November 4, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, November 3rd, 2025, 6:16 pm

১৫ বছর ধরে হুইলচেয়ারে বন্দী জীবনের প্রহর গুনছেন সো‌হেল হাঁটতে না পারলেও বাঁচতে চান

সখীপুর (টাঙ্গাইল):

১৫ বছর ধরে শুয়ে ও হুইলচেয়ারে বসে বন্দী জীবনের প্রহর গুনছেন ৩৭ বছর বয়সী সোহেল। পা থাকলেও তাতে চলার শক্তি নেই। ২২ বছর বয়সে বিদ্যুতের লাইনে কাজ করার সময় গাছ থেকে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। ভেঙে যায় মেরুদণ্ডের হাড়, এরপর থেকেই ঘরের চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তার জীবন। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে প্রসাব-পায়খানাও করতে হয় ঘরের ভেতরেই।

ঘটনাটি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের টাঙ্গাইল্যা চালা এলাকার। একসময় ছিলেন পরিশ্রমী বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। সংসারের স্বপ্ন গুছিয়ে নেওয়ার সময়েই ঘটে জীবনের বড় দুর্ঘটনা। সেই দুর্ঘটনার পর পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করানো হলেও অর্থাভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেননি সোহেল। এখন কোমরের নিচ থেকে পুরো শরীরই অবশ। দীর্ঘদিন শুয়ে ও বসে থাকতে থাকতে কোমরে ঘাঁও হয়ে গেছে।

দুর্ঘটনার ছয় মাস পরই সংসার ছেড়ে চলে যান স্ত্রী ইসমতআরা। তারপর থেকে বৃদ্ধ মা রোবিয়া বেগম ও বড় বোন রাবিয়ার যত্নেই কাটছে তার জীবন। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে মা রোবিয়া বেগমেরও দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে। ২১ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ায় বড় বোন রাবিয়াও চলে এসেছিলেন বাবার বাড়িতে। পরিবারে এখন উপার্জনক্ষম কেউ নেই—মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা।

বোন রাবিয়া বলেন, ‘২১ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর বাবার বাড়িতে আছি। মা ১৫ বছর ধরে ভাইয়ের সেবা করছে একা, এখন তাঁর কিডনিতেও সমস্যা। কেউ সাহায্য না করলে খেয়ে বাঁচাও কঠিন হয়ে পড়েছে।’

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে সোহেল বলেন, ‘দুর্ঘটনার ছয় মাস পর স্ত্রী চলে যায়। এখন মা ছাড়া কেউ নেই। মা অসুস্থ হলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। ঘরও ভেঙে পড়েছে, মা-বোনের সঙ্গে একই ঘরে থাকি। সুস্থ থাকলে হয়তো এসব হতো না। দেশের মানুষ ও প্রবাসীদের কাছে সাহায্য চাই।’

রোবিয়া বেগম বলেন, ‘ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমি সেবা করছি। এখন আমারও শরীরে শক্তি নেই, কিডনিও খারাপ। মানুষ দিলে খেতে পারি, না দিলে না খেয়েই থাকতে হয়। ছেলে যদি সুস্থ থাকতো, কারও কাছে হাত পাততে হতো না।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ জানান, ‘সোহেল সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে এবং তার মা বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। তবে যেহেতু তাদের পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই, তাই সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি। সরকারিভাবে সহযোগিতার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হবে।’

হাঁটতে না পারলেও বাঁচতে চান সোহেল। প্রতিদিনের তিনবেলা খাবারই যেখানে দুষ্কর, সেখানে চিকিৎসার খরচ জোগাড় করা তার জন্য অসম্ভব। স্থানীয়দের দাবি—সরকার, প্রবাসী বা সমাজের দয়ালু মানুষ কেউ যদি এগিয়ে আসে, তাহলে হয়তো সোহেল ও তার

অসহায় পরিবার একটু স্বস্তিতে শ্বাস নিতে পারবে।