December 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, December 12th, 2024, 6:40 pm

সিরিয়া কি কোরআনে বর্ণিত ‘পবিত্র ভূমি’র অন্তর্ভুক্ত?

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মসজিদ আল আকসা সংলগ্ন অঞ্চলকে কোরআনে ‘পবিত্র ভূমি’ বলা হয়েছে। হজরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারী বনি ইসরাইলকে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছিলেন মূর্তিপূজক আমালেকাদের কাছ থেকে পবিত্র ভূমি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَاِذۡ قَالَ مُوۡسٰی لِقَوۡمِہٖ یٰقَوۡمِ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَۃَ اللّٰہِ عَلَیۡکُمۡ اِذۡ جَعَلَ فِیۡکُمۡ اَنۡۢبِیَآءَ وَجَعَلَکُمۡ مُّلُوۡکًا وَّاٰتٰىکُمۡ مَّا لَمۡ یُؤۡتِ اَحَدًا مِّنَ الۡعٰلَمِیۡنَ یٰقَوۡمِ ادۡخُلُوا الۡاَرۡضَ الۡمُقَدَّسَۃَ الَّتِیۡ کَتَبَ اللّٰہُ لَکُمۡ وَلَا تَرۡتَدُّوۡا عَلٰۤی اَدۡبَارِکُمۡ فَتَنۡقَلِبُوۡا خٰسِرِیۡنَ

স্মরণ কর, যখন মুসা তার জাতিকে বলেছিল, ‘হে আমার জাতি! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্য হতে নবি করেছিলেন ও তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি করেছিলেন এবং বিশ্বজগতে কাউকেও যা তিনি দেন নাই তা তোমাদেরকে দিয়েছিলেন। হে আমার জাতি, আল্লাহ তোমাদের জন্যে যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন তাতে তোমরা প্রবেশ কর এবং পশ্চাদপসরণ করো না; করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। (সুরা মায়েদা: ২০, ২১)

কোরআনের ব্যাখ্যাকারদের মধ্যে ইবনে আব্বাসের (রা.) মতে এ আয়াতে ‘পবিত্র ভূমি’ বলে মসজিদ আল আকসা সংলগ্ন এলাকা বোঝানো হয়েছে। আবু ইসহাক যাজ্জাজের (রহ.) মতে ‘পবিত্র ভূমি’ অর্থ এখানে ফিলিস্তিন, দামেশক (বর্তমান সিরিয়ার রাজধানী) ও জর্দানের কিছু এলাকা। কাতাদার (রহ.) মতে ‘পবিত্র ভূমি’ বলে এখানে পূর্ণ শাম বা বৃহত্তর সিরিয়া অঞ্চল বোঝানো হয়েছে। বর্তমানের সিরিয়া, লেবানন, জর্দান ও পূর্ণ ফিলিস্তিন ভূখণ্ড প্রাচীন শামের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ আবু ইসহাক (রহ.) ও কাতাদার (রহ.) দুজনের মত অনুযায়ী বর্তমান সিরিয়ার একাংশ বা পূর্ণ সিরিয়াই কোরআনে বর্ণিত পবিত্র ভূমির অন্তর্ভুক্ত।

বাইতুল মুকাদ্দাস সংলগ্ন এলাকা, ফিলিস্তিন অথবা পুরো শামকে কেন পবিত্র ভূমি বলা হয়েছে এ বিষয়ে বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা কাজি নাসিরুদ্দিন বায়যাবি (রহ.) বলেন, ‘মসজিদ আল আকসা, ফিলিস্তিন ও শাম আল্লাহর বহু নবি-রাসুলের স্মৃতিধন্য হওয়ায় এই অঞ্চলকে ‘পবিত্র’ বলা হয়েছে।’ (সাফওয়াতুত তাফাসীর) অর্থাৎ এই অঞ্চলে যেহেতু আল্লাহ অনেক নবি রাসুল পাঠিয়েছেন, আল্লাহর বিশ্বাসী বান্দা বা মুমিনরা ব্যাপকভাবে বসবাস করেছেন, আল্লাহর ইবাদত করেছেন, এই অঞ্চল মূর্তিপূজক মুশরিকদের শাসনাধীন থাকবে এটা আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেননি। তাই তিনি তার নবি মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুশরিক আমালেকাদের হটিয়ে এই ‘পবিত্র ভূমি’র নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং সেখানে বসবাস করতে।

আল্লাহ তাআলার ওয়াদা ছিল, আমালেকাদের সাথে যুদ্ধে বনি ইসরাইলই জয়লাভ করবে। আল্লাহর নির্দেশে হজরত মুসা (আ.) ফিলিস্তিন অভিমুখে রওয়ানা হন। কিন্তু ফিলিস্তিনের কাছাকাছি পৌঁছে বনি ইসরাইল খবর পায় আমালিকা জাতি বিশালদেহী ও অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা ভয় পেয়ে যায়। আল্লাহর নবি মুসাকে (আ.) তারা বলে,

اِنَّا لَنۡ نَّدۡخُلَہَاۤ اَبَدًا مَّا دَامُوۡا فِیۡہَا فَاذۡہَبۡ اَنۡتَ وَرَبُّکَ فَقَاتِلَاۤ اِنَّا ہٰہُنَا قٰعِدُوۡنَ
তারা যত দিন সেখানে থাকবে তত দিন আমরা সেখানে প্রবেশ করবো না, তুমি আর তোমার রব যাও এবং যুদ্ধ করো, আমরা এখানেই বসে থাকব। (সুরা মায়েদা: ২৪)

বনি ইসরাইলের এ রকম অবাধ্যতা, বেয়াদবি ও ভীরুতার কারণে আল্লাহ তাদের ওপর অসন্তুষ্ট হন এবং চল্লিশ বছরের জন্য তাদের ফিলিস্তিনে প্রবেশ স্থগিত করে দেন। তারা সিনাই মরুভূমির ছোট্ট একটি এলাকার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে; সামনে যাওয়ার কোনো পথও খুঁজে পাচ্ছিল না এবং মিসরেও ফিরে যেতে পারছিল না।