January 7, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, January 5th, 2025, 9:45 pm

সিন্ডিকেট : ভরা মৌসুমেও বেড়েছে চালের দাম, অস্বস্তিতে ক্রেতা

সংগৃহীত ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আমনের ভরা মৌসুমেও মিলার বা চালকলের মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সাধারণত এমন সময় চালের দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। গত এক মাসের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে আট টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সিন্ডিকেটের কবজায় চলে গেছে চালের বাজার। এতে আমনের ভরা মৌসুমেও চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়তি। এর প্রভাবে খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে।

চালকল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বাড়ায় তাঁরা চালের দাম বাড়িয়েছেন।

জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মেসার্স লাকসাম ট্রেডার্সের বিক্রেতা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘নতুন করে বস্তাপ্রতি চালের দাম ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে এখন ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। এবার অন্যান্য বারের তুলনায় ধানের দাম বাড়তি।

যার কারণে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর প্রভাব পাইকারি ও খুচরা বাজারে পড়েছে।’

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সরু চাল ১০ শতাংশ, মাঝারি চাল ব্রি-২৮ ও পাইজম ৪ শতাংশ বেড়েছে।

ঝিনাইদহ : চালের উৎপাদন স্থল ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় ১৬টি অটো রাইস মিলসহ মোট ২৭০টি চালকল রয়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে আট টাকা।
হঠাৎ করে চালের দাম বাড়ায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ বেশ বিপাকে পড়েছেন।

চালকল মালিকরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে চালের দাম বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে ধানের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে ধানের সংকট। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, হঠাৎ মোটা চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে চালকল মালিক ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি (সিন্ডিকেট) করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন।

জানা যায়, দুই সপ্তাহ আগে ঝিনাইদহের বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। তা এখন ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা। কাজললতা ৫৬-৫৮ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫ টাকা হয়েছে। সরু চাল মিনিকেট ৬৮ থেকে বেড়ে এখন ৭৪ টাকা। বাসমতি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯২ টাকায়। আগে যা ছিল ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা।

গতকাল সকালে ঝিনাইদহ শহরের নতুন হাটখোলা, হামদহ ও ওয়াপদা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। কাজললতা ৬৫ টাকা, আটাশ ৬৫ টাকা, মিনিকেট ৭৪ টাকা ও বাসমতি চাল আকারভেদে ৯০ থেকে ৯২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ওয়াপদা বাজারে চাল কিনতে আসা চা দোকানি বাবু মিয়া বলেন, ‘গত বছর যে চাল ৪০ টাকায় কিনতাম, এখন তা ৫৫ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। সরকার অনেক জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে টিভিতে দেখি। তবে চাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান চালাতে দেখি না।’

নতুন হাটখোলা বাজারের চাল ব্যবসায়ী বলেন, ‘মাস দেড়েক আগে হঠাৎ মিনিকেট ও বাসমতি চালের দাম বেড়ে গেছিল। আবার নতুন করে কোনো নির্দেশনা ছাড়াই ১৫ দিন আগে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৭ থেকে ৯ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকল মালিকরা। তাঁরা সিন্ডিকেট করে যখন যা ইচ্ছা তাই করে। এ জন্য ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের বিবাদে জড়াতে হয়।’

সদর উপজেলার শুভ অ্যাগ্রো প্রগতি অটো রাইস মিলের মালিক বলেন, ‘পরিবহন, শ্রমিক ও বিদ্যুতের দাম যেভাবে বাড়ছে, সে তুলনায় চালের দাম বাড়েনি। হঠাৎ করে ধানের দামও বেড়ে গেছে। তাই কয়েক প্রজাতির চালের দাম কেজিপ্রতি খুবই সামান্য বাড়ানো হয়েছে।’

জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ‘বাজারে আগের মতো ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা চাল উৎপাদন করতে পারছি না। এ জন্য চালের দাম অল্প কিছু বেড়েছে। আমাদের এখানে অবৈধ মজুদদার ও সিন্ডিকেট নেই।’

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে চালের দাম বেড়ে গতকাল চাক্তাই চালপট্টি ও পাহাড়তলী পাইকারি বাজারে বেতি আতপ ৫০ কেজি বস্তা দুই হাজার ৬০০ থেকে তিন হাজার টাকা, পাইজাম ২৫ কেজির বস্তা এক হাজার ৫০০ টাকা, মিনিকেট সিদ্ধ বস্তা (২৫ কেজি) এক হাজার ৪৫০ থেকে এক হাজার ৮৫০ টাকা, মোটা চাল পাঁচ কেজির বস্তা দুই হাজার ৫৫০ থেকে দুই হাজার ৭২০ টাকা, জিরাশাইল বস্তা (২৫ কেজি) এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৯০০ টাকা, কাটারি আতব (২৫ কেজি) বস্তা এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বলেন, চট্টগ্রামে ৯০ শতাংশ চাল আসে নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, দিনাজপুর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। ধানের দাম ৪০ কেজি বস্তায় ৬০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন একই পরিমাণ ধান কিনতে হচ্ছে দেড় হাজার টাকায়। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের দামও বাড়ছে।