জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, বিএনপির জন্ম হয়েছিল ‘হ্যাঁ’ ভোটের মাধ্যমে। তাই যদি তারা ‘না’ ভোটে অনড় থাকে, তাহলে তাদের রাজনৈতিক পরিণতি ঘটবে সেই ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়েই।
তিনি বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আমরা তাদের আহ্বান জানাব— নিজেদের রাজনৈতিক মৃত্যু নিজেরাই ডেকে আনবেন না। ‘না’ ভোটে অনড় না থেকে বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘রাজনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, অস্পষ্টতার ভেতর দিয়ে আমরা দেশের ভবিষ্যৎকে এগিয়ে নিতে পারি না। গণভোট আগে হবে কি না হবে— বিএনপি ও জামায়াত এই ইস্যুতে কুতর্কে লিপ্ত। তাদের উচিত এসব বিতর্ক থেকে বের হয়ে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা। এখন দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়, সংস্কার কমিশনের সুপারিশনামার খসড়া প্রকাশ করতে হবে এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় দেশ যদি গৃহযুদ্ধের দিকে যায়, তার দায় প্রধান উপদেষ্টাকেই নিতে হবে।
জামায়াতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপার হাউজে পিআর, লোয়ার হাউজে এনে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জামায়াত ও বিএনপি একত্র হবে, কারণ তারা আসলে একসঙ্গে কুতর্ক করছে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে অন্তর্ভুক্ত না করার পক্ষে মত দিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অনেকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের পাঁচ লাখ নেতাকর্মীর প্রাণ যাবে— কিন্তু আমরা তাদের গায়ে হাত দেইনি। তবে তারা যদি বাধা দেয়, কঠোরভাবে প্রতিহত করব। বিএনপিকে বলব— আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনবেন না।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে তিনি বলেন, এই কমিশন রাজনৈতিকভাবে ভাগ হয়ে গেছে। ফলে তাদের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কমিশনের গঠন প্রক্রিয়াতেই পক্ষপাতদুষ্টতার প্রমাণ মেলে, যা গণতন্ত্রের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
তিনি আরও বলেন, যদি কমিশন রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত থাকে, তাহলে সেই কমিশনের অধীনে নির্বাচন জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না। এতে ফলাফল পূর্বনির্ধারিত হয়ে যায় এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের বিশ্বাস নষ্ট হয়। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়া গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখা অসম্ভব।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমরা তখন সনদে স্বাক্ষর না করে রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছিলাম, কিন্তু পরবর্তীতে সেটিই প্রমাণিত হয়েছে সঠিক ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত হিসেবে। অনেকে তখন রাজনৈতিক সুবিধার আশায় তাড়াহুড়ো করে সনদে সই করেছিলেন, যা ইতিহাসের ভুল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এখন সংস্কার কমিশনের সুপারিশনামায় প্রস্তাবনা-১ বাস্তবায়নই সরকারের প্রধান করণীয় হওয়া উচিত। এর বাইরে সরকারের বিকল্প পথ থাকা উচিত নয়।
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনামা প্রকাশ না করা নিয়েও প্রশ্ন তুলে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এখন বল রয়েছে ড. ইউনূসের কোর্টে। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী হলেও, বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তবতায় পদক্ষেপ নিতে গিয়ে তাকেও সাবধান হতে হচ্ছে।
আসিফ নজরুলের ভূমিকা নিয়েও তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। বলেন, “যদি ড্রাফটটি প্রকাশ না করা হয়, তাহলে এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্যের আশঙ্কা থেকেই যায়। ড্রাফটটি প্রকাশ করলে দেখা যাবে প্রস্তাবনাগুলো কতটা সঠিক ও বাস্তবসম্মত। সে ক্ষেত্রে এনসিপি তা সমর্থন করবে, কিন্তু জনগণের অজান্তে কোনো প্রক্রিয়ায় আমরা অংশ নেব না।
শেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, যেখানে আস্থাহীনতা, পক্ষপাত ও অনিশ্চয়তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন ও গণভোটের মতো জাতীয় সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই সময়ের দাবি।
এনএনবাংলা/

 
                
আরও পড়ুন
‘শাপলা কলি’ নয় ‘শাপলা ফুল’ চায় এনসিপি
গণভোট নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা: আসিফ নজরুল
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সচিব ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ইসি