নিজস্ব প্রতিবেদক
৭১টি টেস্ট, ২৪৭টি ওয়ানডে, ১২৯টি টি–টোয়েন্টি। সঙ্গে যোগ করে নিন দুনিয়ার সব বড় বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা অসংখ্য ম্যাচ। কোথাও কেউ কোনো দিন সাকিব আল হাসানের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে কিঞ্চিৎ পরিমাণ সন্দেহও প্রকাশ করেনি।
অথচ সারের হয়ে ইংলিশ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের ডিভিশন ওয়ানের এক ম্যাচে তাঁর অ্যাকশন নাকি সন্দেহজনক মনে হয়েছে আম্পায়ারদের! কেন ঘটল এই ঘটনা? কেন আম্পায়ারদের মনে হলো সাকিবের অ্যাকশনে গড়বড় হচ্ছে? কেন সন্দেহের আতশি কাঁচের তলায় পড়ল তাঁর বোলিং!
এ নিয়ে কথা বলেছে সাকিবের দুই ক্রিকেটগুরু ও কোচ নাজমূল আবেদীন এবং মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে। তাঁদের দুজনের কারও অভিজ্ঞতাতেই নেই, সাকিব কোনোকালে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সমস্যায় ভুগেছেন। শুধু তাই নয়, এবার ইংল্যান্ডে যে সমস্যায় পড়েছেন, সেটাকেও গুরুতর কিছু বলে মনে হচ্ছে না নাজমূল ও সালাউদ্দিনের। সালাউদ্দিন তো এ নিয়ে সাকিবের সঙ্গে কথাও বলেছেন।
বর্তমানে বিসিবির পরিচালক নাজমূল বিকেএসপির কোচ হিসেবে অনূর্ধ্ব–১৬ পর্যায় থেকেই সাকিবকে খুব কাছ থেকে দেখে আসছেন। বিভিন্ন সময় সাকিবের অনেক ক্রিকেটীয় সমস্যার সমাধানও বাতলে দিয়েছেন তিনি। সেই নাজমূল অনেক ভেবেও মনে করতে পারলেন না কখনো নিজের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সাকিব কোনো সমস্যায় পড়েছিলেন কি না।
সমারসেট–সারে ম্যাচে বোলিং করছেন সাকিব। এই ম্যাচেই প্রশ্ন উঠেছে তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে
তবে ইংলিশ কাউন্টির আম্পায়ারদের পর্যবেক্ষণ একেবারেই ভুল, তা বলছেন না তিনি, ‘ইংলিশ কাউন্টির একজন আম্পায়ার তো এমনি এমনি এটা বলবে না। তিনি নিশ্চয়ই বুঝেশুনেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।’
অনুমানের ভিত্তিতে সাকিবের অ্যাকশনের সম্ভাব্য একটা সমস্যার কথাও বললেন নাজমূল, ‘যেটা ঘটে থাকতে পারে, অনেক বোলিং করার কারণে যদি ওর স্পিনিং ফিঙ্গার ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন বল টার্ন করাতে যদি অন্য ফিঙ্গার ব্যবহার করতে চায়, তাহলে অ্যাকশনে পরিবর্তন আসতে পারে। বোলার যদি হাতটাকে অন্যভাবে ব্যবহার করে বল ঘোরাতে চায়, নিজের অজান্তেই অ্যাকশন বদলে যাবে।’
তবে নাজমূলের বিশ্বাস, সেক্ষেত্রেও হাত কনুই বাঁকানোর গ্রহণযোগ্য সীমা অতিক্রম করবে না, ‘তারপরও এতে কনুই ১৫ ডিগ্রির বেশি বাঁকা হবে বলে আমার মনে হয় না। আমার মনে হয় পরীক্ষা দিলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।’
সাকিবের সব সময়ের কোচ সালাউদ্দিনের কাছে এটাকে বড় কোনো সমস্যা মনে হচ্ছে না, ‘এটা বড় কোনো সমস্যা নয়। এমন নয় যে, এখন আর কোথাও সে বোলিং করতে পারবে না। শুধু ইসিবির অধীন খেলায় বোলিংটা বন্ধ রাখতে হবে। অন্য সব জায়গাতেই সে বোলিং করতে পারবে।’
সংবাদমাধ্যমে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহের খবর আসার পর মুঠোফোনে সাকিবের সঙ্গে কথা হয়েছে সালাউদ্দিনের, ‘ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ঘটনাটা সত্যি কি না। ও বলল, হ্যাঁ, ওরা ধরেছে ওর অ্যাকশন। সে বিষয়টা জানে।’
সাকিবের অ্যাকশন নিয়ে যদিও আগে কখনো প্রশ্ন ওঠেনি, কাউন্টিতে ওঠা প্রশ্নটাকে তবু স্বাভাবিক দৃষ্টিতেই নিচ্ছেন সালাউদ্দিন, ‘যেকোনো ম্যাচে যেকোনো বোলারের যে কোনো ডেলিভারিতে অ্যাকশন সন্দেহজনক মনে হলে আম্পায়াররা তা ধরতে পারেন। এটা কোনো বড় ইস্যু নয়। এর জন্য যে তাঁর বোলিং অ্যাকশন অবৈধ হয়ে গেছে, তা নয়। শুধু ইংল্যান্ডে ইসিবির অধীনে কোনো ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট খেললেই তাঁকে অ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়ে খেলতে হবে। অন্য জায়গায় এটা কোনো সমস্যা নয়।’
পাকিস্তান সফর শেষে গত সেপ্টেম্বরে কাউন্টির এই টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলেন সাকিব। ইংল্যান্ডের খেলা থাকায় তখন সারের ৮ জন নিয়মিত ক্রিকেটার ছিলেন না। তাঁদের মধ্যে ছিলেন দুই স্পিনার উইল জ্যাকস ও ড্যান লরেন্সও।
সে জন্যই জাতীয় দলের হয়ে পাকিস্তান ও ভারত সফরের মাঝে একটি ম্যাচ সারের হয়ে খেলেন সাকিব। ২০১১-১২ মৌসুমের পর কাউন্টিতে এটিই ছিল তাঁর প্রথম ম্যাচ ছিল। টন্টনে সমারসেটের বিপক্ষে সে ম্যাচে সাকিব ৯ উইকেট নিলেও সারে হেরে যায় ১১১ রানে। ওই ম্যাচে সাকিব বোলিং করেছিলেন ৬৩ ওভার। ওই ম্যাচের প্রায় দুই মাস পর জানা গেল, ওই সাকিবের অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন আম্পায়াররা।
তবে সালাউদ্দিনের দৃঢ় বিশ্বাস, সাকিবের অ্যাকশনে সমস্যা নেই। আর যদি সে রকম কিছু হয়েও থাকে, নাজমূলের মতো তাঁরও ধারণা, সেটা হতে পারে ম্যাচে অনেক বেশি বোলিংয়ের কারণে, ‘আমার মনে হয় না ওর অ্যাকশনে কোনো ঝামেলা আছে। অনেক বেশি বল করেছে, হয়তো কোনো একটা পর্যায়ে আম্পায়ারের কিছু মনে হয়েছে। আঙুলের সমস্যার কারণেও এক-দুটি ডেলিভারিতে এটা হতে পারে।’
জাতীয় দল এবং জাতীয় দলের বাইরেও সাকিবকে নিয়ে অনেক কাজ করেছেন সালাউদ্দিন। একবার তো আইপিএলের মাঝে সাকিব তাঁকে ভারতেও নিয়ে গিয়ে আলাদা অনুশীলন করেছেন। নাজমূলের মতো সালাউদ্দিনের কখনো মনে হয়নি সাকিবের অ্যাকশনে সমস্যা আছে।
তবে স্মৃতি হাতড়ে সালাউদ্দিনের যেন মনে হলো, অনেক বছর আগে কিছু একটা হয়েছিল, ‘ও যখন অনূর্ধ্ব-১৭ দলে ছিল, তখন সম্ভবত একটা আলোচনা হয়েছিল এ নিয়ে।’ যদিও সাকিবের তখনকার কোচ নাজমূল বলেছেন, এরকম কিছুই তাঁর মনে পড়ছে না, ‘অনূর্ধ্ব–১৬ থেকে আমি ওর কোচ। এমন কিছু মনে করতে পারছি না। ওর অ্যাকশন নিয়ে কখনোই কোনো সংশয় কাউকে প্রকাশ করতে দেখিনি।’
ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে সাকিবের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পরীক্ষা দেবেন সাকিব। যদিও সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘এটা বড় কোনো ইস্যু নয়। সাকিব বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত নয়, চিন্তিত হওয়ারও কিছু নেই। পরীক্ষা নিয়ে এত তাড়াহুড়ারও কিছু নেই।’
আরও পড়ুন
সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিবন্ধনসহ যা করতে হবে পর্যটকদের
জান্নাতে বাবা-মায়ের সাথে সন্তানরা যেভাবে মিলিত হবে
কিশমিশ-মনাক্কায় যত উপকার