July 6, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, April 23rd, 2025, 11:55 am

শিশু সোয়াইবের শরীরজুড়ে ছ্যাঁকা, হাতের নখ উপড়িয়ে করানো হতো ভিক্ষা

পাবনা  প্রতিনিধি: ছয় মাস আগে অপহরণ করা হয় ছয় বছরের শিশু সোয়াইব হোসেনকে। এরপর তার ওপর চালানো হয় অমানসিক নির্যাতন। সারা শরীরে সিগারেট আর কয়েলের ছ্যাঁকা দিয়ে, হাতের নখ উপড়িয়ে প্রায় প্রতিবন্ধী দশা শিশুটির। আটকে রেখে রাতে এভাবেই তার ওপর নির্যাতন করা হতো। আর দিনের বেলায় তাকে দিয়ে করানো হতো ভিক্ষা। অপহরণের পর তথ্য প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অবশেষে মৃতপ্রায় শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকে (৩০)।

উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় মা সোহানা জাহান চিনতে পারেননি তার আদরের সন্তান সোয়াইব হোসেনকে। যে ছেলে ছিল স্বাস্থ্যবান আর মাথা ভর্তি ছিল চুল। মাত্র ছয় মাসে সেই সন্তান এখন কঙ্কালসার অবস্থা। এখন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতড়াচ্ছে ছয় বছরের শিশু সোয়াইব।

অভিযোগে জানা গেছে, পাবনা সদর উপজেলার চক ছাতিয়ানী এলাকার আমিনুল ইসলাম ও সোহানা জাহানের সন্তান সোয়াইব (৬)। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় মায়ের কাছেই বড় হয়েছে সে। গত বছরের ২ অক্টোবর একই উপজেলার শানির দিয়ার এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশুটিকে বিস্কুট কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

সন্তানের খোঁজ না পেয়ে ওই বছরের ৭ অক্টোবর পাবনা সদর থানায় একটি জিডি করেন তার মা সোহানা জাহান। আত্মগোপনে থাকা অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশু সোয়াইবের মাকে ফোন করে অপহরণের বিষয়টি জানায়। বেশিরভাগ সময় তার ফোন বন্ধ থাকতো। জিডির পর ফোন নাম্বার ট্র্যাক করে তার লোকেশন শনাক্তের চেষ্টা করে পুলিশ। ঘটনার ছয় মাস পর গত ১৮ এপ্রিল খুলনার রুপসা ফেরিঘাট এলাকা থেকে ভিক্ষা করানো অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকেও আটক করা হয়।

এরপরই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর ও শিশুটির ওপর বর্বর নির্যাতনের তথ্য। ভুক্তভোগী শিশু সোয়াইব জানায়, রাতে তাকে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখতেন রফিকুল ইসলাম বিপ্লব। সহজে কিছু খেতে দিতেন না। তার শরীরে দাঁতের কামড় বসিয়ে চামড়া তুলে ফেলতেন। সারা শরীরে দেওয়া হতো সিগারেট ও কয়েলের আগুনের ছ্যাঁকা। বাম হাতের একটি আঙুলের নখ প্লাস দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে। দিনের বেলায় বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে তাকে দিয়ে ভিক্ষা করাতেন বিপ্লব।

সোয়াইবের মা সোহানা জাহান বলেন, পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে সেদিন বিপ্লব আমার কাছ থেকে ছেলেটাকে নিয়ে যায় বিস্কুট কিনে দেবে বলে। তারপর থেকে ছেলেকে আর খুঁজে পাইনি। পরে সে ফোন করে জানিয়েছিল যে আমার ছেলেকে সে অপহরণ করেছে। তারপর থেকে তার ফোনও বন্ধ। এরপর সদর থানায় গিয়ে ঘটনা জানিয়ে জিডি করি।

সোহানা জাহান আরও বলেন, ‌উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় তো আমার ছেলেকে চিনতেই পারিনি। দিনের পর দিন কিভাবে আমার শিশু সন্তানকে নির্যাতন করেছে ভাবতেই বুকটা ফেটে যায়। প্রায় প্রতিবন্ধী বানিয়ে ফেলেছে আমার ছেলেকে। কঙ্কাল সার শরীর নিয়ে ছেলেটা নড়াচড়াও করতে পারছে না। আমি অভিযুক্ত বিপ্লবের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ফাঁসি চাই।

এ বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান ডা. মাসুদুর রহমান প্রিন্স বলেন, দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখা ও অব্যাহত শারীরিক নির্যাতনের কারণে শিশু সোয়াইবের এই অবস্থা। তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তার হাতের একটা আঙুল কেটে ফেলতে হবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছি। ঠিকমতো চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে আশা করছি দুই মাসের মধ্যে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে।

পাবনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‌‌মূলত অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে এক প্রকার প্রতিবন্ধী বানিয়ে তাকে ভিক্ষা করাতেন অভিযুক্ত বিপ্লব। অমানবিক একটি ঘটনা। আমরা তথ্য প্রযুক্তি ও খুলনার রুপসা ফেরিঘাট ফাঁড়ি পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার এবং শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে অভিযুক্ত বিপ্লবকে ১৯ এপ্রিল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর শিশু সোয়াইব হোসাইন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের ২৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।