July 10, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, July 9th, 2025, 4:22 pm

স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা ইবি শিক্ষার্থীর, অতঃপর

ইবি প্রতিনিধি:
পারিবারিক কলহ জেরে স্ত্রী ও স্ত্রীর পরিবার যৌতুকের দাবি করলে কৌশলে সংসার ভাঙার অভিযোগ এনে স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুক বিরোধী মামলা দায়ের করেছে তার স্বামী সজীব হাসান। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের শিক্ষার্থী। পরে বিবাদী পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি ও হুমকিধামকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছে সজীব। তবে স্ত্রীর পরিবারের দাবি- যৌতুকের বিষয়ে জানেন না তারা।
জানা যায়, বাদী সজীব হাসানের বাড়ি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার মো. কামরুজ্জামানের ছেলে। তিনি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে গত ১৬ জানুয়ারি (২০২৫) বিয়ে করেন একই উপ-জেলার মো. আজহারুল ইসলামের মেয়ে মাসুদা ইসলাম তৃষাকে। বিবাদী তৃষা খুলনা বিএল কলেজের ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা।  পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কলহে বাদী সজীব পরপর ৪ টা মামলা দায়ের করেছে স্ত্রী-সহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। তিনটি মামলা যশোরে আর একটা কুষ্টিয়া কোর্টে দায়ের করা হয়। যশোরে করা মামলা গুলো হলেন- ২০১৮ সালের যৌতুক বিরোধ আইনের ৩ ধারা (মামলা নং ৩৭৬/২৫), দাম্পত্য জীবন পুনরুদ্ধার (মামলা নং ৩৬/২৫), ফৌজদারি কার্যবিধি ১০০ ধারা (৩৪২/২৫) এবং সর্বশেষ কুষ্টিয়া কোর্টে ফৌ. কা. ১০৭, ১১৭(গ) ও ১১৮ ধারার অধীনে হুমকিধামকি বিষয়ক মামলা দায়ের করা হয়েছে। যৌতুকের মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক দেনমোহরানা বাবদ ২,০০,০০০ টাকা ধার্য্যে রেজি. কাবিন মূলে বিবাহ হয়। বিবাহের পর স্বামী স্ত্রী হিসাবে ঘর সংসার করতে থাকে। সংসার চলাকালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি (২০২৫) স্ত্রী একটি সোনার নেকলেস ও একটি চুড়ি দাবি করে যার আনুমানিক ৪ ভরী স্বর্ণ অর্থাৎ বাজার মূল্য প্রায় ৬,৫০,০০০ টাকা। বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ায় এবং স্থায়ী কোনো উপার্জন না থাকায় উক্ত গহনাদি দিতে পারেননি। পরে ২০ মে বাদীর অগোচরে স্ত্রী তার পিতার বাড়ি চলে যান। পরে বাদীকে শ্বশুর বাড়ি ডেকে বিভিন্ন হুমকি দেয় এবং ৪ ভরী সোনা যৌতুক হিসেবে দিতে না পারলে স্ত্রীকে অন্যত্রে বিয়ে দিবে বলে জানায় বাদীর (স্ত্রী) পরিবার। যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় ২১ মে সকাল ১০ টায় শ্বশুর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় বাদীকে। পরে ২৯ মে স্ত্রী সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা আর দাম্পত্য জীবন পুনরুদ্ধার মামলা দায়ের করেন বাদী (স্বামী)। এরমধ্যে গত ২৩ মে “মানসিক ও পারিবারিক অশান্তি, চরিত্রহীন ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বিয়ে” উল্লেখ করে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাকনামার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এদিকে স্ত্রীকে জোরপূর্বক পিতার বাড়ি রেখে দিয়ে স্বামীকে হুমকিধামকি দিয়েছে মর্মে আরেকটা মামলা করেন স্বামী (বাদী)। পাল্টা মামলা হিসেবে স্ত্রীর পরিবার স্বামীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক মেয়ে অপহরণের মামলা করেছে বলেও জানা গেছে।যশোর জেলায় বাদী (স্বামী) পক্ষ আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাজু আহমেদ জানান, ‘ছাত্র অবস্থায় বিয়ে করায় ঝামেলাটা বেশি হয়েছে। স্ত্রীকে পিতার বাড়িতে মা-বাবা আপাতত রেখে দিয়েছে। দাম্পত্য জীবন পুনরুদ্ধার মামলা করা হয়েছে। মামলা শুনানি পর্যায়ে রয়েছে।’ এদিকে শনিবার (৫ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছে সজীব হাসান। আবেদনপত্রে তিনি জানান, পারিবারিক একটি কলহের জেরে আমি যশোরের বিভিন্ন বিচারিক আদালতে তিনটি মামলা দায়ের করলে বিবাদীগণ আমাকে প্রাণনাশের হুমকি-সহ নানা প্রকার ক্ষয় ক্ষতি করার হুমকি প্রদান করে আসছে। যার কারণে আমি ইবি থানায় নিরাপত্তার স্বার্থে একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি নং-৪৪৯) করি। যশোর থেকে লোক এসে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সরাসরি ডেকে নিয়ে গিয়ে চড়-থাপ্পড় সহ মামলা উঠিয়ে নেবার জন্য হুমকিধামকি দিয়ে গেলে আমি কুষ্টিয়ার বিচারিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। সেই মামলার শুনানিতে গত ৩ জুলাই কুষ্টিয়া আদালতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহনে করে যাই। উক্ত শুনানি শেষে আমি বিশ্ববিদ্যালয় ফেরার উদ্দেশ্যে যখন বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম মজমপুর সংলগ্ন স্থানে তখন আমার মামলার বিবাদী পক্ষ (আজহারুল ইসলাম, যিনি একজন বিএনপির ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি এবং যশোরের স্থানীয় সন্ত্রাসী পর্যায়ের লোক) সহ ১০-১৫ জন কুষ্টিয়ার স্থানীয় সন্ত্রাসী ধরনের ব্যক্তিরা আমাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে এবং ধারালো ও বিপদজনক অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শন করতে থাকে। আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০-২৫ জন ভাই আপুরা ঘটনাটি লক্ষ্য করে আমাকে যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার করে প্রাণে বাঁচিয়ে দেন এবং এমতাবস্থায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এবং একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চেয়ে উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক এরিয়ার ভিতরে সার্বক্ষণিক অবস্থানের অনুমতি প্রদানে এবং যে কোন হলে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি প্রদানে মর্জি হয়। দৈনন্দিন প্রয়োজনে হাটে বাজারে এবং বিচারিক প্রয়োজনে আদালত সহ অন্য কোন স্থানে গেলে যাতে কেউ আমার কোন ক্ষতি না করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে মর্জি হই। মামলার শুনানি শেষে উক্ত ভয়ংকর ঘটনার মতো ঘটনা যেন আর আমার সাথে না ঘটে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে মর্জি হই।কুষ্টিয়া কোর্টে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘আমরা বিভাগের বেশ কয়েকজন ছিলাম। ৫-৬ জন লোক এসে তাকে (সজীব) হুমকিধামকি দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে বলে।’ স্ত্রীর (বিবাদী) পরিবার জানান, ‘যৌতুকের বিষয়ে জানি না, কখনও শুনিনি। মা বাবার অগোচরে বিয়ে করেছে। তৃষাকে বলা হয়েছে দেখেশুনে পা বাড়াও, সে তো এখন দেখতেছে সংসার করার মতো পরিবেশ নাই। তার স্বামী যদি সত্যিকার অর্থে সাংসারিক হয় তাহলে এতগুলো মামলা দিয়ে হয়রানি করবে কেন। আমাদের পরিবার চাকরিজীবীর পরিবার। প্রায় সদস্য সরকারি চাকরি করে, এতগুলো ব্যক্তির নাম দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তালাকনামাও দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়েও কপি পাঠানো হয়েছে। মামলা হামলা নিয়ে আমরা নড়তে চাইনা।’
এদিকে ভুক্তভোগী (বাদী) সজীব বলেন, ‘লাভ ম্যারিজ হওয়ায় পরিবার মেনে নিতে পারছে না। শরীয়া মোতাবেক বিয়ে হয়েছে। ভরণপোষণও ঠিক মতো দিয়েছি। সংসার ভাঙার এখতিয়ার তার পরিবারের নাই। বউয়ের সাথে যোগাযোগ করেছি। ওর মোবাইলেও কেঁড়ে নেওয়া হয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছি। আশাকরি প্রশাসন সুনজর দিবেন।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজামান বলেন, ‘কিছুদিন আগে কুরিয়ার করে স্ত্রীর (তৃষা) অভিভাবক তালাকনামার ডকুমেন্টস পাঠিয়েছিল। কিন্তু এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ারে নাই। ওই শিক্ষার্থী (সজীব) নিরাপদ চেয়ে আবেদন করেছে। বাহিরের বিষয়ে জানি না, তবে ক্যাম্পাসের ১৭৫ একরে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমার- সেটা নিশ্চিত করবো।’