October 6, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 16th, 2024, 3:10 pm

সিলেট অঞ্চলে সরিষা আবাদে ব্যাপক সাড়া

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেট অঞ্চলে সরিষা আবাদে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সরকারের প্রণোদনাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা এ অঞ্চলে সরিষা চাষ বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার ও কৃষকের সমন্বয়ে ভোজ্যতেল আমদানি হ্রাস করতে তেল বীজ শস্য উৎপাদন প্রক্রিয়া দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে গোটা সিলেট এলাকায় আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তবে উৎপাদন আরো বাড়াতে সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন।ভোজ্যতেলের আমদানি চাপ কমাতে সরকার সরিষা আবাদে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। এরজন্য এলাকা ভিত্তিক চাষাবাদের উপযোগী জায়গা চিহ্নিত করে কৃষকদের সরিষা আবাদে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

কৃষি সংশ্লিষ্টদের দাবি, সরকার ভোজ্যতেল আমদানি হ্রাস করতে তেল বীজ শস্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করায় এই সফলতা এসেছে। তবে মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা বলছেন সরকারি সহযোগিতা পর্যাপ্ত নয়, উৎপাদন আরো বাড়াতে সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার সিলেট অঞ্চলে ২৪ হাজর ৯৩১ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২১ হাজার ২৮ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৬ হাজার ৬১৩ হেক্টর, সুনামগঞ্জ ৪ হাজার ১০৫ হেক্টর, হবিগঞ্জ ৫ হাজার ২৯০ হেক্টর এবং মৌলভীবাজারে ৫হাজার ২০ হেক্টর জমিতে সরিয়া চাষ হয়েছে।

এবছর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় এ বছর ১৫১ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। ভোজ্য তেলের দাম বাড়ায় এবং উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এ বছর শস্যটির চাষ বেড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, গেল বছর কোম্পানীগঞ্জের হাওরে ৬৭১ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল। এবারে ১৫১ হেক্টর বেড়ে তা চাষের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২২ হেক্টর জমিতে। গত ৮ জানুয়ারি থেকে ক্ষেত থেকে সরিষা তোলা শুরু হয়েছে। ২৫ জানুয়ারির মধ্যে সরিষা তোলা শেষ হবে।
সরেজমিনে উপজেলার ডুপরিয়া, ধুলিয়া সাতবিলা, লম্বাকান্দি, কাঁঠালবাড়ি, ধোলাইন বিল ও লোভা হাওরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফসলের মাঠগুলো সরিষা ফুলের হলুদ রঙে অপরূপ শোভা ধারণ করেছে। সরিষার এই ফলনে কৃষকের চোখেমুখে আনন্দের আভা ফুটে উঠেছে। চাষিরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে।
উপজেলার দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়নের দুলাইন বিলে ১২০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন কৃষক নাজির মিয়া। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে এখানে শুধু আমন চাষ হতো। এখন আমনের পরই সরিষা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সব ধরনের সহযোগিতা করছে।’
উপজেলার পাড়ুয়া গ্রামের আব্দুল জলিল মেম্বার বলেন, এবার তিনি ৩২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। গতবারের চেয়ে এবার তাঁর ফলন ভালো হয়েছে।
লম্বাকান্দি গ্রামের কৃষক ইসহাক মিয়া জানান, ‘এবার ত্রিশ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ফলন দেখে মনে হচ্ছে, গতবারের চেয়ে উৎপাদন আরও বেশি হবে। সে কারণে এবার বেশি লাভের আশা করছি।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এ অঞ্চলের কৃষকেরা সাধারণত পাঁচটি জাতের সরিষা আবাদ করে থাকে। সেগুলো হচ্ছে উচ্চফলনশীল (উফশী) সরিষা বিনা-৯, বিনা-৪, বারী-১৪, বারী-১৭ ও টরি-৭ জাতের সরিষা।

কৃষি অফিস আরও জানায়, গত কয়েক বছর ধরে উপজেলায় সরিষা চাষ ও ফলন দুই-ই বেড়েছে।
সরকারের নির্দেশনা ছিল আবাদযোগ্য জমি পতিত না রাখতে। সেই লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস কাজ করছে।
প্রথমবারের মতো কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার লম্বাকান্দি হাওরে সরিষা জমির পাশে মৌ-বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এতে একদিকে ফলন ও তার সঙ্গে বাড়তি লাভ মধু। আর মৌ-বাক্স স্থাপনের কারণে জমিগুলোতে উৎপাদন বাড়তে পারে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, এ অঞ্চলের মাটি সরিষা চাষের উপযোগী হওয়ায় দিন দিন আবাদ বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আবাদ বাড়াতে চাষীদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের বীরকুলী গ্রামের সরিষা চাষী স্কুল শিক্ষক মোঃ ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকারের প্রণোধনা পেয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ৬৬ শতক জমিতে এবছর সরিষা চাষ করেছি। প্রথমবার সফলতা অর্জন করায় দ্বিতীয়বারের মতো সরিষা চাষ করতে আগ্রহী হই। আমাকে দেখে ইতিমধ্যে এলাকার অনেক কৃষক সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ মতিউজ্জামান বলেন, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার,সুনামগঞ্জ জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় সরিষা চাষ ভালো হয়েছে। তারমধ্যে সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, ওসমানীনগর উপজেলায় প্রচুর সরিষা আবাদ হয়েছে। সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ব করতে সরকার প্রণোদনা, রাজস্ব খাত থেকে সহায়তা, যন্ত্রপাতি, বীজ, সার বিতরণসহ নানা সহায়তা করে যাচ্ছে। ফলে সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য কৃষক সহ সংশ্লিষ্টদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে।