প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। সেই প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়া যেমন নিরাপদ করতে হবে তেমনি তারা বিদেশ থেকে ফিরলেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। বিমানবন্দর থেকেই সেটি শুরু করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলেই সেই কাজটি করতে হবে। এক্ষেত্রে একটি কাঠামো থাকা উচিত যাতে বিদেশ-ফেরতরা প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়।
মঙ্গলবার সিভিল এভিয়েশন কর্তপৃক্ষ ও ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত যৌথ সমন্বয় সভায় এসব কথা উঠে আসে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে ইমপ্রুভড সাসটেইনেবল রিইন্টিগ্রেশন অব বাংলাদেশি রিটার্নি মাইগ্রেন্টস (প্রত্যাশা-২) প্রকল্পের আওতায় ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মোঃ হাফিজ আহমেদ তার বক্তৃতায় বলেন, “প্রবাসীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে সবাইকে। আমরা এই কাজটা সবসময় করার চেষ্টা করি। অভিবাসনপ্রবণ জেলা হওয়ায় বিদেশ থেকে ফেরত আসার তালিকায়ও সিলেটের অনেক মানুষ আছেন। ঢাকার পাশাপাশি যেহেতু সিলেটেও অনেক ফ্লাইট আসে তাই অনেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েই ফেরত আসেন। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এখানে বিদেশ-ফেরতদের নানা জরুরি সহায়তা দিচ্ছে। বিমানবন্দরে কর্মরত সবাই এই তথ্য জানলে আরো বেশি মানুষ এই সেবা পাবেন। সমন্বিতভাবে কাজ করলে আরও বেশি মানুষকে সহায়তা করা যাবে বলে আমরা মনে করি।”
সভার বিশেষ অতিথি সিলেট জেলা প্রশাসনের প্রবাসী কল্যাণ শাখার দায়িত্বরত সহকারী কমিশনার পলি রানী দেব বলেন, ‘প্রবাসীদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আরও আন্তরিক হতে হবে। পাশাপাশি তারা যেন রেমিট্যান্স বিনিয়োগের বিষয়ে সচেতন থাকেন সেটা নিশ্চিত করতে শুধু অভিবাসীদেরকেই না, তাদেরদের পরিবারকেও আমাদের সচেতন করে তুলতে হবে।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম এন্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল ইসলাম হাসান। তিনি বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রামের পাশাপাশি সিলেটেও বিদেশ-ফেরতদের পাশে আমরা আছি। ব্র্যাক গত আট বছরে ৩৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে বিমানবন্দরে জরুরি সহায়তা দিয়েছে। আমাদের অভিজ্ঞতায় মনে করি, বিদেশ-ফেরতদের সহায়তায় বিমানবন্দরে একটি কাঠামো বা এসওপি থাকা উচিত যেখানে কার কী কাজ উল্লেখ থাকবে। আর শুধু জরুরি সহায়তা নয়, বিদেশ-ফেরতদের কাউন্সেলিং ও অর্থ সহায়তাও করছি আমরা’।
সিলেট বিমানবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শরিফুল বলেন, ‘সিলেট বিমানবন্দরে কার্যক্রম বাস্তবায়নরত সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, ইমিগ্রেশন, এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক), জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, এপিবিএন, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরসহ কর্মরত সকল সংস্থা আমাদের জরুরি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করতে প্রতিনিয়ত সহায়তা করে আসছে বলেই আমরা বিদেশ-ফেরত অভিবাসীদের জরুরি সহায়তা প্রদান করতে পেরেছি। এই সহায়তা আরো বিস্তৃত করতে আমরা প্রত্যাশা-২ নামে একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছি। এই প্রকল্পে অন্তত ১০ হাজার মানুষ বিমানবন্দরে সহায়তা পাবেন। পাশাপাশি সাত হাজার ৭০০ জন বিদেশ-ফেরত মানুষ যেন ফের দেশে আয় করতে পারেন সেজন্য তাদেরকে ধাপে ধাপে সহায়তা করা হবে। সিলেটে যে কারো জরুরি সহায়তা প্রয়োজন হলে আমরা তার পাশে থাকবো।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রিয়াজ আহমেদ, উপ-পরিচালক (ফায়ার) আবু মোহাম্মদ ওমর শরীফ, সিলেট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুস সাকিব, সিলেট মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আসিফ আজিজ, সিলেট কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ নাহিদ নিয়াজ, সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদীসহ অন্যরা। এছাড়া সমন্বয় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ওসমানী বিমানবন্দরে কর্মরত সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কসহ সরকারি সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাবৃন্দ, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ। সমন্বয় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন কর্মসূচির প্রধান কার্যালয় ও সিলেটের মাইগ্রেশন এন্ড রিইন্টিগ্রেশন সাপোর্ট সেন্টারে কর্মরত ব্র্যাকের বিভিন্ন প্রোগ্রামের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিগণ।
আরও পড়ুন
কুলাউড়া হাসপাতালে রোগীদের নিম্নমানের খাবার দেয়ার অভিযোগ
সিলেটে ঝুঁকিপূর্ণ টিলায় বাস করছেন ১০ হাজার মানুষ:৫ বছরে ২০ জনের মৃত্যু
রমেকে রোগীর ধনুষ্টঙ্কারের উপসর্গ শনাক্ত