August 14, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, August 14th, 2025, 6:25 pm

সাদা পাথর লুটপাট বন্ধে নড়েচড়ে উঠেছে প্রশাসন: ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার

সিলেট অফিস:

অবশেষে সাদাপাথরের লুটপাট বন্ধে নড়েচড়ে উঠেছে সিলেটের প্রশাসন। পাথর লুটের ঘটনায় ইতিমধ্যে সিলেটের দুইটি পর্যটন স্পট কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদা পাথর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) পর্যন্ত অভিযানে অভিযানে প্রায় ১৩০টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭০টি ট্রাকে থাকা প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে নদীতে পুনরায় ফেলার প্রক্রিয়া চলছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা বিষয়টি গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, উদ্ধারকৃত পাথরের বড় অংশ ধলাই নদীতে ফেরত দেওয়ার কাজ চলছে, যাতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়। একই সঙ্গে রাতের মধ্যেই পাথর লুটের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও পরিবেশ বাঁচাতে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন, মজুত বা পাচারে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। চেকপোস্টে গতরাত থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩০টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এ সময় প্রায় ৭০টি গাড়িতে সাদাপাথর এলাকার পাথর শনাক্ত হলে সেগুলো পুনরায় প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে, সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রে ব্যাপক লুটপাটের পর জেলা প্রশাসন গত ১৩ আগস্ট একটি ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানায়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসন সিংহকে প্রধান করে গঠিত কমিটি পাথর লুটের ঘটনা অনুসন্ধান করে। ১৭ আগস্টের মধ্যে এ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে সাদাপাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।

প্রশাসনের জরুরি বৈঠক শেষে রাত ১২টার পর অভিযানে নামে জেলা প্রশাসন ও যৌথবাহিনী। সিলেট নগরী ও সাদাপাথর এলাকায় রাতভর অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে সাদাপাথরের লুট করা স্তুপকৃত পাথর জব্দ করা হয়। পরে সেগুলো সাদাপাথর এলাকায় নিয়ে ফের প্রতিস্থাপন করা হয়।

এছাড়া সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের ওসমানী বিমানবন্দর এলাকায় সিলেট ক্লাবের সামনে যৌথবাহিনী চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় বেশ কয়েকটি ট্রাক আটকেও পাথর জব্দ করা হয়।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, সাদাপাথর থেকে চুরি হওয়া পাথর উদ্ধারে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি। লুট করা পাথর উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।

এর আগে, নজিরবিহীন লুটপাটের পর পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর রক্ষায় নড়ে বসে প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় সিলেট বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সার্কিট হাউসে জরুরি সমন্বয় সভার আহ্বান করা হয়। সভায় লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। বুধবার রাতে সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সভায় সাদাপাথর রক্ষায় ৫টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেগুলো হলো:

১. জাফলং ইসিএ এলাকা ও সাদাপাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।

২. গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের চেকপোস্টে যৌথবাহিনীর সার্বক্ষণিক উপস্থিতি থাকবে।

৩. অবৈধ পাথর ভাঙা (ক্রাশিং) মেশিন বন্ধ ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

৪. পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

৫. চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করে আগের অবস্থানে ফেরানো হবে।

সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনায় মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন। কমিটিকে আগামী রোববারের (১৭ আগস্ট) মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে। এরপর লুটপাটের ঘটনা অনুসন্ধানে গতকাল সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শন করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল।

দুদক জানিয়েছে, পাথর লুটপাটে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও কিছু স্থানীয় বাসিন্দার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের দায় সবচেয়ে বেশি এবং পর্যটন খাতের ক্ষতির সঙ্গে প্রশাসনের যোগসাজশ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্প্রতি প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও প্রভাবশালীদের লাগামহীন লুটপাটে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান সাদাপাথরসহ সিলেটের একাধিক পাথর কোয়ারি প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন আন্দোলন চালায়, যার মধ্যে ছিল মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, ধর্মঘট ইত্যাদি। এই দাবির আড়ালে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ‘পাথরখেকো চক্র’ প্রকাশ্যে ও গোপনে সাদাপাথরের পাথর লুট করে নিয়ে যায়।

এর মধ্যে সাদাপাথর থেকে পাথর লুটপাটে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের সব দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ

(বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে) কোম্পানীগঞ্জের পর্যটন স্পট সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন,সাদা পাথর এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে যে লুটপাট হয়েছে, তা রোধে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যারা এই অবৈধ কাজে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আশা করছি শীঘ্রই সময়ের মধ্যে যেগুলো চুরি হয়ে গিয়েছিল সেগুলোকে পুনরুদ্ধার করে এখানে আবার প্রতিস্থাপন করতে পারব। এটা একটি সময় সাপেক্ষ বিষয় আমরা সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া এখানের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে সেই ক্ষতি যেন আর কেউ করতে না পারে এবং যারা এই কাজে জড়িত ছিল তাদের গ্রেপ্তারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিব এবং আইন যেভাবে আমাদের পারমিট করে সেভাবে আমরা তাদেরকে ধ্বংস করাসহ অন্যন্য যে প্রক্রিয়া আছে সেগুলো আমরা করব।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘গতকাল জেলা পর্যায়ের একটি সভায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাস্তবায়ন গতকাল রাত থেকেই শুরু হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার করে এখানে প্রতিস্থাপন করতে পারব। অপূরণীয় ক্ষতি যাতে আর কেউ করতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি দায়িত্বে থাকা সবাই দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, কিছু অসাধু ব্যক্তি অবৈধভাবে ক্ষতিসাধন করছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ক্ষতির মাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’

মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, ৫ আগস্টের পর যে লুটপাট হয়েছে, তা দ্রুত বন্ধে কার্যক্রম চালানো হয়েছিল। এতদিন বিষয়টি একটি সীমিত মাত্রায় ছিল, কিন্তু এবার তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

পর্যটকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সাদা পাথরে আসুন। এখানকার পরিবেশ এখনও পর্যটনবান্ধব।’

 

 

 

এস এ  শফি, সিলেট।