March 18, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, March 17th, 2025, 3:29 pm

‘বিনিময়’ অ্যাপে লোপাট ৬৫ কোটি,আরও বিনিয়োগ চেয়েছিল ২৭৭ কোটি টাকা

রোববার ১৩ নভেম্বর ২০২২ বেলা ১১টয় বিনিময় সেবার উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ছবি: আইসিটি বিভাগ

 

মোঃ মোজাহেদুল ইসলাম

রোববার ১৩ নভেম্বর ২০২২ বেলা ১১টয় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘বিনিময়’ সেবার উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক মাস আগে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ পাঁচ বছরের জন্য আর্থিক লেনদেন প্ল্যাটফর্ম ‘বিনিময়’-এ বড় অঙ্কের বিনিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

এই প্রকল্পের জন্য আইসিটি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ২৭৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু ‘বিনিময়’ চালুর পর এটি তেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি।

আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, এই প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে। তবে অভিযোগ আছে যে, এই উদ্যোগটি আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের জন্য আর্থিক সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই উদ্যোগটি বাতিল করেছে আইসিটি বিভাগ। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, “প্রস্তাবটি বাদ দেওয়া হয়েছে।”

২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ইউনিটের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) প্রকল্পের আওতায় ৬৫ কোটি টাকার বিনিয়োগে ইন্টার-অপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম (আইডিটিপি) ‘বিনিময়’ চালু হয়, যা ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এর মধ্যে আর্থিক লেনদেনের সুবিধা দেয়।

বিনিময় চালুর পর তা সুবিধা করতে পারেনি। বিনিময়ে লেনদেন তেমন না হওয়া সত্ত্বেও থেমে থাকেনি আইসিটি বিভাগ। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে ২৭৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ‘বিনিময় প্ল্যাটফর্ম উন্নত ও স্থিতিশীলকরণ’ নামের প্রকল্পের উদ্যোগ আইসিটি বিভাগের আগ্রহে গ্রহণ করা হয়েছিল।

প্রকল্প প্রস্তাবের উদ্দেশ্য-লক্ষ্যে বলা হয়েছিল, প্ল্যাটফর্মটি সমৃদ্ধ করা, কারিগরিভাবে আরও শক্তিশালী করা, পরিচালনায় সহায়তার পাশাপাশি সরকারি বিল, বেতন-ভাতা, কর-ভ্যাট সংগ্রহ, পেনশন, মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জের মতো সুযোগ তৈরি করা।

আইসিটি বিভাগ সূত্র বলছে, যে প্রকল্প থেকে ‘বিনিময়’ তৈরি করা হয়েছে, সেখানে বেশি অর্থ ব্যয়ের সুযোগ ছিল না। তাই এখান থাকে আরও লাভবান হতে বিসিসিকে দিয়ে আরেকটি প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গত জানুয়ারিতে জানিয়েছেন, মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) আন্তলেনদেন পরিচালনার জন্য ‘বিনিময়’ নামের যে প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে, তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের শেল কোম্পানির দ্বারা পরিচালিত। এমএফএসের আন্তলেনদেন ব্যবস্থার অগ্রগতির একটি বড় কারণ হল, এটি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়া ছিল।

সজীব ওয়াজেদের পাশাপাশি সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ছেলে জারেফ হামিদও এ প্ল্যাটফর্মটির সুবিধা গ্রহণ করেছেন। ‘বিনিময়’ প্ল্যাটফর্মটি যৌথভাবে তৈরি করেছে ওরিয়ন ইনফরমেটিক্স, মাইক্রোসফট, ফিনটেক লিমিটেড, এবং সেইন ভেঞ্চারস। এর মধ্যে ফিনটেক লিমিটেড নসরুল হামিদের স্ত্রী সীমা হামিদ এবং ছেলে জারেফ হামিদের, ২০২২ সালে এটি পরিবর্তন করে ভেলওয়্যার লিমিটেড নামকরণ করা হয়। ভেলওয়্যারের মালিকানা রয়েছে জারেফ হামিদ এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি প্রাইম হোল্ডিংস এলএলসি। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিনিময় পরিচালনার জন্য ভেলওয়্যারের সঙ্গে চুক্তি করেছে।

‘বিনিময়’ তৈরির আগে, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একই ধরনের সেবা চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেবাটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেবাটি চালু হয়নি, কারণ আইসিটি বিভাগ এতে যুক্ত হয় এবং নতুন সরকারি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

সূত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ‘বিনিময়’ প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করতে ইচ্ছুক নয়। নতুন একটি সেবা থাকবে, তবে ‘বিনিময়’ ব্যবহার করা হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।

বিনিময়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, ভেলওয়্যারের সঙ্গে চুক্তির শর্তাবলী পালন করা হচ্ছে না এবং তাদের কাছ থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেবা পায়নি। এ বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে, এবং যথাযথ জবাব না পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক চুক্তিটি রাখতে চায় না, কারণ সেবাটি প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এছাড়া, ভেলওয়্যারের সঙ্গে যে চুক্তিটি হয়েছে, সেটির সবকিছু বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে প্রস্তুত করে দেয়া হয়েছিল।

সরকার পতনের পর পরই আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে ‘বিনিময়’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার উদ্দেশ্যে ‘বিনিময়’ তৈরির আলোচনা শুরু হয়। ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত ‘বিনিময়’-এর গ্রাহক সংখ্যা ৩ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ জন পৌঁছেছে, এবং প্রতিদিন গড়ে ২৮–৩০ লাখ টাকা লেনদেন হয়। ওই সময়ের মধ্যে ‘বিনিময়’ এ ৮৯ কোটি ৮২ লাখ ২৮ হাজার ৩৫০ টাকার লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে।