নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও সমন্বয়হীনতায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। সরকার দেশের নাগরিকদের প্রাথমিক থেকে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মেয়াদি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সরকার। তবে যথাযথ জনবল এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও টারশিয়ারি (শীর্ষ) পর্যায়ের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কোথাও কোথাও ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও তাতে সাধারণ মানুষ প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না। এমনকি দেশের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও নানা জটিলতা ও সমন্বয়হীনতায় সেগুলো অব্যবহৃতই পড়ে রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ করোনা মহামারীর মধ্যেও বিপর্যস্ত স্বাস্থ্যসেবাকে মজবুত করতে পারেনি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারা দেশের ৪২৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৬৬টির কাজ শেষ হয়েছে। তাছাড়া পরিকল্পনা অধিদপ্তর চতুর্থ সেক্টর কর্মসূচির দ্বিতীয় সংশোধনীতে কয়েকটি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র এবং হাসপাতালের প্রস্তাব পরিবার করলেও স্টিয়ারিং কমিটি তা আমলে নেয়নি। কারণ তার আগে যেসব মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র বা হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে তাতে জনবল, আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতির অভাবে সেবা দেয়া যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণায়ের চতুর্থ স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি কর্মসূচিভুক্ত ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট (পিএফডি) শীর্ষক কার্য-পরিকল্পনা ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। সেজন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১১ হাজার ৬৭৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তার আওতায় ছিল মূলত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, পুনর্নিমাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ। একই সঙ্গে তৃতীয় সেক্টর কর্মসূচির আওতায় যেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি তা চতুর্থ সেক্টর কর্মসূচিতে যুক্ত করা হয়। ওই পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন পর্যায়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক স্বাস্থ্য স্থাপনা নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে এখনো সেগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে ২৩ জন (চিকিৎসক, নার্স ও ধাত্রী) স্বাস্থ্য কর্মী থাকার কথা রয়েছে। ওই স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সাধারণত ৫০ শতাংশই নার্স। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী দেশে প্রতি ১০ হাজার মানুষের বিপরীতে রেজিস্টার্ড চিকিৎসক রয়েছে ৬ দশমিক ৭৩ জন। সরকারি হাসপাতালে প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে শয্যা সংখ্যা ৩ দশমিক ৩০টি। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের তথ্যানুযায়ী দেশে প্রতি চিকিৎসকের বিপরীতে ৩ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও রয়েছে দশমিক ৩০ জন। ফলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের কাঠামো ভালো থাকলেও পরিকল্পনায় ঘাটতি ও দক্ষ লোকবলের অভাবে তা ব্যাহত হচ্ছে। কারণ স্বাস্থ্যসেবায় এদেশে এখনো মানবসম্পদে পিছিয়ে রয়েছে। তাছাড়া চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। স্বল্প লোকবল নিয়ে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে স্বাস্থ্যসেবার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা দুরূহ।
সূত্র আরো জানায়, উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের বিভিন্ন পর্যায়ের পদের মধ্যে প্রায় ৫৮ শতাংশই ফাঁকা। রাজশাহীর বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও লোকবল বাড়ানো হয়নি। ফলে রোগীর চাপ বেড়ে গেলে কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়ে। বর্তমানে ৩১ জন চিকিৎসক ও নার্স সেখানে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। লোকবল ও যন্ত্রাংশের চাহিদার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়া হলেও নতুন নিয়োগ হয়নি। ফলে সেখানে স্বাস্থ্যসেবা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। অথচ পরিকল্পনা অনুযায়ী অবকাঠামোর পাশাপাশি জনবল ও যন্ত্রপাতি একসঙ্গে বাড়ানো জরুরি। শুধু ভবন নির্মাণ মানেই শয্যা বাড়ানো হয়ে যায় নাম সেখানে চিকিৎসক, নার্স, আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতিও প্রয়োজন। কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া নানা জটিলতাই পিছিয়ে যায়।
এদিকে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের লোকবল কাঠামোর পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে খুব শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে। তবে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত সব পর্যায়ের লোকবল নিয়োগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করে না।
আরও পড়ুন
আগামী বিজয় দিবস গণহত্যাকারীর শাস্তির রায়ে উদ্যাপন হবে: আসিফ নজরুল
রংপুরে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন মহানগর ও জেলা শাখার দ্বিবার্ষিক সম্মেলন
র্যাব রংপুরে ৩৫১.৩৮ গ্রাম হেরোইন সহ স্বামী-স্ত্রী আটক করেছে