অনলাইন ডেস্ক :
সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য তদন্ত কমিটি একাধিকবার ডাকার পরও আসেননি অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। তাই তার সঙ্গে কথা না বলেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে যাচ্ছে কমিটি। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানান পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ও রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল। তিনি বলেন, সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় তার সঙ্গে কথা না বলেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হচ্ছে। যেহেতু আমাদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া আছে এবং গত বৃহস্পতিবার সেই সাতদিন শেষ হচ্ছে, তাই আমাদের আর অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আমরা তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছি। এখন প্রতিবেদন প্রস্তুত করে আগামী দু-একদিনের মধ্যেই জমা দিয়ে দেবো। তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে গত ৩ অক্টোবর দুপুর ১২টায় তদন্ত কমিটির কাছে এসে তার বক্তব্য উপস্থাপন করার সময় দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে উপস্থিত না হয়ে একটি ই-মেইলে ১৪ দিনের সময় দরকার বলে জানিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় দ্বিতীয় দফায় অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে উপস্থিত হয়ে তদন্ত কমিটির কাছে তার বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলা হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটি বিকেল ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও তিনি আসেননি। অভিযুক্ত শিক্ষিকা সশরীরে উপস্থিত না হয়ে আবারও সেই আগের মতোই ই-মেইলের মাধ্যমে নিজেকে অসুস্থ দাবি করে আরও ১৪ দিনের সময় চেয়েছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান ও রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় তাদের ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যেহেতু প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় গত বৃহস্পতিবারই শেষ এবং অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে একাধিকবার ডাকার পরও আসেননি, তাই আর দেরি না করে আগামী দু-একদিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তবে প্রতিবেদনে অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগে এ বিষয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত শিক্ষিকা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রেজারার আবদুল লতিফ বলেন, যদি অভিযুক্ত শিক্ষিকা বারবার না আসে তাহলে তো সবকিছু ঝুলিয়ে রাখা যাবেনা। এ ঘটনার সত্য উন্মোচনে যেহেতু রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সিনেট সদস্য লায়লা ফেরদৌস হিমেলকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা কাজ করছেন সেহেতু তারা সবকিছু বিবেচনা করেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। তিনি আরও জানান, কমিটির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের ওপরে ভিত্তি করে সিনেট সভায় পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি এতে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটাও সিনেট সভা থেকেই সুপারিশ করা হবে। সেই সুপারিশ অনুযায়ীই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা যায়, গত রোববার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে ৫ সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সেমিনার কক্ষে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এই সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম চলে। কিন্তু সেদিন দুপুর ১২টায় অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন উপস্থিত না হয়ে ১৪ দিনের সময় প্রার্থনা করেন। এর প্রেক্ষিতে তাকে তিনদিনের সময় দেন তদন্ত কমিটি। যার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় তাকে উপস্থিত হয়ে তদন্ত কমিটির কাছে তার বক্তব্য উপস্থাপন করার কথা বলা হয়েছিল। গত ২৬ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার হলের দরজায় দাঁড়িয়ে একে একে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেন শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। এ অপমানে নাজমুল হাসান তুহিন নামের এক শিক্ষার্থী অতিমাত্রার ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন
সায়েন্স ল্যাবে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ
ডেঙ্গুতে হাজারের বেশি আক্রান্ত, একজনের মৃত্যু
বৈঠক করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিতুমীরের ১৪ শিক্ষার্থী