জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, অব্যাহত আলোচনার মাধ্যমে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই ঐতিহাসিক জুলাই সনদের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় পৌঁছাতে যাচ্ছে কমিশন।
সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের ২০তম দিনের বৈঠকের শুরুতে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে এ কথা বলেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আপনাদের সহযোগিতা আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে আমাদের একটি সনদের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় নিয়ে যেতে পারবে বলে আমরা আশা রাখি।
তিনি আরও বলেন, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে বারবার আমরা পরিবর্তন ও সংস্কার করি এই কারণে যে, এতে করে যেন সকলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে একমত হতে পারে। এ পর্যন্ত ১২টি বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। যদিও দুটি বিষয়ে নোট অফ ডিসেন্ট রয়েছে। তবুও আমি বলব, যেহেতু সবাই ছাড় দিচ্ছেন, সে কারণে এই ঐকমত্য গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।
কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলো কোনো না কোনোভাবে আমাদের নিষ্পত্তি করতেই হবে। যেমন ধরুন- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের সবার দীর্ঘদিনের সংগ্রাম রয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি কাঠামো আমাদের জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে আমরা এ রকম ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আরেকবার না যাই। এ কারণেই বারবার আলোচনা করার মাধ্যমে আপনাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়ে, তা পরিবর্তন পরিমার্জন ও প্রয়োজনে সংশোধন করা হচ্ছে।
এ সময় আলোচনা একইভাবে অব্যাহত রেখে আগামী দুই-একদিনের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছানোর জন্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরো বলেন, আমরা জাতীয় সনদে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে যুক্ত করে, তা জাতির সামনে উপস্থাপন করে সবাই মিলে সই করে একটি ঐতিহাসিক দলিল তৈরি করতে চাই। যেই ঐতিহাসিক দলিলের মধ্যে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পথরেখা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সব বিষয়ই যে আমরা এতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারব, তা আমরা কখনোই মনে করিনি। বরং যে সব বিষয় রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক, সে বিষয়গুলোই আমরা বিবেচনা করেছি।
যারা ভবিষ্যতের জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন অথবা রাজনীতিতে যুক্ত থাকবেন, তারা ভবিষ্যতে কমিশনের এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত রয়েছেন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দ্রুত জুলাই সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত সকল বিষয় ঐকমত্য গড়তে আগামী কিছুদিন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা চলমান থাকবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই: প্রধান উপদেষ্টা
চাঁদাবাজ যত প্রভাবশালীই হোক কোন ছাড় নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গণঅভ্যুত্থান না হলে নির্বাচনের স্বপ্ন দেখতে পারতেন না: নাহিদ ইসলাম