November 28, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, November 27th, 2025, 6:36 pm

সাপাহারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে আশঙ্কাজনক হারে: বসুন্ধরা শুভসংঘের আলোচনা সভায় বক্তারা

সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

নওগাঁর বরেন্দ্র অধ্যুষিত সাপাহার উপজেলায় ক্রমবর্ধমান শুষ্কতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং সেচের ঘাটতিকে কেন্দ্র করে “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় করণীয়” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১০টায় সাপাহার প্রেসক্লাবে বসুন্ধরা শুভসংঘ সাপাহার শাখার আয়োজনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বসুন্ধরা শুভসংঘ সাপাহার শাখার সভাপতি মনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় স্থানীয় শিক্ষক, কৃষক প্রতিনিধি, পরিবেশকর্মী, সাংবাদিক, কলেজ শিক্ষার্থী ও বসুন্ধরা শুভসংঘের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

সভায় বক্তারা উদ্বেগের সঙ্গে জানান, দেশের অন্যতম শুষ্ক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নওগাঁ জেলার ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চল সাপাহারে গত কয়েক বছরে বর্ষাকালের বৃষ্টিপাত গড়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে। অপরিকল্পিত গভীর নলকূপ ব্যবহার এবং জলাধার না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর আশঙ্কাজনকভাবে ৭ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে যাওয়ার ফলে অনেক গভীর নলকূপ অকার্যকর হয়ে পড়ছে এবং মঝে মধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে।

কৃষক প্রতিনিধি আলোচকরা বলেন, পানির অভাবে প্রায় প্রতিবছর বোরো মৌসুমে ধানের জমিতে ফাটল ধরছে, আম বাগান ও সবজি চাষ ব্যাহত হচ্ছে এবং গবাদিপশুর খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ হচ্ছে। নদী-খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিক পানি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না, যা শুধু কৃষিই নয় স্থানীয় জীবনযাত্রা, পরিবেশ ও অর্থনীতিকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

বসুন্ধরা শুভ সংঘ সাপাহার, পোরশা উপজেলা শাখার উপদেষ্টা কালের কন্ঠ প্রতিনিধি তছলিম উদ্দীন বলেন “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবার জীবনে লাগছে। সাপাহারকে শুষ্কতার দুষ্টচক্র থেকে বের করতে হলে গণসচেতনতার পাশাপাশি কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনা জরুরি।” এর জন্য তিনি নবীন প্রজন্মকে পরিবেশ রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রম, বৃক্ষরোপণ, প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ও পানি অপচয় রোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি আরোও বলেন যে, জলবায়ু মোকাবেলায় নওগাঁ জেলার স্থানীয় একটি সংগঠন (বরেন্দ্র ডেভলপমেন্ট অরগানাইজেশন) বিডিও বিগত ৩৪ বছর ধরে বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় এই বরেন্দ্র অঞ্চললের দরিদ্র ঝুঁকি পূর্ণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪সাল থেকে বিডিও বরেন্দ্র অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষি ব্যবস্থাপনার উপর পার্যবেক্ষন করে আসছে। তাদের এই লক্ষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রভাব এবং মানবসৃষ্ট পানি দূর্যোগের করণে বরেন্দ্র কৃষি ব্যবস্থাপনার সমস্যা সমূহের ব্যাপারে জনগনকে সচেতন করা।

সভায় সাপাহারের জলসংকট মোকাবেলায় বেশ কিছু বাস্তবসম্মত সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো

১. বাড়ি, অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ (রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং) ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা।

২. পুকুর, খাল ও বিল পুনঃখননের মাধ্যমে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো এবং রাস্তার পাশে রিচার্জ পিট তৈরি করা।

৩. বোরো ধানের পরিবর্তে কম পানি লাগে এমন ফসল এবং খরা সহনশীল ধানের জাত (ব্রি ধান-৫৬, ৫৭) চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা।

৪. আম বাগানে স্মার্ট সেচ ব্যবস্থা ও জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানো।

৫. বিএমডিএ-এর অধীনে আরও গভীর নলকূপ স্থাপন এবং সমবায় সেচ প্রকল্পে ভর্তুকি বৃদ্ধি।

৬. স্কুল-কলেজে জলবায়ু শিক্ষা ক্লাব গঠন ও প্রতি মাসে স্বেচ্ছাশ্রম কর্মসূচির আয়োজন।

শুভসংঘের সভায় বসুন্ধরা শুভসংঘের উপদেষ্টা ও কালের কণ্ঠের নওগা (সাপাহার-পোরশা) প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাব সভাপতি সাংবাদিক তছলিম উদ্দীন, শুভ সংঘের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, সাপাহার উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আনছারী, প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক বাবুল আকতারসহ স্থানীয় সাবেক শিক্ষক এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে উপস্থিত সবাই সাপাহারকে জলবায়ুবান্ধব অঞ্চলে রূপান্তরের লক্ষে আজ থেকেই সচেতনতা বৃদ্ধি ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এছাড়া সামনের শীত ও রমজান মাসে অসহায় শীতার্থ মানুষের পাশে শীতবস্ত্র নিয়ে দাঁড়ানো ও দুস্থ মানুষের মাঝে ঈদ সামগ্রী প্রদানেও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।