December 22, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, December 21st, 2025, 6:22 pm

সুদানে নিহত সেনা সদস্য কর্পোরাল মাসুদ রানা নিজ গ্রামে চিরনিদ্রায় শাহিত হলেন বোয়ালিয়াপাড়া স্কুল মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন

নাটোর প্রতিনিধি

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি সাপ্লাই কোরের কর্পোরাল মাসুদ রানা। রোববার (২১) ডিসেম্বর বিকেলে লালপুরের বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে মাসুদ রানাকে দাফন করা হয়।

সকালে ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে তর লাশ নিজ জেলা নাটোরের লালপুর উপজেলার দুর্গম বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।  এসময় মাসুদ রানার বাড়িতে স্বজনদের  কান্নায় আকাশ-বাতাশ ভারি হয়ে উঠে। গ্রামে ঢুকতেই স্বজন, প্রতিবেশী আর গ্রামবাসীর চোখে-মুখে গভীর শোক লক্ষ করা যায় ।

পরে লাশসহ পরিবারের ২ সদস্যকে নিয়ে বেলা ২টা ২০মিনিটে লাশ বহনকারী সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার তার নিজ উপজেলা লালপুরের করিমপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করে। পরে সেনাবাহিনী শহীদ মাসুদ রানার প্রতি গার্ড অব অনার প্রদান করেন।  এতে স্থানীয়রা তাকে এক নজর দেখার জন্য ভীর জমায়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাসুদ রানার লাশ তার নিজ গ্রাম বোয়ালিয়াপাড়া নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে বোয়ালিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিকাল ৪টার দিকে জানাজা শেষে বোয়ালিয়াপাড়া কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বাড়িতে ভিড় করছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। সান্ত্বনার ভাষা যেন সবারই ফুরিয়ে এসেছে। নিহত কর্পোরাল (এমটি) মাসুদ রানা নাটোরের লালপুর উপজেলার বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের ছেলে।

স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি। কিছু বলার শক্তি নেই তার। পাশে দাঁড়িয়ে আছে তাদের একমাত্র সন্তান, আট বছরের মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনা—বাবার ফেরার অপেক্ষায় যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে ছোট্ট মেয়েটি। আর বারবার ছেলের নাম ধরে আহাজারি করছেন মা মা মর্জিনা বেগম। ব্যাটা, ব্যাটা’ বলে চিৎকারে ভেঙে পড়ছে প্রতিটি মুহূর্ত।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন কর্পোরাল মাসুদ রানা। মাত্র এক মাস সাত দিন আগে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান তিনি। গত (১৩ ডিসেম্বর) শনিবার স্থানীয় সময় বিকেলে সুদানের আবেই এলাকায় ইউএন ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর অতর্কিত হামলায় তিনি নিহত হন। সেই হামলায় আরও পাঁচজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রাণ হারান এবং আহত হন বেশ কয়েকজন।

১৯৮৭ সালের ১৬ জুন জন্ম নেওয়া মাসুদ ছিলেন পাঁচ ভাইবোনের একজন। পরিবারের তিন ছেলেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য—যা পরিবার ও গ্রামের জন্য ছিল গর্বের বিষয়। ২০০৬ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন মাসুদ রানা।

দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন এবং একাধিকবার জাতিসংঘ মিশনে অংশ নেন। শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার আগে নিহত মাসুদ রানা যশোর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মাসুদ রানাসহ তারা তিন ভাই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে মাসুদ রানা সবার বড়। আগামী ২০৩১ সালে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু দেশ ও মানবতার সেবায় জীবন উৎসর্গ করে ফিরলেন শহীদের মর্যাদায়।

সেনা সদর দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মানবতার পতাকা বহন করতে গিয়ে কর্পোরাল মাসুদ রানা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাহস, ত্যাগ ও আত্মনিবেদনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তার আত্মত্যাগ জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ বলেন,  শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। আমরা শোকাহত এবং শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।