December 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, December 24th, 2024, 6:44 pm

সরকার পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্যের হার খুবই কম: মান্না

রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে সমাবেশে বক্তৃতা করছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। আজ ২৪ ডিসেম্বর:

নিজস্ব প্রতিবেদক:
অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সাড়ে চার মাস যথেষ্ট সময় উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, রাষ্ট্র হিসেবে, সরকার পরিচালনার অংশ হিসেবে এই সরকারের সাফল্যের হার খুবই কম। পুলিশ বাহিনী এখনো সক্রিয় নয়। প্রশাসন অন্তর্বর্তী সরকারের কথায় চলছে না। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়নি। এই সরকার কেবল স্বপ্নের কথা বলছে। আর মানুষ এই স্বপ্ন নিয়ে এখন দুঃস্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ মিছিলের আগে আয়োজিত সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এ কথাগুলো বলেন। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ জনদুর্ভোগ কমানোর দাবিতে এই কর্মসূচির আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।

সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের পতনের পর মানুষ একটা নিরাপদ দেশ চেয়েছিল। একটা দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন চেয়েছিল। মানুষ মনে করেছিল, এখন যা কিছু ঘটবে, কোনোটাই তাদের কষ্টের কারণ হবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মান্না বলেন, ‘আপনারা যতই বলেন আগের পরিস্থিতি বদলে দিতে পেরেছেন, আসলে এ রকম কিছু করতে পারেননি। নদীর মধ্যে লঞ্চে ডাকাতি, হত্যা, জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়া—আপনারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। মানুষ এখন প্রশ্ন করে, হচ্ছেটা কী। এই সরকার কি পারবে?’

দেশে একের পর এক সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘এসব সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে না। আমরা উদ্বিগ্ন, সেই উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্যই এসেছি। আমরা আইনশৃঙ্খলার কোনো উন্নতি দেখি না। মামলাবাজি-চাঁদাবাজি কোনো কিছুই বন্ধ করতে পারেননি। কেন? আপনারা কোন জায়গায় দুর্বল?’

পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়নি উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এ রকম দুর্বল সরকার আমরা আগে দেখিনি। আমরা আপনাদের সতর্ক করছি, কোনো আলটিমেটাম দিচ্ছি না। হুঁশিয়ার করছি, হুমকি দিচ্ছি না। যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। আমরা এখনো আপনাদের সহযোগী হিসেবে থাকতে চাই।’

সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের মুখপাত্র ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘সরকার যে ভালোভাবে দেশ চালাতে পারছে না, দেশ পরিচালনায় তারা যে ব্যর্থ—এটা পরিষ্কার। মানুষের জানমাল এখনো নিরাপদ হয়নি। বাজার পরিস্থিতি এখনো বেসামাল। চার মাসে সরকার এসব ঠিক করতে না পারলে বাকি কাজ কীভাবে করবে।

মানুষ এখনো সরকারকে সহ্য করছে উল্লেখ করে সাইফুল হক বলেন, আগের সরকার ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে নিতে মানুষকে আগুনে নিক্ষেপ করেছে। মানুষের ধৈর্যের পরীক্ষা আর না নিতে এই সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। তিনি বলেন, সংস্কারের আগে দেশের ৮০ ভাগ মানুষ পেটে খাবার চায়। নিরাপত্তা চায়। বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা উচিত।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, দ্রব্যমূল্য যদি কমাতে না পারেন, মানুষ যদি রাস্তায় নেমে যায়, তাহলে কী অবস্থা হবে। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ফ্যাসিস্টদের বিচার করা; কিন্তু গত চার মাসে এসব বিষয়ে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

সমাবেশ শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন। মিছিলটি পুরানা পল্টন থেকে শুরু করে প্রেসক্লাব হয়ে আবার আগের জায়গায় এসে শেষ হয়। মিছিলে ‘সিন্ডিকেটের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘চাঁদাবাজের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘চাল ডাল তেলের দাম, কমাতে হবে কমিয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।