সাতক্ষীরা ব্যুরো:
যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর খুলনার অফিস জিম্মি দুই কর্মচারীর হাতে। নতুন কোম্পানি নিবন্ধন, রির্টার্ণ প্রদান, শেয়ার পরিবর্তণ, মর্টগেজ বা কোম্পানি সংক্রান্ত কোন কাজ নিয়ে গেলে তখন কাজ ভাগিয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় যুক্ত হন ওই দুই কর্মচারী।
সাথে যুক্ত হন আউট সোর্সিং পরিচ্ছন্নতা কর্মীও। কে কিভাবে ভাগিয়ে নেবে কাজ। হাই প্রোফাইল ব্যক্তিরা হন তাদের কাছে হেনস্তের শিকার। ভুক্তভোগিরা বলছেন, বিভাগীয় এমন একটি অফিসে কোন কর্মকর্তা না থাকায় তারা যা ইচ্ছা তাই করছে। ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখে কিন্তু এই অফিস যেন তাদের ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠান।
জানাযায়, যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর খুলনার অফিসে একজন সহকারী নিবন্ধক রয়েছেন অতিরিক্ত দায়িত্বে। ফলে তিনি ঢাকা থেকে মাসে ৩ – ৪ দিন খুলনা অফিসে বসেন। বাকী সময়টাতে কখনো কর্মকর্তা আবার কখনো কনসালট্যান্ট বনে যান কম্পিউটার কাম মুদ্রাক্ষরিক তাজমিন নাহার ও সংযুক্তিতে থাকা মো. মুনিরুল ইসলাম। দুজনই একই পদে থাকায় কেউ কাউকে মান্য করে কথা বলেন না।
আগতদের সামনেও তাদের অশালিন আচারণ করতে দেখা যায়। সুত্র জানায়, মো. মনিরুল ইসলাম ওরফে মনিরের নামে সংস্থাটির মুল দপ্তরে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে বিভাগীয় মামলাও। খুলনা অফিসের একজন স্টাফকে লাঞ্চিত করার অভিযোগও রয়েছে তার।
একই পদে খুলনায় রয়েছেন আরেক জন। তারপরও পতিত সরকারের আমলে তাকে অদৃশ্য কারণে খুলনায় তার শশুরবাড়ীর এলাকায় সংযুক্তিতে দেওয়া হয়। চাউর উঠেছে মনিরুল ইসলাম মনির এখন খোলস বদলাতে ব্যস্ত। এখন তিনি পরিচয় দেন তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়।
অভিযোগ রয়েছে, হাই প্রোফাইল কোন ব্যাক্তিকেও তিনি সামান্যতম সম্মান দেখান না। আরজেএসসির কোন কাজ নিয়ে গেলে তিনি ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ডকুমেন্ট ও টাকা রেখে দেন। সরকারি ফি ছাড়াও তিনি নেন অতিরিক্ত কনসালটেন্সি ফি এবং ওই দপ্তরের প্রধান নিবন্ধক থেকে শুরু করে সকল টেবিলের পৃথক পৃথক খরচ।
পরে কোম্পানি নিবন্ধন হয়ে গেলে সরকারি ওই অফিস থেকে সব প্রিন্ট দিয়ে দেন। তখন নেন অফিস পরিচ্ছন্নকর্মীর (আউটসোর্সিং) জন্য আরো টাকা। এ ঘটনা শুধু এক দিনের নয়, এভাবেই চলছে ছাত্র জনতার স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশে খুলনার যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর। ভুক্তভোগিরা বলছে, ৩৬ জুলাই দেশ থেকে সৈরাচার চলেগেছে কিন্তু তার প্রকৃত আদর্শ্যের দোসররা রয়ে গেছে। তারা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে অন্তরায় হয়ে দাড়াচ্ছে। নষ্ট করছে সরকারের সুনাম।
যশোর থেকে খুলনার ওই অফিসে আসা মো. আবির জানান, আমি আমার অফিসের আরেকটি নতুন কোম্পানি করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখা হয় শামীম নামের একজনের সাথে। তিনি আমাকে জানান, তিনি ওই অফিসের অফিস সহকারি। খুলনার কয়েকটি কনসালট্যান্সি ফার্মের সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে।
ফলে তিনিই আমার কাজ করে দিতে পারবেন বলে জানান। এরিমধ্যে চশমা পরা একজন সেখানে আসেন। তখন শামীম সাহেব আমাকে তার এলাকার ভাই বলে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি আমাকে তার কক্ষে নিয়ে যান। আর শামীম সাহেবকে বলেন চা দিতে। জানতে পারি ওই ব্যক্তির নাম মনিরুল ইসলাম মনির। তিনি আমার কথা শুনে ফোন নম্বর দেন। আস্তে আস্তে বলেন, রাতে ফোন করবেন। আপনার কাজ আমি করে দেব। তখন আমি বললাম, আমাদের ফার্মের নিজস্ব ল’ইয়ার আছেন। তিনিই সব করবেন। তখন মনির সাহেব আমাকে বলেন, কিছুই লাগবে না। আমি অল্প টাকায় সব করে দেব। আপনি শুধু প্রধান নিবন্ধক আর সহকারি নিবন্ধক স্যারের কিছু টাকা দিয়েন। আর ওই পরিচ্ছন্নকর্মী শামীমকে এক-দুশ’ টাকা দিয়েন। আমি তার ফোন নম্বর নিয়ে চলে আসার সময় দেখি মনির সাহেবের নেপ্লেটটি ঢেকে রাখা। সেখানে তার পদবী দেওয়া কম্পিউটার অপারেটর।
সাতক্ষীরা থেকে মোঃ আরিফ হোসেন জানান, আমাদের কোম্পানির এমডি সাহেবকে সেদিন দুপুরে ফোন করেন খুলনা আরজেএসসি অফিসের মনির ভাই। এমডি সাহেব আরজেএসসির কথা শুনে ফোনটি আমাকে দেন। তখন মনির সাহেব আমাকে বলেন, আমি আবার খুলনা অফিসে আসছি। আপনারা কোম্পানির রিটার্ণ দেন না কেন? আমি বললাম দেব খুব শিঘ্রই। আমাদের কনসালট্যান্ট দাদার সাথে কথা হয়েছে। তিনি চলতি মাসের মধ্যে সব ক্লিয়ার করে দেবে। তখন মনির সাহেব আমাকে বলেন, কারোর লাগবে না। আপনি অডিট রিপোর্ট নিয়ে আসেন আমি সব কাজ করে দেবানি। আমি আবারও বললাম, ব্যাংকে টাকা জামা দিতে হবে না? তিনি বললেন, রিটার্নের কাজসহ সব কাজ আমি করে দিবানি, আপনার চিন্তা করা লাগবেনা।
RJSC অফিসের কম্পিউটার অপারেটর মনিরুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন।
আরও পড়ুন
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টারে তালা ঝুলিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
বিভাগীয় মামলায় আক্কেলপুর থানার ওসির পদাবনতি
রংপুরে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত