক শিক্ষার্থী হয়েছে সফল। নিরহংকার ও সাদা মনের আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে সবার হৃদয়ে জায়গা করে নেন। শুধু শিক্ষার্থী, অভিভাবক নয় শিক্ষা বিভাগের উদ্ধর্তনের কাছেও সফল মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তাই প্রিয় শিক্ষকের বিদায়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা, সহকর্মী, অভিভাবক ও এলাকার মানুষজন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষককে ফুল দিয়ে বরণ করে স্কুলে নিয়ে আসেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তারপর মঞ্চে উঠিয়ে সংবর্ধনা দেয়া হয়। চারপাশের পরিবেশ যেন ভারি হয়ে উঠে। শিক্ষাগুরুর ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করেন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, সহকর্মী, অভিভাবক, কমিটির সদস্যরা। স্মৃতিচারণে বাদ জায়নি এলাকার নারী-পুরুষ। স্মৃতি চারণ যেন সবার চখের জলে ভেসে উঠে।

প্রাক্তন শিক্ষার্থী মমিনুর ইসলাম বাবু বলেন, তিনি ছিলেন আলোর পথপ্রদর্শক ও সাদা মনের আদর্শ শিক্ষক, যার সততা, ত্যাগ ও নেতৃত্ব আজীবন প্রেরণা হয়ে থাকবে।

৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন বলে, ম্যাডাম আমাদের পড়াশোনার জন্য শাসন করতো। আবার পড়াশোনায় ভালো করলে মায়ের মত আদর করতো। ম্যাডাম চলে যাওয়ায় আমাদের কষ্ট হচ্ছে।

বিদায়ী অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, তিনি আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন। তার দেওয়া পথে আমরা অনেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, স্যারের স্মৃতি ভোলার নয়। তিনি আমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল স্থায়ী হয়ে থাকবেন। তিনি চিন্তায় ও মননে ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক বা আঞ্চলিক দলাদলির ঊর্ধ্বে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।

বিদায়ী সংবর্ধনায় নাসরিন পারভীন দীর্ঘ কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করেন। ও ভবিষ্যতে শিক্ষাকার্যক্রম ও শিক্ষা উন্নয়নে প্রিয় শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।

বিদায়ী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও কলাগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি রুহুল আমিন প্রধানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শায়লা জেসমিন সাঈদ, উপজেলা প্রাইমারি এডুকেশন রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর সুফিয়া কামাল। অত্র প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক সফিয়ার মো. জাকিউল আলম স্বপন এর সঞ্চালনায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম চাঁদ, অত্র প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, সহকারী শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে লাল গালিচা সম্মাননা ও শিক্ষার্থীদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও বিদ্যালয়ের কাব সদস্যদের গার্ড অব অনারের মাধ্যমে এবং ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িতে বিদায় জানানো হয়। এসময় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিদায়ী শিক্ষক কান্নায় ভেঙে পড়েন।

 

আব্দুল বারী স্বপন