August 25, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, August 24th, 2025, 7:38 pm

সিদ্দিকীয়া জামেয়া-ই-মাদানিয়া ট্রাস্ট খুলনার আলোচনা সভা

আল্লামা সাঈদীকে হত্যা করে এদেশ থেকে ইসলামী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করা যাবেনা —শামীম সাঈদী

 

পিরোজপুর-২ (কাউখালি, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ) আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন ও খুলনার সিদ্দিকীয়া জামেয়া-ই-মাদানিয়া ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী বলেছেন, বিশ্বনন্দিত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (র.) আজীবন কুরআনের বাণী প্রচার ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় ফরমায়েসী সাজা দিয়ে সরকার তাঁকে দীর্ঘ ১৩টি বছর কারাগারে আটকে রেখে অবহেলা করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। জীবিত থাকাবস্থায় আল্লামা সাঈদীর উপর বিচারের নামে অবিচার করা হয়েছে, এমনকি মৃত্যুর পর তার লাশের সাথেও নিষ্টুর আচরণ করেছে। শুধু আল্লামা সাঈদী নয়, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছে। এসব অবিচারের বিচার বাংলার মাটিতে হওয়া উচিত। যাতে আর কোন নিরপরাধ মানুষ এভাবে বিচারিক জুলুমের শিকার না হন। আল্লামা সাঈদী সারা বাংলাদেশে তথা গোটা বিশ্বে কুরআনের তাফসীর করেছেন, কুরআনের আলোকে জীবন গঠনে কাজ করেছেন, কুরআনের সমাজ বিনির্মাণের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, জীবনের শেষ মুহুর্তে আল্লামা সাঈদীর চিকিৎসা নিয়ে জাতি আজ সন্দিহান। কারণ যে চিকিৎসক আল্লামা সাঈদীর ফাসির দাবীতে শাহবাগে আন্দোলন করেছে। সে যদি এই আসামীকে তার হাতে পায় খুন করতে দ্বিধা করবেনা। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত হওয়া উচিত। আল্লামা সাঈদীকে হত্যা করে এদেশ থেকে ইসলামী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করা যাবেনা। শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুর ১২টায় নগরীর সিদ্দিকীয়ামহল্লাস্থ দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার হাজী শেখ আব্দুর রশিদ মিলনায়তনে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (র.) এর দ্বিতীয় শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সিদ্দিকীয়া জামেয়া-ই-মাদানিয়া ট্রাস্ট খুলনার উদ্যোগে তাঁর জীবন ও কর্ম এর উপর আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

সিদ্দিকীয়া জামেয়া-ই-মাদানিয়া ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত  সেক্রেটারি এস এম আজিজুর রহমান সভাপতিত্বে ও মাদরাসার  আরবী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মনিরুজ্জামানের সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক ছিলেন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহিলা শাখার উপাধ্যক্ষ শাকিলা উম্মে নূর, সিদ্দিকীয়া মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, সিনিয়র শিক্ষক রিয়াজুল ইসলাম, সাবেক ছাত্র আব্দুল মান্নান।

শামীম সাঈদী আরও বলেন, জাতীয় সংসদে পরপর দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও ক্ষমতা ও শক্তি দিয়ে নয় বরং উত্তম ব্যবহার, কথা ও কাজ দিয়ে জনগণকে যে মন্ত্রমুগ্ধ করা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনে তিনি সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। এমনকি তিনি তার নিজ এলাকায় অমুসলিম জনগণের সমর্থন অর্জনে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছিলেন। অমুসলিমগণের নিকট তার অবস্থান ছিল মাতৃক্রোড়ে থাকার মতো নিরাপদ। জনগণের প্রতি তার দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহীতা সম্পর্কে জাতীয় সংসদে তার বক্তব্য ছিল অভিভাবকসুলভ। সেই ঐতিহাসিক বক্তব্য সমূহ এখনও কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে। ইসলামের প্রচার-প্রসারে তার ভূমিকা ছিলো অনস্বিকার্য। তার জীবন ও কর্মকে সকলের কাছে তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী এই নামটি বাংলাদেশের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ইতিহাসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু তার জীবন কেবল বিতর্কের নয়; বরং বিশাল জ্ঞানের আলো, ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তার এবং মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে তোলার এক উজ্জ্বল নিদর্শনও। তিনি ছিলেন একজন শ্রদ্ধাভাজন আলেম, যিনি শুধু বাংলাদেশ নয় পাকিস্তান, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এমনকি আফ্রিকাসহ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশে সম্মানিত ছিলেন। শামীম সাঈদী স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন বাংলাদেশের জন্য অফুরন্ত এক সম্পদ। যখন মাহফিলে কিৎসা কাহিনী ছিলো তখন তিনি কুরআন থেকে তাফসীর করতেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও তাকে চিনতেন।

তিনি যখন বেশি পরিচিত হলেন তখন তিনি ততো বেশি বিনয়ী হলেন। আল্লামা সাঈদী সেই ব্যক্তি যাকে ভালোবেসে মানুষ চোখের পানি ফেলছেন অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। আবার এক শ্রেণীর মানুষ তাকে হত্যা করেছেন। রাসুল (সা.) এর নির্দেশিত জীবনটা হচ্ছে আল্লামা সাঈদীর জীবন। তিনি ইচ্ছে করলে আরাম আয়েশের জীবন বেছে নিতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা নেননি।  তিনি ছিলেন কুরআনের পাখি, ইসলামের এক নিবেদিত দাঈ।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরশাসক সরকারের আমলে তাকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী রাখা হয়েছিল।  পরে সেই মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। অথচ তিনি সারাজীবন দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের কথাই বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, আল্লামা সাঈদী কুরআন ও হাদিসের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা সর্বদা তুলে ধরেছেন। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তাঁর কর্মতৎপরতা দেশের মানুষের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

আলোচনা সভায় আল্লামা সাঈদীর জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তারা বলেন, তাঁর তাফসির, দাওয়াতি কার্যক্রম ও নির্ভীক বক্তব্য লক্ষ কোটি মানুষের হৃদয়ে ইসলামী চেতনার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। জাতির ইতিহাসে আল্লামা সাঈদীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

 

 

মাসুম বিল্লাহ ইমরান

খুলনা