জেলা প্রতিনিধি, সিলেট:
বায়ুদূষণে দিন দিন জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে সিলেটের বিয়ানীবাজার। ধূলোয় ধূসর এই জনপদের মানুষ বায়ুদূষণের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, পুকুর ভরাট, নদীর চর ও কৃষি জমি অবাধে মাটি কাটার ফলে এ পরিস্থতি সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার শেওলা শুল্ক বন্দরের পাশের এলাকায় অবৈধভাবে স্থাপিত পাথর ভাঙ্গার মেশিনে পরিবেশ হচ্ছে বিপর্যস্থ। ঘিঞ্জি পরিবেশে ওই এলাকায় শতাধিক পাথর ভাঙ্গার মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইড, লেড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ও প্রলম্বিত বস্তুকণার কারণে বায়ু দূষিত হয়। বাতাসের একিউআই মাত্রা শূন্য থেকে ৫০ পিপিএম হলে তাকে ‘সবুজ বা স্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। একিউআই মাত্রা ৫১ থেকে ১০০ পিপিএম হলে তাকে ‘মধ্যম’ বায়ু বলা হয়। যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়।
মাত্রা ১০১ থেকে ১৫০ পিপিএম হলে সে বায়ুকে ‘সতর্কতামূলক’ বায়ু বলা হয়। যেটা মানুষের জন্য মৃদু ক্ষতিকর। আর একিউআই মাত্রা ১৫১ থেকে ২০০ পিপিএম হলে সে বায়ুকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে ফেলা হয়।২০১ থেকে ৩০০ পিপিএম একিউআই মাত্রার বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে এবং ৩০১ থেকে ৫০০ পিপিএম মাত্রার বাতাসকে ‘চরম পর্যায়ের অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সূত্রমতে, বিয়ানীবাজার উপজেলায় প্রায় ১০টির ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার বেশিরভাগই গড়ে উঠেছে পরিবেশ আইন না মেনে। নির্গত হচ্ছে অপরিশোধিত ধোঁয়া। এ ছাড়াও সিলেট-বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন শ’-ত-শ’-ত গাড়ি চলাচল করে। যানবাহনের কালো ধোঁয়া বিয়ানীবাজারে বায়ু দূষণ বাড়িয়েছে। এলাকার সাধারণ পথচারী ও স্কুল কলেজগামী ছাত্র ছাত্রীদের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনেই ধুলার দূষণে সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রাস্তায় চলাচলকারীরা।
এ ছাড়া অবাধে পুকুর ভরাট, বিভিন্ন নদীর চরের মাটি কেটে ট্রাক্টরে বহন করা ও কৃষি জমি অবাধে কেটে মাটি পরিবহনের সময় ধুলোবালিতে সড়ক পথে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে।সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. এমরান হোসেন বলেন, পরিবেশ রক্ষায় ও বায়ুদূষণ রোধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। বিয়ানীবাজারে অচিরেই আবারও অভিযান পরিচালনা করবো।
সুজন বিয়ানীবাজার শাখার সভাপতি এডভোকেট মো. আমান উদ্দিন বলেন, বালু ও নদী চরের মাটি অবাধে কেটে পরিবহনের সময় ধুলোবালি উড়ে মানুষের চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়ছে।সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি রেজিষ্ট্রার ডা: আবু ইসহাক আজাদ বলেন, বায়ু দূষণ বেড়ে গেলে জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের ফুসফুস, চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, কানে কম শোনা, বিভিন্ন চর্মরোগ হওয়া, লিভার-কিডনির সমস্যা এবং সব শেষে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়। তাই মানুষকে ঘরের বাইরে চলাচলের সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুন
দাগনভূঞায় দূর্গোৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে দুঃস্থ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে মেজবাহ্ সাঈদ
শেরপুর ও ময়মনসিংহে আকস্মিক বন্যা, তলিয়ে গেছে ১৬৩ গ্রাম
ময়মনসিংহে মোবাইল বিস্ফোরণে চিকিৎসকের মৃত্যু