অনলাইন ডেস্ক :
দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে দেখা যায়নি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের কন্যা শামসা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদকে।
২০০০ সালে ক্যামব্রিজের রাস্তা থেকে অপহৃত হন এই রাজকুমারী। তার বোন প্রিন্সেস লতিফার ঘটনা বিশ্ববাসী জানলেও অনেকটাই আড়ালেই থেকে গেছে শামসার নিখোঁজ রহস্য।
ওই বছরের মাঝামাঝিতে বাবার বাড়ি থেকে পালিয়ে যান প্রিন্সেস শামসা। পালিয়ে যাওয়ার দুই মাস পর লন্ডনের ক্যামব্রিজশায়ারে ধরে পড়েন তিনি। এরপর থেকেই আর দেখা মেলেনি।
যখন কিশোরী ছিলেন কীভাবে পরিবার থেকে পালানো যায় সে বিষয়ে এক চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। এর কয়েক মাস পরই ১৮ বছর বয়সে রাজ পরিবার ছেড়ে বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করেন।
২০০০ সালের আগস্টে একটি কালো রঙের রেঞ্জ রোভার গাড়ি চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন শামসা। ক্যামব্রিজের এক রাস্তা থেকে অপহরণের আগে দুবাইতে ফিরিয়ে আনার জন্য রাজকন্যার খোঁজ চলে। পালানোর আগে এক চিঠিতে তার উপর নির্যাতনের বেশ কিছু ঘটনা তুলে ধরেন। নিখোঁজের পর দীর্ঘ সময় ধরে চলে তদন্ত।
তদন্তের দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ডেভিড বেক এ সংবাদমাধ্যম সানডে মিররকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার তদন্ত থেকে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শামসার সঙ্গে কী হয়েছিল তার তদন্তে বাঁধাও দেওয়া হয়েছিল।’
এই পুলিশ কর্মকর্তার বিশ্বাস, নিখোঁজের সঙ্গে দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ জড়িত আছেন। আর এ কারণেই আমাকে আরব আমিরাতে যেতে বাঁধা দেওয়া হয়’।
সেসময় দুবাইয়ের রাজপরিবারে কাজ করতেন মিসেস জহাইয়েনেন। যিনি শামসাকে যিনি খুব খাছে থেকে দেখেছেন।
সংবাদমাধ্যম নিউজ ডট এইউকে জানান, নিখোঁজের আগে নির্যাতনের শিকার, কারাগারে বন্দি এমনিক জোর করে মাদক নিতে বাধ্য করানো হতো শামসাকে। দিনের পর দিন নির্যাতনের শিকার প্রিন্সেস তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলেও জানান জহাইয়েনেন।
সংবাদমাধ্যমটিকে তিনি বলেন, ‘রাজকন্যাকে তার মায়ের কক্ষে আটকে রাখা হতো। প্রিন্সেস শামসাকে দু’বার দেখার সুযোগ হয়। ২০০১ সালের প্রথম দেখায় তাকে খুবই অস্থির দেখাচ্ছিলো। দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালে তার এক বোনের বিয়েতে দেখা যায়। বোনের বিয়েতে শামসাকে দেখে একদমই চেনা যাচ্ছিল না। তার স্বাস্থ্যের অবনতির বিষয়ে লতিফা আমাকে জানান খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দেওয়ায় শারীরিক অবস্থার অবনিত ঘটে।’
এদিকে গত কয়েক মাস ধরে কোনও খোঁজ না পাওয়া দুবাইয়ের শাসকের মেয়ে রাজকন্যা লতিফার নতুন একটি ছবি সামনে এসেছে। ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করা এই ছবিতে তাকে এক বন্ধুর সঙ্গে স্পেনের মাদ্রিদ বিমানবন্দরে দেখা গেছে। আর এ বিষয়ে সন্তোষ জানিয়েছেন মিসেস জহাইয়েনেন।
তিনি বলেন, একটা খারাপ সময় পার হওয়ার পর তাকে হাসি খুশি দেখা গেছে।
প্রিন্সেস লতিফা দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের ২৫ সন্তানের একজন। ২০১৮ সালের ফেব্রয়ারি মাসে পারিবারিক বিধিনিষেধ ভাঙার চেষ্টায় পালাতে গিয়ে তিনি ভারত মহাসাগরে একটি নৌকায় ধরা পড়েন এবং কমান্ডোরা তাকে দুবাইয়ে ফিরিয়ে নেয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে বিবিসি তার একটি ফুটেজ প্রচার করে। তাতে রাজকন্যা লতিফা দাবি করেন তাকে একটি ভিলায় আটকে রাখা হয়েছে আর জীবনের শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আর বড় বোন প্রিন্সেস শামসাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে বার বার অভিযোগ করে আসছেন লতিফা। শামসার নিখোঁজের পুনঃতদন্ত চান দুবাইয়ের এই রাজকুমারী। যদিও দুবাইয়ের রাজ পরিবার জানিয়েছেন, রাজকুমারী শামসা নিরাপদে আছেন।
আরও পড়ুন
হাসিনার মতো ‘বিশ্বস্ত মিত্র’কে হারানোর ঝুঁকি নেবে না ভারত
ডেঙ্গুতে এক দিনে মারা গেছেন আরও ৪ জন
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে ৩৮ জনের মৃত্যু, আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় শোক পালন