এস এম মনিরুল ইসলাম, সাভার : বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৫৫তম বার্ষিকীতে জাতির বীর সন্তানদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এর কিছুক্ষণ পর ৬টা ১৩ মিনিটে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
ভোরে রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধে পৌঁছলে সেখানে তাকে অভিবাদন জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্মৃতিসৌধের বেদীতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। এসময় রাষ্ট্রীয় সালাম শেষে বিউগলে করুণ সুর তোলেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধান উপদেষ্টাও স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইতে সই করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে উপস্থিত বিদেশি মিশনগুলোর কূটনীতিক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা।
পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীকের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
শ্রদ্ধা জানানো হয় বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের পক্ষ থেকে।
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটাই প্রথম স্বাধীনতা দিবস। প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচির সূচনা হয়।
ভিআইপিদের শ্রদ্ধা জানানোর পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ খুলে দেওয়া হয় সবার জন্য; পতাকা আর ফুল হাতে জনতার ঢল নামে সৌধ প্রাঙ্গণে। ফুলে ফুলে ভরে উঠতে থাকে শহীদ বেদী।
পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার শৃঙ্খল ভেঙে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে স্বাধীন স্বদেশ বিনির্মাণের ৫৪তম বার্ষিকী পালন করছে বাংলাদেশ।
চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের পথ ধরে তরুণ প্রজন্ম এখন স্বপ্ন দেখছে ‘বৈষম্যহীন’ নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের; এবারের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে ঝরছে সেই পথে দৃঢ় থাকার প্রত্যয়।
তেইশ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।
২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইপিআরের বেতারে তার এই ঘোষণা প্রচারিত হয়।
এরপর নয় মাসের যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসামান্য ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাধারণ ছুটির দিনে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে গৌরবের দিনটি।
এবার এমন এক সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪তম বার্ষিকী উদযাপন হচ্ছে, যখন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে মাঠের রাজনীতিতে নেই।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনাবসানের পর দেশ চালাচ্ছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত ৫ অগাস্ট ভারতে পালিয়ে গিয়ে এখনও সেখানে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা; মাঠে নেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
জুলাই-আগষ্টে আন্দোলনকারীদের উপর ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাকর্মীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার ‘স্বৈরাশাসন’ পেরিয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে ইউনূস সরকার।
আরও পড়ুন
ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক চান মিয়ানমারের জান্তা প্রধান
চীন সফর শেষে দেশে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা
পদ্মা সেতুতে ১২ ঘণ্টায় টোল আদায় ২ কোটি টাকা