নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারের নানা উদ্যোগেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে না। অথচ প্রবাস আয় বা রেমিট্যান্সই হচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির অন্যতম বৃহৎ উৎস। রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকার প্রণোদনাসহ নানা ছাড় দিচ্ছে। কিন্তু তাতেও আশানুরূপ সুফল মিলছে না। বাড়ছে না রেমিট্যান্সপ্রবাহ। এমনকি ঈদ ঘিরেও দেশে প্রত্যাশিত প্রবাস দেশে আয় আসছে না। দেশে চলতি জুনের প্রথম ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৬ কোটি ৪১ লাখ (৯৬৪ মিলিয়ন) ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৯৩ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ৮ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। চলমান এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাসের শেষে প্রবাস আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে বৈধ চ্যানেলের চেয়ে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স বেশি আসছে। কারণ ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি। বর্তমানে এক ডলার রেমিট্যান্সের বিপরীতে ব্যাংক ৯৩-৯৪ টাকা দিচ্ছে। তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা। সব মিলিয়ে গ্রাহক ৯৫ থেকে ৯৬ টাকা পাচ্ছে। কিন্তু খোলাবাজারে ডলার ৯৭ থেকে ৯৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে ভিন্ন পথে রেমিট্যান্স এলে বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কম। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারের ডলারের রেটের ব্যবধান না কমলে রেমিট্যান্স বাড়ানো কঠিন হবে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে অবাধে যতো খুশি ততো রেমিট্যান্স পাঠানোর পথ সহজ করে দিয়ে গত ২৩ মে সার্কুলার জারি করে। ফলে এখন ৫ হাজার ডলারের ওপর বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স এলেও প্রবাসীরা কোনো কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা পাচ্ছে। আগে ৫ হাজার ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে বৈধ কাগজপত্র জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল।
সূত্র জানায়, জুনের প্রথম ১৬ দিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫১ লাখ মার্কিন ডলার। তাছাড়া বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে এক কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৯১৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ এক লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার, আগস্টে ১৮১ কোটি, সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ, অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ, নভেম্বরে ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ, ডিসেম্বরে ১৬৩ কোটি এবং জানুয়ারিতে এসেছে ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে আসে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ, মার্চে ১৮৫ কোটি ৯৭ লাখ, এপ্রিলে ২০১ কোটি ৮ লাখ এবং মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার এসেছে। রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনা করে মাসের শুরুতে মার্কিন ডলারের রেট বাণিজ্যিক ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো এখন প্রতিযোগিতামূলক দর নির্ধারণ করছে।
এদিকে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, সব সময় ঈদের আগে বেশি রেমিট্যান্স আসে। সামনে কোরবানির ঈদ। আশা করা যায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।
আরও পড়ুন
চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার দিনে সৃষ্ট যানজটে বিএনপির দুঃখ প্রকাশ
মাসুদা ভাট্টির বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের প্রতিবেদন
‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে আ.লীগের প্রেতাত্মারা এখনো বহাল’