বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে বাঘের পাশাপাশি হরিণ ও শূকর গণনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন।
‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ এর আওতায় এটি করা হবে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং প্রকল্পটির সময় চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত।
এর আগে ২৩ মার্চ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়।
বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের ইউএনবিকে বলেন, বনের অভয়ারণ্য ও অভয়ারণ্য এলাকার বাইরে এই বাঘ শুমারি করা হবে। বনের কম, মধ্যম ও বেশি লবণাক্ত সব এলাকাই জরিপের আওতায় আসবে।
তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের লক্ষ্য বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা এবং তাদের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা প্রণয়ন করা।’
তিনি জানান, বাঘ প্রধানত হরিণ, শূকর, বানর ও কাঁকড়া খায়। তাই প্রকল্পটির আওতায় এগুলোও জরিপের আওতায় আনা হবে। তবে তা করা হবে শুমারির শেষের দিকে ২০২৪ সালে।’
২০১৮ সালে করা সর্বশেষ জরিপ অনুয়ায়ী, বাংলাদেশের সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ১১৪টি যা ২০১৫ সালে ছিল ১০৬টি।
ড. আবু নাসের বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ২০০ বিশেষায়িত ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। এছাড়া ২০১৮ সালের শুমারিতে ব্যবহৃত প্রায় ৯০টি ক্যামেরাও ব্যবহার করা হবে।
প্রকল্পের অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সুন্দরবনের বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ভিলেজ টাইগার রেন্সপন্স টিমের ৩৪০ জন সদস্য ও কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপের ১৮৫ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এছাড়া তাদের পোশাক সরবরাহ ও প্রতি মাসে বনকর্মীদের সঙ্গে মাসিক সভা করা হবে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের বলেন, বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবনে প্রায় প্রতি বছর আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনের যে অংশে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি, সে জায়গায় দুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ ও সুন্দরবনে আগুন লাগলে যাতে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানো যায় সেজন্য আগুন নেভানোর যন্ত্রাংশ, পাইপ ও ড্রোন ক্রয় প্রকল্পের মাধ্যমে করা হবে।
সুন্দরবনে বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাঘ গ্রামে প্রবেশ করে জানমালের নিরাপত্তা হুমকি হয়ে থাকে। ওই ৬০ কিলোমিটার অংশে নাইলনের বেড়া নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া ২০২২ সালে বিশ্ব বাঘ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, বাঘ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে এমন দেশে ২০ জনের শিক্ষা সফরসহ ৫০০ জনের বিশেষ প্রশিক্ষণের সংস্থান এ প্রকল্পে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বনের সব এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। তখন বনের বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণী আশ্রয়ের জন্য লোকালয়ে প্রবেশ করে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণী ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়ের জন্য সুন্দরবনে ১২টি মাটির কিল্লা স্থাপন করা হবে।
ড. আবু নাসের বলেন, বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের সব কার্যক্রমে পরামর্শক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে বিশেষ প্রশিক্ষণ, জরিপ সম্পন্ন, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের প্রতিবেদন তৈরি ইত্যাদি কার্যক্রমে স্বল্পমেয়াদে ১২ জন পরামর্শক বিশেষজ্ঞের সংস্থান প্রকল্পে রাখা হয়েছে।
এছাড়া সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের সব জরিপ ও গবেষণা কার্যক্রমের প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
৪ দাবিতে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছে উর্দুভাষীরা
শীতে রোগমুক্ত জীবন পেতে সাহায্য করবে যেসব ভেষজ
অন্যতম দর্শনীয় স্থান মহামায়া লেক