জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
ভয়াবহ বন্যার পর এখনো সিলেটের ৩৫টি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়নি। এর মধ্যে ২৩ টি বিদ্যালয় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ২২টি বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া গতকাল বুধবার থেকে সিলেটের মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬০৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। কোন বিদ্যালয় বন্ধ না থাকলেও উপস্থিতির হার অনেক কম বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জের মুরারগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানি সব তছনছ করে গেছে। মেঝেতে এখনো কাদা। নেই বসার মতো জায়গা। এতদিন পরে বিদ্যালয় খুলেছে, তাদের ফিরিয়েও দেয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়ির একটি ঘরের মেঝেতে ক্লাস নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক মোঃ শামসুন নূর। ১০/১৫ শিক্ষার্থী নিয়ে একটি বাড়ির মেঝে বসে ক্লাস নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার ছিল বিদ্যালয় খোলার ৪র্থ দিন। এই দিন পর্যন্ত জেলায় ২৭৭ বিদ্যালয়ের মধ্যে ২শটি বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থী উপস্থিতি ক্রমশ বাড়ছে। যেসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে কিংবা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে-সেসব বিদ্যালয়ের অবস্থান দক্ষিণ সুরমায়, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ এবং ওসমানীনগরে।
অন্যদিকে, পাঠদান শুরু হওয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্লাস শুরু হলেও বিদ্যালয় ভবনগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় এখনো অনেক বিদ্যালয়ে পাঠদানের পরিবেশ ফিরেনি। এছাড়া শিক্ষার্থী উপস্থিতিও কম। কেবল বন্যাদুর্গত এলাকা নয়, সিলেট নগরীতেও বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। অবশ্য শিক্ষকরা বলেছেন, সাধারণত বিদ্যালয় খোলার প্রথম দু একদিন উপস্থিতি একটু কমই হয়। তবে ২/৩ দিনের মধ্যে উপস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ঢোলাখাল লম্বাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ফুড়ারপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লামা ডিস্কিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফেদারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দিগলবাকের পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশের রাস্তা ও আঙিনা এখনও পানির নিচে রয়েছে। তবে সড়কের যেসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, সেখানে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়ছে।
কোম্পানীগঞ্জের মুরারগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: শামসুন নূর বলেন, তার বিদ্যালয়টি সর্বশেষ জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়। এলাকাবাসীর উদ্যোগে নির্মিত পুরনো একটি ভবনে ক্লাস চলতো। গত কয়েক দফা বন্যায় বিদ্যালয়ের ব্যাপক ক্ষতি করে গেছে। বিদ্যালয় খুললেও ক্লাস করানোর মতো জায়গা নেই। দরজা জানালা টিন সবকিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্লাস রুমে কাদা। অন্যদিকে স্কুল খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা আসছে। তাদের ফিরিয়েও দেয়া যাচ্ছে না। ফলে বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি সজ্জাদ মিয়র ঘরের মেঝেতে বসে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কোম্পানীগঞ্জের বিলাজুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আহাদ কাসেমী বলেন, সব সময়ই স্কুল খোলার প্রথম দিকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকে। ক্রমশ এ সংখ্যা বাড়বে। গতকাল বুধবার শিক্ষার্থী উপস্থিতি অর্ধেক ছিলো বলে জানান।
কানাইঘাট উপজেলার দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আল-আমিন জানান, তার বিদ্যালয়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম দিকে অর্ধেকের মতো শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল। পাঠদান নিয়মিত হয়েছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে।
গত বুধবার থেকে হাইস্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ের ৬০৭টি প্রতিষ্ঠান খুলেছে। এর মধ্যে ৩৮২ টি হাইস্কুল, ৬৭টি কলেজ ও ১৫৮টি মাদ্রাসা রয়েছে। সিলেট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, বন্যার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে কোন বিদ্যালয় বন্ধ নেই। তবে শিক্ষার্থী উপস্থিতি একটু কম।
সিলেট নগরীর আশপাশ এলাকার তিনটি বিদ্যালয় পরিদর্শনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এসব বিদ্যালয়ে উপস্থিতি প্রায় ৪০ ভাগ। এবারের বন্যায় সুনামগঞ্জে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছিল। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় এক হাজার ৪৭৫টি। সবকটা বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার থেকে হাইস্কুল ও কলেজ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আবদুর রহমান বলেন, তার জেলায় সবকটা বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি স্বাভাবিকভাবে কম। আর বেশিরভাগ হাওর এলাকা। আস্তে আস্তে উপস্থিতি বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ঘরবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়ে গেছে। এরজন্য ৪০ হাজার বইয়ের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ জানান, জেলায় ২৭৭ বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৪২টি বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে সিলেটের ৩৫ টি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়নি। এর মধ্যে ২৩ টি বিদ্যালয় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ২২টি বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।এলাকাভেদে উপস্থিতিও কমবেশি। গড় শিক্ষার্থী উপস্থিতি হার ৩০/৪০ শতাংশ। আগামী সপ্তাহে উপস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা এ শিক্ষা কর্মকর্তার।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন থেকে তৃতীয় দফায় বন্যা শুরু হয় সিলেট অঞ্চলে। তৃতীয় দফা বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ রূপ নেয়। এতে বিদ্যালয়গুলো ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই সাথে ঈদের ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ছুটি শেষে রোববার থেকে খুলেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে গতকাল বুধবার থেকে।
আরও পড়ুন
বেরোবিতে দিনব্যাপী বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল, যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন তিন ঘণ্টা দেরিতে যাত্রা
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১ম বর্ষ শূন্য আসনে ভর্তি ও সাক্ষাৎকার ১৫ জানুয়ারি