November 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, November 7th, 2024, 6:04 pm

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে স্যালাইন পাচ্ছেন না ডেঙ্গু রোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তরল স্যালাইন পাচ্ছেন না পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীরা। এ স্যালাইন হাসপাতাল থেকে দেওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না বলে অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের।

সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু রোগীরা। তবে শয্যা সংকটে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। দু-চারজনের কাছে মশারি থাকলেও বেশিরভাগ রোগী মশারি ছাড়াই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে হাসপাতালের অন্যান্য রোগীরা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। এ আশঙ্কা থেকে মুক্ত নন চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা।

রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতাল থেকে রোগীরা তরল স্যালাইন পাচ্ছেন না। স্যালাইন চাইলে বলা হয় সাপ্লাই নেই। বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে তাদের।

ঈশ্বরদীর আওতাপাড়ার বাসিন্দা ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র লিমন বলেন, ‘তিন দিনের জ্বর নিয়ে গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ভর্তির পর থেকে হাসপাতাল থেকে সকালে দুটা নাপা ট্যাবলেট দিয়েছে। স্যালাইন ট্যালাইন কিচ্ছু দেয় নাই। চাইলে বলে সাপ্লাই নাই। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় অন্তত স্যালাইনটা পাবার কথা, সেটিও মিলছে না। তাহলে গরিব মানুষ এখানে কীভাবে চিকিৎসা নেবে?’

পাবনা শহরের শাপলা প্লাস্টিক এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন। ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) শ্যালকও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এদের দেখভালের পুরো দায়িত্ব তার ওপর।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘অন্তত স্যালাইনটা পাওয়ার কথা। কিন্তু সেটাও মিলছে না। তাদের নাকি সাপ্লাই নেই। প্রতিবছরই এগুলো দেখতে হয়। ডেঙ্গু এলেই স্যালাইন সংকট। হাসপাতালের ঊর্ধ্বতনরা বলেন আছে, রোগীরা চাইলে নেই।’

রূপপুরে কাজ করতেন আতাইকুলার সিরাজুল ইসলাম। সেখান থেকেই জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বলেন, ‘এখানে দরিদ্ররা চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের অভিভাবকরা অত কিছু বোঝেন না। প্রয়োজনে নার্স বা ডাক্তারদের ডাকলে তাদের পাওয়া কঠিন, অনেক দেরিতে আসেন। সিনিয়র নার্সদের সঙ্গে কথাই বলা যায় না। হাসপাতাল দালালে ভরা। এসে খুব হয়রানি করে। স্যালাইন বা অন্যান্য ওষুধ তো পাওয়া অসম্ভব।’

নারায়ণগঞ্জের ডেমরার একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করেন আশিকুর রহমান। ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে দুপুরে ভর্তি হয়েছেন। গায়ে স্যালাইন পুশ করা। সেটি বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে যে পরিবেশ তাতে ভালো হবো নাকি অসুস্থ হবো বুঝতে পারছি না।’

রোগী ও তার স্বজনদের অভিযোগের সত্যতা জানতে কথা হয় হাসপাতালের দায়িত্বরত একাধিক ইন্টার্ন নার্সদের সঙ্গে। তারা জানান, একেক সময় একেক ওয়ার্ডে সেবা দেন তারা। তবে গত কয়েকদিন ধরে মেডিসিন ওয়ার্ডে সেবা দিচ্ছেন। স্যালাইনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তারাও জানান, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য তরল স্যালাইন সাপ্লাই নেই।

এ বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) জাহিদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে স্যালাইন সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। রোগীরা কেন পাচ্ছেন না সেটি খোঁজ নিচ্ছি।

হাসপাতালের তথ্য বলছে, পাবনায় চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৩২৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। জানুয়ারিতে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। বর্তমানে ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জন ভর্তি হয়েছেন।

সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রয়েছে অক্টোবর মাসে। এ মাসে মোট ১৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পাবনায় এখনো কোনো মৃত্যু নেই। তবে অক্টোবরের শেষের দিকে ঈশ্বরদী উপজেলার এক শিশু রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে। এ উপজেলা থেকেই বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন বলে দাবি বিশ্লেষকদের।