নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামীকাল ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ পালন করবে সরকার। এ সময়ে জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ, অবৈধ জাল তৈরি, পাচার রোধ, অবৈধ পরিবহন ও মজুদদারি রোধে কাজ করবে সরকার।
সোমবার (৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইলিশকে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এ সরকার কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল পালন করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, এ বছরে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে ‘জাটকা ধরা বন্ধ হলে, ইলিশ উঠবে জাল ভরে’। জাটকা হচ্ছে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের ছোট আকারের ইলিশ। ১ কেজি ওজনের ইলিশ কমপক্ষে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার এবং ২ কেজির অধিক হলে ৬০-৬২ সেন্টিমিটার হবে। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের মাধ্যমে জাটকাকে ইলিশে রূপান্তর করা হবে।
এ সময় তিনি বলেন, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দেশে ৫ লাখ ২৯ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। দেশজ জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশের বেশি। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এ দেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে। ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, এ দেশের প্রায় ৬ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০-২৫ লাখ লোক ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই ইলিশ সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের হাতের নাগালে ইলিশ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।
এবার দেশের ইলিশ সমৃদ্ধ ২০টি জেলায় (ঢাকা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠী, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, সিরাগঞ্জ) ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৫’ উদযাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে সাত দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় এবং মাঠ পর্যায়ে অর্থাৎ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উপযোগী কর্মসূচি পালিত হবে। এ বছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠান আগামী ৮ এপ্রিল বরিশাল বিভাগের ইলিশ সমৃদ্ধ অন্যতম জেলা বরিশাল জেলার সদর উপজেলার বেলস্ পার্কে অনুষ্ঠিত হবে এবং বরিশাল সদর উপজেলার ডিসি ঘাট সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে নৌ র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
বঙ্গোপসাগরে সব প্রকার মাছ আহরণ নিষিদ্ধ:
এদিকে, সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা-২০২৩ এর ৩(১) বিধি অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সব প্রকার মৎস্য ও ক্রাস্টাশিয়ান্স আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণ ১২.৭৮% বৃদ্ধির রেকর্ড রয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয় যাতে সামুদ্রিক মৎস্য বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এ কমিটি বিজ্ঞানসম্মত তথ্যাদি যাচাই করে বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকাল ১৫ এপ্রিল হতে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ (আটান্ন) দিন নির্ধারণের সুপারিশ করে। এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিগত ১৬ মার্চ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
যার ফলে, সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা ২০২৩ সংশোধন করে সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ (আটান্ন) দিন সব প্রকার মৎস্য নৌযানের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর থেকে আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
বিগত সরকারের ব্যর্থতায় ভিয়েতনামে চলে যায় স্যামসাংয়ের ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ
মিডিয়ার ভিউ ব্যবসার ফাঁদে পরীমণির সম্মানহানি হচ্ছে: শেখ সাদী
গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের দখলে