দেশের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এই বনের পাশ দিয়ে বয়ে চলা শাকবাড়িয়া ও কপোতাক্ষ নদের তীরে গেলেই দেখা যায় সারি সারি সবুজ কেওড়া গাছ। বর্ষার স্নিগ্ধ পরিবেশে এই গাছগুলোতে শোভা পাচ্ছে অসংখ্য কেওড়া ফল, যা যেন প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। দেখতে অনেকটা লটকন বা ডুমুরের মতো হলেও কেওড়া ফল স্বাদে টক। সুন্দরবনের প্রাণীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য, পাশাপাশি মানুষের জন্যও এর রয়েছে নানা উপকারিতা।
সুন্দরবনের হরিণ, বানর, এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের প্রিয় খাবার এই কেওড়া ফল। ফলটি পাকতে শুরু করলে বনের ভেতরে প্রাণীদের আনাগোনা বাড়ে, যা বনের খাদ্যশৃঙ্খল এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। সাধারণত ফাল্গুন মাসে কেওড়া গাছে ফুল ফোটে এবং চৈত্র-বৈশাখ মাস থেকে ফল ধরতে শুরু করে। আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এই ফল পাওয়া যায়।
কেওড়া ফলের খাদ্যগুণ ও উপকারিতা বৈজ্ঞানিক নাম ও বর্ণনা: কেওড়া ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো (সনেরেশিয়া এপিটিলা)। এটি একটি মাঝারি থেকে বড় আকারের চিরহরিৎ ম্যানগ্রোভ গাছ, যা সাধারণত ২৯ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এই গাছগুলো লোনা মাটিতে সহজে জন্মায় এবং মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখতে সাহায্য করে, যা উপকূলীয় অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
খাদ্যগুণ: কেওড়া ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।
এর টক স্বাদ মূলত সাইট্রিক অ্যাসিডের উপস্থিতির কারণে। এই ফল শুধু মুখরোচকই নয়, পেটের অসুখ, বিশেষ করে বদহজম দূর করতেও এটি কার্যকর। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ এই ফল দিয়ে চিংড়ি মাছ বা মসুরের ডাল দিয়ে সুস্বাদু তরকারি রান্না করে। এছাড়া, কেওড়া ফল থেকে তৈরি আচার ও চাটনি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
পরিবেশগত গুরুত্ব: সুন্দরবনের প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো কেওড়া ফল। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই গাছ ও এর ফল বনের বাস্তুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বনের প্রাণীকূলের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি, সুন্দরবনের মধু উৎপাদনের একটি বড় অংশ আসে কেওড়া ফুল থেকে। এটি লোনা জমিতে জন্মানোর কারণে লবণাক্ততা-আক্রান্ত জমির জন্য একটি বিশেষ ফসল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
বন বিভাগ ও পরিবেশবিদরা কেওড়া গাছের গুরুত্ব তুলে ধরে এর সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। কেওড়া গাছ শুধু বনের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখতেও অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। ফল ও মধুর পাশাপাশি এই গাছ উপকূলীয় অঞ্চলের সুরক্ষায় এক নীরব যোদ্ধা।
মাসুম বিল্লাহ ইমরান
খুলনা ব্যুরো
আরও পড়ুন
জনগনের রায়ে নির্বাচিত হলে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর বিএনপি
সৌদিআরবে অগ্নিকান্ডে নিহত প্রবাসী আকাশ, ছয় মাসেও লাশ আনতে পারেনি পরিবার
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে পিকআপ ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে ৩ জন নিহত