March 29, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, March 25th, 2025, 1:23 pm

স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ হতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশীয় সুতা শিল্পের সুরক্ষায় ভারত থেকে সুতা আমদানি নিষিদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সুতা পোশাক শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল। তবে অধিকাংশ স্থলবন্দরে নেই বিভিন্ন ক্যাটাগরির সুতার মান যাচাই করে শুল্কায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি সক্ষমতা। এ সুবিধার অপব্যবহার রোধে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি নিষিদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, টেক্সটাইল মিল মালিকদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। মিল মালিকদের অভিযোগ ছিল যে, স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় শিল্প। এর বদলে তারা সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে তৈরি পোশাক শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ এই কাঁচামাল আমদানির প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা বলছেন, ভারতীয় সুতা কম দামে কিনতে পারেন পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। এর ফলে বাজারে কোটি টাকার সুতা অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। যদিও পোশাক রপ্তানিকারকদের দাবি, এই সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানার ওপর।

এর আগে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে এক চিঠিতে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করার দাবি জানায় সুতাকল ও বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এছাড়া বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলের সই করা ওই চিঠিটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দেওয়া হয়। সম্প্রতি এনবিআরে প্রাক বাজেট আলোচনায় সুতা আমদানিতে অধিকহারে শুল্ক কর বসানো ও অবৈধভাবে সুতা আমদানি বন্ধ করার সুপারিশ করে সংগঠনটি।

এনবিআরে দেওয়া চিঠিতে বিটিএমএ সভাপতি উল্লেখ করেন যে, বিগত সরকার নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির অনুমতি দেয়। কিন্তু এসব স্থলবন্দরে সুতার মান যাচাই করে শুল্কায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বা কারিগরি সক্ষমতা নেই। শুধু আংশিক আমদানির অনুমোদন দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট শিল্পের পর্যবেক্ষকদের মতে এর ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় সুতাকলগুলো।

চিঠিতে আরও বলা হয়, নতুন অর্থবছরে পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি দেখেছি, অথচ কার্যাদেশ কম পাওয়াসহ বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয় মিলগুলো। বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প যখন মারাত্মক সংকটে তখন বাংলাদেশে ভারতের টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যা দেশের স্বার্থবিরোধী। স্থানীয় শিল্প ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিরুদ্ধে এ ধরনের নীতি নেওয়া হয় যা অবিশ্বাস্য। স্থলবন্দর ব্যবহার করে সুতা আমদানি বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশের টেক্সটাইল শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। ফলে বিদেশি সুতার ওপর আমদানি-নির্ভরশীলতা বেড়ে যাবে আমদানি ব্যয় বাড়বে।

বিটিএমএ বলছে- গ্যাসের মূল্য, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের সংকট, অস্বাভাবিক সুদহার ও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের শর্তাবলি পূরণের অজুহাতে রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার অস্বাভাবিক হ্রাস এবং টাকার অবমূল্যায়নসহ নানা কারণে টেক্সটাইল খাত সমস্যায় পড়েছে। আর ভারত থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ডাম্পিং মূল্যে সুতা আমদানি টেক্সটাইল মিলগুলোকে নতুন এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে।

বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলা বান্ধাসহ অন্য স্থলবন্দর বা কাস্টম হাউসগুলোয় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, সুতার কাউন্ট পরিমাপক যন্ত্র, দক্ষ জনবলের অভাব এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য অনেকাংশে সুষ্ঠুভাবে পরিচালন হচ্ছে না। ফলে সুতার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল আমদানির অনুমতিসহ আংশিক শিপমেন্টের অনুমতি বিদ্যমান থাকায় দেশীয় টেক্সটাইল, বিশেষ করে স্পিনিং মিলগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এছাড়া স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে অননুমোদিত সুতার ব্যাপক বাজারজাতকরণের ফলে টেক্সটাইল মিলগুলো অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয় একই সঙ্গে সরকার ন্যায্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুতা আমদানির ক্ষেত্রে আংশিক শিপমেন্টের অনুমতি দেওয়ার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বহাল থাকায় এ সুযোগের অপব্যবহার করে একটি এলসির বিপরীতে পুনঃচালানে একই এলসির অধীনে একাধিকবার অনুমোদনের চেয়ে বেশি সুতার অনুপ্রবেশ ঘটছে।

এসব কারণে দেশীয় টেক্সটাইল খাতের ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সব স্থলবন্দরের কাস্টম হাউস ব্যবহার বন্ধ করে শুধু সমুদ্রবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলছেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতার ওপর নগদ প্রণোদনা হ্রাসের আগের সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে স্থানীয় মিলগুলোর কাছে সুতার বিপুল মজুত তৈরি হয়েছে। অন্যান্য দেশের সুতা উৎপাদনকারীদের সঙ্গে দামের দিক থেকেও প্রতিযোগিতা করতে পারেননি টেক্সটাইল মিল মালিকরা।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, পোশাক শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ৩০ কাউন্ট সুতার প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ এখন ৩.৪০ ডলার। একই সুতা ভারত থেকে আমদানি করলে ২ ডলার ৯০ সেন্ট দর পড়ছে। যে কারণে স্থানীয় মিল থেকে কেনায় আগ্রহী হচ্ছেন না তারা। তিনি বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করা হলে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে আমদানিতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে এতে সব ধরনের উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।