January 15, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, January 15th, 2025, 7:09 pm

সর্বপ্রথম ঈমান গ্রহণকারী ব্যক্তিরা ছিলেন মহানবী (সা.)-এর পরিবার ও তাঁর ঘনিষ্ঠজন

সংগৃহীত ছবি

ইসলাম ডেস্ক:
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সেসব সাহাবির প্রশংসা করেছেন, যাঁরা ঈমান গ্রহণে অগ্রগামী ছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারা তাতে সন্তুষ্ট; তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এটা মহাসাফল্য।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০০)

সিরাত গবেষক ও ঐতিহাসিকরা মোটামুটি একমত যে সর্বপ্রথম ঈমান গ্রহণকারী ব্যক্তিরা ছিলেন মহানবী (সা.)-এর পরিবার ও তাঁর ঘনিষ্ঠজন।

আর এটা খুবই স্বাভাবিক যে যাঁরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ছিলেন, তিনি সর্বপ্রথম তাঁদের কাছেই ইসলামের দাওয়াত পেশ করেছিলেন। এ দলের মধ্যে ছিলেন পরিবারের লোকজন, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধব। কোনো সন্দেহ নেই যে প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি সেসব ব্যক্তিকে সত্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, যাঁদের মুখমণ্ডলে কল্যাণ ও সত্য-প্রীতির আভা প্রস্ফুটিত ছিল, যাঁরা নবীজি (সা.)-এর সততা, সত্যবাদিতা, চারিত্রিক স্বচ্ছতা ও বংশীয় মর্যাদা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। এ কারণেই তাঁরা তাঁর প্রতি এত বেশি অনুরক্ত ও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন যে প্রথম আহ্বানেই সাড়া দিয়ে তাঁরা ইসলাম কবুল করেন।

ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী হওয়ার এক দুর্লভ গৌরব অর্জন করেন। এই তালিকার শীর্ষে ছিলেন উম্মুল মুমিনিন খাদিজাতুল কুবরা (রা.), তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস জায়েদ বিন হারিসা বিন শুরাহবিল কালবি (রা.), মহানবী (সা.)-এর চাচাতো ভাই আলী ইবনু আবি তালিব (রা.), যিনি তখনো তাঁর লালন-পালনাধীন শিশু ছিলেন এবং তাঁর হিজরতের সঙ্গী আবু বকর সিদ্দিক (রা.)। এই মোবারক কাফেলার সবাই প্রাথমিক দিনগুলোতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কোনো প্রকার সন্দেহ, সংশয় ও দ্বিধা ছাড়াই।

অতঃপর আবু বকর (রা.) ইসলামের প্রচারে তৎপর হয়ে ওঠেন।

তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়, কোমল স্বভাব, পছন্দনীয় আচার-আচরণের অধিকারী, সচ্চরিত্র ও উদার হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর দানশীলতা, দূরদর্শিতা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সৎ সাহচর্যের কারণে তাঁর কাছে মানুষের সমাগম সর্বদা লেগেই থাকত। মানুষ তাঁর সান্নিধ্যকে নিজেদের জন্য সৌভাগ্যের মনে করত। তিনি তাঁর কাছে আগমন ও প্রত্যাগমনকারী এবং আশপাশে বসবাসকারীদের মধ্যে যাঁকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করতেন তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। তাঁর এই আন্তরিক প্রচেষ্টায় উসমান (রা.), জোবায়ের (রা.), আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.), সাআদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) এবং তালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রা.)-এর মতো ব্যক্তিরা ইসলাম গ্রহণ করেন।

এই মহাসম্মানিত ব্যক্তিরাই হচ্ছেন প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী মোবারক কাফেলা। তাঁদের পরে প্রাথমিক অবস্থায় আরো যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন বিলাল হাবশি (রা.) ছিলেন তাঁদের একজন।

এরপর ইসলাম গ্রহণ করেন বনু হারিস বিন ফিহর গোত্রের আবু উবায়দা আমির ইবনুল জাররাহ (রা.), আবু সালামা বিন আবদুল আসাদ মাখজুমি (রা.), আরকাম ইবনে আবিল আরকাম (রা.), উসমান বিন মাজউন জুমাহি (রা.) এবং তাঁর দুই ভাই কুদামা ও আবদুল্লাহ, উবায়দা বিন হারিস বিন মুত্তালিব, সায়িদ বিন জায়েদ এবং তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ ওমর (রা.)-এর বোন ফাতেমা বিনতে খাত্তাব, খাব্বাব বিন আরাত তামিমি (রা.), জাফর বিন আবি তালিব ও তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস, খালিদ বিন সায়িদ বিন আস আল উমাবি ও তাঁর স্ত্রী আমিনা বিনতে খালাফ। অতঃপর তাঁর ভাই আমর বিন সায়িদ বিন আস, হাতিব বিন হারিস জুমাহি ও তাঁর স্ত্রী ফাতিমা বিনতে মুখাল্লিল এবং তাঁর ভাই খাত্তাব বিন হারিস, তাঁর স্ত্রী ফুকাইহা বিনতে ইয়াসার ও তাঁর ভাই মা’মার বিন হারিস, মুত্তালিব বিন আজহার জুহরি এবং তাঁর স্ত্রী রামলা বিনতে আবু আউফ, নাঈম বিন আবদুল্লাহ বিন নুহাম আদবি (রা.)। তাঁদের সবাই কুরাইশ ও কুরাইশের বিভিন্ন শাখা গোত্রের সন্তান ছিলেন।

কুরাইশের বাইরে অন্য গোত্র থেকে প্রাথমিক অবস্থায় ইসলাম গ্রহণকারীরা হলেন আবদুল্লাহ বিন মাসউদ, মাসউদ বিন রাবিআ, আবদুল্লাহ বিন জাহাশ আসাদি ও তাঁর ভাই আহমাদ বিন জাহশ, বিলাল বিন রিবাহ হাবশি, সুহাইব বিন সিনান রুমি, আম্মার বিন ইয়াসার আনসি, তাঁর পিতা ইয়াসার ও তাঁর মাতা সুমাইয়া এবং আমির বিন ফুহাইরা (রা.)। এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ের মুসলমান নারীদের মধ্যে আছেন উম্মু আইমান বারাকাত হাবশি, উম্মুল ফদল লুবাবাতুল কুবরা বিনতে হারিস হিলালিয়া (আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিবের স্ত্রী), আসমা বিনতে আবু বকর সিদ্দিক (রা.)।

উল্লিখিত ব্যক্তিরা প্রথম পর্যায়ের ইসলাম গ্রহণকারী হিসেবে প্রসিদ্ধ। বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান ও গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে প্রথম পর্যায়ের ইসলাম গ্রহণকারীর গুণে গুণান্বিতদের সংখ্যা পুরুষ-নারী মিলে ৩০০ জন। তবে এটা অকাট্যভাবে জানা যায়নি যে তাঁরা সবাই প্রকাশ্যে দাওয়াত চালু হওয়ার আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, নাকি ইসলামের দাওয়াত প্রকাশ্যভাবে চালু হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কেই কেউ ইসলাম গ্রহণে বিলম্ব করেছিলেন।

উল্লিখিত ব্যক্তিদের মধ্যে জায়েদ বিন হারিসা (রা.) যুদ্ধে বন্দি হয়ে দাসে পরিণত হন। পরে খাদিজা (রা.) তাঁর মালিক হন এবং তাঁকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সেবায় নিযুক্ত করেন। এরপর তাঁর পিতা ও চাচা তাঁকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য মক্কায় আসেন। কিন্তু তিনি বাড়ি না গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে থাকাকেই বেশি পছন্দ করেন। প্রচলিত প্রথানুযায়ী তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে পোষ্য পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। এ জন্য তাঁকে যায়েদ বিন মুহাম্মাদ (সা.) বলে ডাকা হতো। পরে সে প্রথা শরিয়তে রহিত হয়।