এসএ শফি, সিলেট:
বিএনপি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলো- এবারের উপ নির্বাচনে অংশ নেবে না। বিএনপির শরিক দলগুলোও এই নির্বাচন থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে। ফলে আরেকটি একপেশে নির্বাচনের ধারণা করছিলেন ভোটাররা।
তবে সব হিসেবে উল্টে দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী। সিলেট-৩ আসনের সাবেক সাংসদও তিনি। এবারের উপ নির্বাচনে আবারও অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শফি আহমদ। বিএনপি না এলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন শফি। মঙ্গলবার মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছেন তিনি।
আছেন আতিকুর রহমান আতিকও। জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এই আসনে ২০০৮ সালেও প্রার্থী হয়েছিলেন আতিক।
দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ একসময় জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিলো। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুকিত খান এই আসন থেকে টানা তিনবার সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে মুকিত খানকে হারিয়ে এই আসনে ধানের শীষের বিজয় পতাকা উড়ান শফি আহমদ চৌধুরী।
এরপর থেকে জাতীয় পার্টি ক্রমেই দুর্বল হয়ে জনসমর্থন হারাতে থাকলেও এখনও এই এলাকায় দলটির একটি বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
বিএনপির ভোটের পাশপাশি শিল্পপতি শফি চৌধুরীর নিজস্ব ভোট ব্যাংকও রয়েছে এই এলাকায়। সরকারবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগাতে পারলে এই ভোট এবার আরও বাড়তে পারে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী তরুণ হাবিবুর রহমান হাবিব এইবারই প্রথম দলীয় মনোনয়ন পেলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি কাজ করছেন এলাকায়। প্রবাস জীবন ছেড়ে এলাকার মানুষের পাশে রয়েছেন। এরআগের দুটি নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। ফলে নিজস্ব পরিচিতি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন হাবিব। দল ক্ষমতায় থাকা, সরকারের উন্নয় কর্মকান্ড, এই আসনের সদ্য প্রয়াত সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রতি মানুষের সহানুভূতি- এইসবও পক্ষে যেতে পারে তার।
সব মিলিয়ে সিলেট-৩ আসনে এখন জমজমাট লড়াইয়েরই আভাস পাচ্ছেন ভোটাররা। প্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন গত দুটি সংসদ নির্বাচনের পর এবারের উপ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এমনটি প্রত্যাশাও তাদের।
মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে এই তিন প্রার্থীসহ আরও ৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টি মনোনীত আতিকুর রহমান আতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিএনপি নেতা শফি আহমদ চোধুরী ছাড়াও আরও তিনজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। তারা হলেন- জাহেদুর রহমান মাসুম, জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া এবং ফাহমিদা হোসেন রুমা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিকিৎসা শেষে সোমবার বিকেলে সিলেটে পৌঁছেন শফি আহমদ চৌধুরী। এরআগে দুপুরে ঢাকা থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র নিশ্চিত করে সিলেট পৌঁছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। আর রোববার সিলেট আসের জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক।
সিলেটে এসে নগরে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে শফি আহমদ চৌধুরী বলেন, আমি সব সময় দল মতের উর্ধ্বে থেকে কাজ করার চেষ্টা করেছি। অতীতে তার প্রমাণ পেয়েছেন আমার এলাকার মানুষ। বর্তমান উপ-নির্বাচনে এলাকাবাসীর ডাকে সাড়া দিয়ে দলের উর্ধে গিয়েই নির্বাচনে অংশ নিয়ে এঅঞ্চলের উন্নয়ন করতে চাই।
শফি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বিএনপি থেকে আমার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিলেও আমি নির্বাচন করবো। আমার হারানোর কিছু নেই। এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের উন্নয়নের রাজনীতি করেছি আজীবন। তাই যতদিন বেঁচে আছি এই ধারা অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা চাই।
শফি আহমদ চৌধুরী ২০০১ সালে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে সিলেট-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের কাছে পরাজিত হন।
প্রসঙ্গত, গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। তার মৃত্যুতে আসনটি শূণ্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৮ জুলাই আসনটিতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন
সাংবাদিকদের সাথে রংপুর পুলিশ সুপারের মতবিনিময়
অগ্নিকান্ডে মিঠাপুকুরের নয়ন একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবার
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ