ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রায় ১৫ মাস পর প্রথমবার স্বীকার করলেন, তার সরকারের পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো বিদেশি শক্তির সরাসরি ভূমিকা নেই।
সিএনএন-নিউজ এইটিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের ভালো ও স্থিতিশীল সম্পর্ক রয়েছে। তাই ওয়াশিংটন বা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি সরাসরি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়াদিতে জড়িত, এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই।”
হাসিনা আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস পশ্চিমা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তবে, তাদের সেই প্রশংসাকে ভুলভাবে গণতান্ত্রিক যোগ্যতার পরিচায়ক হিসেবে দেখার প্রবণতা ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, এবং পশ্চিমারা যদি মনে করেন ইউনূস তাদের বন্ধু, তারা প্রতারিত হচ্ছেন।

গত বছরের গণঅভ্যুত্থান ও আগের ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’
অভ্যুত্থানের ঠিক পরেই হাসিনা এবং তার দলের নেতা-কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ী করেছিলেন। ভারতের ইকোনমিক টাইমস-এ ২০২৪ সালের আগস্টে তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে ভূমিকা রেখেছে, কারণ তারা বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ চায়।
তবে প্রায় দেড় বছর ধরে তার অনুসারীরা প্রচার করা ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ এখন তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন। এর আগে গত ৮ নভেম্বর রাশিয়ার আরটি মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার সরকারের মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউএসএআইডি এবং ক্লিনটন পরিবারের সংশ্লিষ্টতা দাবি করেছিলেন।

পতনের পেছনের অভ্যুত্থান ও হত্যাকাণ্ড
গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু হয়। তবে ছাত্রলীগের সহিংস হস্তক্ষেপ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বিতর্কিত মন্তব্য ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তীব্র জনরোষের সৃষ্টি করে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (OHCHR) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় এক হাজার চারশর বেশি মানুষ নিহত হন। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি এবং অস্ত্রের আঘাতে হাজার হাজার মানুষ আহত, বহু মানুষ পঙ্গু হয়েছেন, অনেকের চোখ নষ্ট হয়েছে। ১১,৭০০-এরও বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বিবিসি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং অনুযায়ী, হাসিনা সরাসরি নিরাপত্তা বাহিনীদের আন্দোলন দমন করতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ, প্ররোচনা এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভা সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। রায় ঘোষণা হবে আগামী ১৭ নভেম্বর, সোমবার।
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
দিল্লি যাচ্ছেন খলিলুর রহমান, অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা
দেশের মানুষ উৎসবমুখর নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে: আমীর খসরু
বিবিসিকে হাসিনার সাক্ষাৎকার, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার